‘এয়ারবাসমুখী’ বিমানকে আকর্ষণীয় প্রস্তাব বোয়িংয়ের!
সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ২টি কার্গো বিমান কেনার প্রস্তাব দেয় ইউরোপের এয়ারক্রাফট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। এ সিদ্ধান্তে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে সরকার এয়ারবাস থেকে ২টি কার্গোসহ মোট ১০টি প্লেন কেনার প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে। প্লেন কেনার পক্ষে ইতিবাচক আছেন খোদ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী। এবার এয়ারবাসকে টেক্কা দিতে নতুন প্রস্তাব নিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান বোয়িং।
বিমানের পুরোনো বন্ধু বোয়িং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৬টি বিমান ডেলিভারি দেওয়াসহ নানা অফার দিয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দায়িত্বশীল একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানায়, বোয়িংয়ের পক্ষ থেকে বিমানকে অত্যাধুনিক ৪টি ৭৮৭-১০ এবং ২টি কার্গো এয়ারক্রাফট কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো অর্ডার করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে (এয়ারবাসের তুলনায়) ডেলিভারি করা হবে। এছাড়া প্রস্তাবে বোয়িং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ারদের পৃথক ট্রেনিং দেওয়ার কথা বলেছে। ন্যূনতম খরচে বিমানের যাত্রীবাহী প্লেনকে কার্গো প্লেনে রূপান্তর করে দেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এখন মোট ২১টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি বোয়িংয়ের এবং ৫টি ড্যাশ-৮ ব্র্যান্ডের।
আরও পড়ুন : থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব পাচ্ছে না বিমান
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমান বাংলাদেশের বহরে আগে থেকেই বোয়িংয়ের অনেক এয়ারক্রাফট রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের পার্টনারশিপ রয়েছে। তারা আমাদের নতুন করে আবার কিছু অফার দিয়েছে। আমরা যদি এয়ারক্রাফট কিনি তাহলে কোন এয়ারক্রাফট কবে ডেলিভারি দিতে পারবে সেগুলোও উল্লেখ করেছে তারা।
তিনি বলেন, আমাদের বহরে কার্গো বিমান নেই। এয়ারবাসের প্রস্তাবের পর বোয়িং হয়ত মনে করেছে বিমানের কার্গো লাগবে। তাই তারা ২টি কার্গো এবং ৪টি অত্যাধুনিক ৭৮৭-১০ ফ্লাইট বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া তারা বিমানের যাত্রীবাহী প্লেনকে কার্গোতে রূপান্তর করে দেওয়ার কথাও বলেছে। বোয়িংয়ের প্রস্তাবটি বোর্ড মিটিংয়ে উঠেছে। আলোচনা হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিমানের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিমানের বোর্ড সভায় বোয়িংয়ের প্রস্তাবকে ‘আকর্ষণীয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রস্তাব নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
আরও পড়ুন : বিমানের বহরে ১০ এয়ারবাস যুক্ত হতে কত দিন লাগবে?
সভায় বোর্ড সদস্যরা বলেন, বোয়িং ও এয়ারবাসের প্রস্তাব তুলনা করা হবে, খরচ ও রিটার্ন বিশ্লেষণ করা হবে। বিমানের লাভ হয় এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে। শিগগিরই এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি প্রণয়ন করবে বিমান।
এয়ারবাসের প্রস্তাব ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তি
সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশের কাছে দুটি ‘এ৩৫০-এফ’ মডেলের কার্গো বিমান বিক্রির প্রস্তাব দেয় এয়ারবাস। তারা প্রতিটি এয়ারক্রাফটের জন্য ২০ কোটি মার্কিন ডলার করে চেয়েছে। তবে এই দাম চূড়ান্ত হয়নি। বিমানের বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে এয়ারবাসের সঙ্গে দরকষাকষি করা হবে। এয়ারবাসের এ৩৫০-এফ কার্গো বিমানটি ১০৯ টন মালামাল বহনে সক্ষম।
এয়ারবাস থেকে যাত্রীবাহী ও কার্গো বিমান কেনাসহ বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য গত ৫ মে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি জয়েন্ট কমিউনিক স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সালমান এফ রহমান এবং যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগমন্ত্রী লর্ড ডমিনিক জনসন জয়েন্ট কমিউনিকে স্বাক্ষর করেন।
আরও পড়ুন : নিজেদের ‘লাভজনক প্রতিষ্ঠান’ দেখাতে হজযাত্রীদের পকেট কাটছে বিমান
জয়েন্ট কমিউনিকে স্বাক্ষর শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে সালমান এফ রহমান বলেন, এই উদ্যোগের ফলে এয়ারবাস এবং বাংলাদেশ বিমানের মধ্যে দীর্ঘ ও কার্যকর সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) বর্তমান সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হতে পারে।
চুক্তির ফলে এয়ারবাস থেকে প্লেন কেনা হচ্ছে বলে ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। তবে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি বিমান।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী একাধিকবার গণমাধ্যমে ১০টি এয়ারবাস কেনার কথা বলেছেন। তবে এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহল থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
এআর/এসকেডি