ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড আইনের বিধিমালায় উল্লিখিত জামানত বাতিল ও বিভিন্ন অসংগতি দূর করা এবং পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থার উত্তরণে ট্যুর অপারেটর সেবার উপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে পর্যটন শিল্পের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে রাফেউজ্জামান বলেন, ট্যুর অপারেটরদের নিবন্ধন সংক্রান্ত নতুন গেজেটে কিছু নিয়ম ও শর্তাবলি উল্লেখ করা হয়েছে, যা মেনে চলা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। গেজেটে উল্লিখিত বিধিনিষেধ ও নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিধিমালায় দেখা যায় ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা নিবন্ধন সনদ ফি, ১০ লাখ টাকা ব্যাংক স্থিতির সার্টিফিকেট ও ৩ লাখ টাকা জামানত প্রদান করতে হবে, যা ট্যুর অপারেটরদের জন্য সম্ভবপর নয়। এতে করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবে। 

তিনি বলেন, বিকাশমান পর্যটন শিল্পের স্বার্থে ট্যুর অপারেটরদের সেবার উপর মূসক আরোপ রহিত করতে হবে। কারণ ট্যুর অপারেটররা বিভিন্ন খাত থেকে পর্যটন উপাদান সংগ্রহ করে পর্যটকদের সুবিধা ও আরামদায়ক ভ্রমণ সৃষ্টির জন্য যে প্যাকেজ তৈরি করে তার মধ্যেই মূসক অন্তর্ভুক্ত থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, হোটেলের রুম ভাড়া করার সময়, ট্রান্সপোর্টের টিকিট ক্রয় করার সময়, রেস্টুরেন্টে খাবারের বিল দেওয়ার সময়, বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় স্থাপনা ও অ্যামিউজমেন্ট পার্কের টিকিট ক্রয় করার সময় মূসক দিয়ে থাকে। এমনকি অন্যান্য পর্যটন সেবার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। উল্লিখিত সব পর্যটন উপাদান একত্রিত করে ট্যুর অপারেটররা পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকে।

টোয়াব সভাপতি বলেন, এখন যদি পর্যটন উপাদান সম্মিলিত প্যাকেজে আবার নতুন করে মূসক দাবি করা হয় কিংবা ট্যুর অপারেটর সেবার উপর ১৫ শতাংশ মূসক ধার্য হলে প্যাকেজ মূল্য তথা ট্রাভেল কষ্ট বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। তাতে করে গোটা পর্যটন শিল্প বিশেষ করে অন্তর্গামী ও অভ্যন্তরীণ পর্যটন দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেহেতু পর্যটন শিল্প একটি ব্যাপক ও অনেকগুলো সেক্টরের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিদ্যমান মূসক সুবিধা প্রত্যাহার হলে অগ্রসরমান বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

টোয়াবের আরও কয়েকটি দাবি হচ্ছে— ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) লাইসেন্স ও নবায়ন ফি ও ব্যাংক স্থিতি কমানো ও জামানত বাতিল, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে ইনবাউন্ড ট্যুরিজমকে রপ্তানি পণ্যের স্বীকৃতি, প্রণোদনা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া; পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত সড়ক পরিবহন, নৌযান, আবাসন, বিভিন্ন সরঞ্জামে করমুক্ত/রেয়াত সুবিধা দেওয়া; ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটরদের ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রা/রেমিটেন্সের টোটাল বিলের উপর ১০ শতাংশ অগ্রিম কর (এআইটি) কাটা বন্ধ করা; বছরব্যাপী সুন্দরবনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল চালু রাখা; পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটকদের জন্য পারমিশন গ্রহণ সহজিকরণ করা; টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে বিকল্প পথ তৈরি করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টোয়াবের প্রথম সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, টোয়াবের সদ্য সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের গভর্নিং বডি মেম্বার শিবলুল আজম কোরেশী, টোয়াবের পরিচালক (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) মোহাম্মাদ ইউনুছ প্রমুখ।

এমএইচএন/জেডএস