পাকা কাঁঠাল রসালো ফল হিসেবে কিংবা কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসেবেই মানুষের কাছে বেশি সমাদৃত। তবে এবার দেশের প্রথম সেইফ ফুড কার্নিভালে পাওয়া যাচ্ছে কাঁঠালের আচার আর আইসক্রিম। রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠা, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের খাদ্যপণ্য, ঐতিহ্যবাহী খাবারসহ আরও অনেক মুখরোচক আয়োজন। তাইতো ভোজনরসিকরা এসব খাবারের স্বাদ নিতে এখন ভিড় করছেন আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি)।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী এই কার্নিভালে ৭০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে, আকিজ, প্রাণ, কোকাকোলা, ফিনলে, বেঙ্গলমিট, ইউনিলিভার, নেসলে, ডমিনোজ, আবুল খায়ের, স্কয়ার গ্রুপ। মিষ্টান্ন দোকানের মধ্যে রয়েছে, বনফুল, ওয়েলফুড, প্রিমিয়াম সুইট্স, বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার, বনলতা সুইট্স, ভাগ্যকুল, ব্রেড অ্যান্ড বিয়ন্ড, সুমি'স হট কেক, ননী। ফাইভ স্টার হোটেলের মধ্যে রয়েছে, হলিডে ইন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ক্রাউন প্লাজা, প্যান প্যাসিফিক, ঢাকা রিজেন্সি, হোটেল আমারি।

কার্নিভালে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে এখানে রয়েছে— কক্সবাজারের শালিক, মুক্তাগাছার মন্ডা, রাজশাহীর কালাই, কুমিল্লার মাতৃভান্ডার, বগুড়ার দই, চট্টগ্রামের মেজবান প্রভৃতি। এছাড়া রেস্টুরেন্টের মধ্যে কেএফসি, পিৎজা হট, হারফি, বার্গার কিং, সুলতানস ডাইন ও কাচ্চি ভাই অংশ নিয়েছে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো স্টলও রয়েছে থাকবে। সবার জন্য উন্মুক্ত এই কার্নিভালের আজ শেষ দিনে সকাল থেকেই দেখা যায় মানুষের উপস্থিতি। আজ সকালে থেকে শুরু হয়েছে পিঠা প্রতিযোগিতা। এরপর বৈচিত্র্যময় কুইজিন প্রিপারেশন প্রদর্শনী, পুতুল নাচ প্রদর্শনী শেষে শুরু হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র.আ.ম. উবায়দুল মোক্তাদিরের।

কার্নিভালে বৈচিত্র্যময় এবং নানান আচার নিয়ে এসেছেন গৃহিণী এবং উদ্যোক্তা উম্মে ফাতেমা। তিনি বলেন, আমার এখানে ঘি, বিভিন্ন রকমের আচার, ঝোলা খেজুরের গুঁড়, কালোজিরা মধু, মাশরুম পাউডার, মিক্সড ছাতু, ছোলা বুটের ছাতু, গমের ছাতু, যবের ছাতু, কাঠের ঘানিতে ভাঙানো খাঁটি সরিষার তেল, কালোজিরার তেল, নারিকেল তেল, তিলের তেল, বাদামের তেল, স্পেশাল হেয়ার অয়েল, কাঁঠালের আইসক্রিম, গাজরের আইসক্রিম, পুদিনা পাতার আইসক্রিম, নোনা বাকরখানি, মিষ্টি বাকরখানি, ছানার বাকরখানি, তিলের বাকরখানি, মাশরুমের বাকরখানি রয়েছে। কেউ যদি দশ হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করেন তাহলে ১০ শতাংশ আর পাঁচ হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করলে ৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিচ্ছি। তাছাড়া এখানে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বিষয় কাঁঠালের আচার এবং কাঁঠালের আইসক্রিম।

এমন আয়োজনে খুব ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান নবাবী ভোজের সিনিয়র অ্যাকাউন্টেন্ট রাহাত ইউসুফ। তিনি বলেন, আমাদের এখানে রেগুলার আইটেমগুলোই বেশ ভালো চলছে। কাচ্চি বিরিয়ানি চিকেন বিরিয়ানি, মাটন খিচুড়ি, চিকেন খিচুড়ি, বিফ খিচুড়ি, স্পেশাল বিফ তেহারি (বোনলেস), বিফ কালা ভুনা, মাটন লেগ রোস্ট, চিকেন রোস্ট, চিকেন মোসাল্লাম, স্পেশাল গরুর নেহারি, প্লেইন পোলাও কোরাল মাছ বার-বি-কিউ, বিফ শিক কাবাব, হারিয়ালি কাবাব, চিকেন তাওয়া কাবাব, স্পেশাল চিকেন রোলসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে। এমন ফুড কার্নিভাল ঘনঘন আযোজন করা উচিত। এতে করে মানুষজন নিরাপদ এবং ভেজালমুক্ত খাবার খেতে পারবে। এখানে সকল খাবারই কিন্তু পরীক্ষিত। কোন ভেজাল নেই।

তবে সব খাবারের দাম কিছুটা বেশি বলেও মন্তব্য করেন অনেক দর্শনার্থী। সিরাজুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ফুড কার্নিভাল উপলক্ষ্যে সবকিছুতেই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে সম্মিলিতভাবে ছাড় দেওয়া উচিত ছিল। এখানে সব খাবারের দামই অত্যাধিক। যারা আসবেন তাদের মধ্যে অনেককেই এসব শুধু দেখেই চলে যেতে হবে। কিনে খেতে পারবেন না। সেজন্য কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল কিছু বাজেট ফ্রেন্ডলি আইটেমও রাখা।

সামিরা ইয়াসমিন নামের আরেকজন বলেন, ঘুরে দেখলাম। বেশ ভালোই লাগলো। তবে এতে আরও ছোট উদ্যোক্তাদের যুক্ত করা প্রয়োজন ছিল। তাহলে হয়তো দাম কিছুটা হাতের নাগালে চলে আসতো।

সিজন ভিত্তিক আয়োজন না করে ঘনঘন এমন আয়োজন করলে মানুষের সাড়া  আরও বেশি পাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আরএইচটি/এমএ