ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে চলছে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা। নানান অফার, ছাড় আর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার পসরা সাজিয়ে এই মেলায় অংশ নিয়েছে দেশ-বিদেশের ৮০টির বেশি প্রতিষ্ঠান, সংস্থার শতাধিক স্টল-প্যাভিলিয়ন। এসব আয়োজনের মধ্যে দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ‘ডিসকাউন্ট কার্ড’। মাত্র ১০০ টাকা মূল্যের এই ছয়মাস মেয়াদি কার্ডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেলে ২০ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। আর মেলায় আগত দর্শনার্থীরাও এমন সুযোগ লুফে নিয়েছেন। 

সরেজমিনে পর্যটন মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেলায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের সরব আনাগোনা। নিয়মিত ভ্রমণ করেন আবার নতুন করে ভ্রমণ করতে চাইছেন এমন সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রাঙ্গণজুড়ে। আর প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা তাদের বিভিন্ন ছাড়ের বিষয়গুলো সহজভাবে দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরছেন। এরমধ্যে কনফারেন্স রুমের ভেতরে প্রবেশ করলেই প্রথম সারিতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের স্টল। এতে প্রায় সবসময়ই ভিড় লেগেই আছে। প্রায় সবার আগ্রহ ডিসকাউন্ট কার্ডকে ঘিরে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যটকদের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেলায় ৬ মাস মেয়াদি ‘পর্যটন ডিসকাউন্ট কার্ড’ আনা হয়েছে। আর এই কার্ড ব্যবহার করার মাধ্যমে কার্ডের গ্রাহক সারা দেশে অবস্থিত পর্যটন করপোরেশনের যেকোনো হোটেল-মোটেলে সর্বোচ্চ ৩ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৩টি কক্ষে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পাবেন। এই কার্ড মেলা ছাড়া অন্যান্য জায়গায় কিংবা অনলাইনে কেনার সুযোগ নেই। এই ডিসকাউন্ট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার হোটেল অবকাশ, চট্টগ্রামের হোটেল সৈকত, টেকনাফের হোটেল নেটং, কক্সবাজারের হোটেল শৈবাল, কক্সবাজারের মোটেল প্রবাল, মোটের উপল, সিলেটের পর্যটন মোটেল, মংলার হোটেল পশুর, কুয়াকাটার পর্যটন ইয়ুথ ইন এবং পর্যটন হলিডে হোমস, গোপালগঞ্জের হোটেল মধুমতি, বেনাপোলের পর্যটন মোটেল, জাফলংয়ের পর্যটন মোটেল এবং বান্দরবানের পর্যটন মোটেলে এমন সুবিধা মিলবে।

তবে এই পর্যটন কার্ড ব্যবহারে মানতে হবে বেশ কিছু শর্ত। এটি ব্যবহার করা যাবে শুধুমাত্র একবারের জন্য। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ রাত আর ৩টি কক্ষে থাকার জন্য এই কার্ড প্রযোজ্য হবে। হোটেল-মোটেল কিংবা রিসোর্টের কক্ষের প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি তরে কার্ডটির কার্যক্রম শুরু হবে আগামী পহেলা মার্চ থেকে। যা চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এবং কার্ডধারী ব্যক্তি শুধু অফলাইন বুকিংয়ের জন্য এটি ব্যবহার করতে পারবেন। কার্ডে ছেঁড়া, পোড়া, তথ্য বিকৃত বা অপঠনযোগ্য হলে গ্রহণযোগ্য নয় বা কার্ডের কোনো অংশ নষ্ট হয়ে গেলেও এটি গ্রহণ করা হবে না। একইসঙ্গে এই কার্ডের অফার অন্য কোনো ডিসকাউন্টের সাথে মেলানো যাবে না বলেও জানানো হয়েছে।


 
পর্যটন করপোরেশনের এই ডিসকাউন্ট কার্ড ঘিরে মানুষের অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে জানান স্টলের বিক্রয়কর্মী শিপু। তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমরা অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষজন এসে এই কার্ড কিনছেন। পর্যটন করপোরেশনের এতসব হোটেল-মোটেল রয়েছে সেসব হয়তো অনেকের কাছেই অজানা ছিল। এই মেলার মাধ্যমে মানুষজন জানতে পারছেন। আজ মেলার শেষ দিন। আমরা মনে করি প্রত্যাশা করি, আজও আমরা ভালো সাড়া পাবো।

দর্শনার্থীরাও বললেন, এমন আয়োজন বা ডিসকাউন্ট অফার সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াবে। মুনির হোসেন নামের একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, প্রাইভেট সেক্টরের যে সব হোটেল রয়েছে সেগুলো অনেক এগিয়ে রয়েছে। কারণ তারা বিভিন্ন সময় তাদের প্রমোশনের জন্য বিভিন্ন ছাড় বা অফার দিয়ে থাকে। সেটি এতদিন আমরা এখানে দেখিনি। এখন যেহেতু এমন কার্যক্রম তারা হাতে নিয়েছে আশা করি এগুলোকে মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করবে। আমি অনেককেই কার্ড কিনতে দেখেছি। আমি নিজেও নিজেও পাঁচটি কার্ড নিয়েছি। এখন তাদের ব্যবস্থাপনা কেমন হয় সেটিই দেখার বিষয়। 

প্রশান্ত চৌহান নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ফেসবুকে দেখে তারপর মেলায় এসেছি। দুটো কার্ড নিলাম। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলেও আগে কখনো পর্যটন করপোরেশনের কোনো হোটেলে থাকিনি। এবার যেহেতু কার্ড নিয়েছি তাহলে তো ব্যবহার করতেই হবে। আশা করি ভালোই হবে। 

প্রসঙ্গত, পর্যটন মেলার আজ শেষ দিন। আজ (শনিবার) সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে জনপ্রতি ৫০ টাকা। মেলার সমাপনী দিনে ভিজিটরদের উপস্থিতিতে এন্ট্রি টিকিটের ওপর গ্র্যান্ড র‍্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। র‍্যাফেল পুরস্কারের মধ্যে থাকবে জেদ্দা, মদিনা, মালদ্বীপ, দুবাই, ব্যাংকক, দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, কক্সবাজার, সিলেট এবং চট্টগ্রাম ভ্রমণের জন্য রিটার্ন টিকিট : ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বান্দরবান এবং কুয়াকাটায় বিভিন্ন তারকা হোটেল ও রিসোর্টে আবাসন, দুজনের জন্য ডিনার কুপন।

আরএইচটি/এমএ