ভারত বিশাল এবং বৈচিত্রময় একটি দেশ। পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের সীমান্তে আরব সাগরের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরও রয়েছে, এর অর্থ হলো দেশটি ঘুরে দেখার মতো বিভিন্ন জায়গা রয়েছে। ২০টিরও বেশি জাতীয় ভাষা রয়েছে, একাধিক ধর্ম এবং বিভিন্ন বৈচিত্রময় খাবার রয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ইতিহাস বুঝতে, ভারত ভ্রমণ গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের যে সেরা জায়গাগুলো ভ্রমণ করবেন।

১. রাজস্থান

উত্তর-পশ্চিম ভারতে হলো রাজস্থান, যা পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এবং মরুভূমির আবাসস্থল। রাজপুত ইতিহাসের শুরু হয় এখানে, আরাবল্লীর পর্বতমালার দর্শনও এখানে পাওয়া যায়, ভারতের রাজস্থানে দেখার জন্য সেরা কিছু স্থান রয়েছে। জয়পুর, পিংক সিটি, রাজস্থানের রাজধানী এবং ভ্রমণ শুরু করার জন্য একটি সুন্দর জায়গা। রাজস্থানে তিনটি দুর্গ রয়েছে, অসংখ্য মন্দির এবং অসাধারণ সিটি প্যালেসসহ আরও অনেক স্থাপত্যের আবাসস্থল হলো রাজস্থান। এছাড়াও, রাজস্থানের দর্শনীয় জায়গাগুলো হলো যোধপুর, তথাকথিত ব্লু সিটির মরুভূমিতে প্রবেশ এবং সেইসাথে দর্শনীয় মেহরানগড় দুর্গের বাড়ি তো আছেই।

২. আগ্রা

আগ্রা সমগ্র ভারতের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা শহরগুলির মধ্যে একটি। মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল আগ্রা, বিক্ষ্যাত তাজমহল আগ্রাতে অবস্থিত। সাদা মার্বেলর সমাধিটি ১৭ শতকে নির্মিত হয়েছে এবং আগ্রার তাজমহলকে প্রেমের স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে বিবেচিত হয়।
দেখতে সুন্দর হলেও, তাজমহল দেখার জন্য অনেক ভিড় হয়ে থাকে। এছাড়াও আগ্রায় দেখার মতো আরোও রয়েছে আগ্রা ফোর্ট, যা দেখতে দিল্লির লাল কেল্লার মতো। ১৬ শতকের এই দুর্গটি ঘুরে দেখতে পারেন এবং এমনকি এর সুন্দর প্রাসাদের ভেতরেও ঘুরে দেখতে পারেন।

৩. কেরালা

ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যর নাম হলো কেরালা। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় সৌন্দর্যের একটি জয়গা। পাম গাছ, সাদা বালির সৈকত এবং ইকো-ট্যুরিজম এই অঞ্চলটি ঘুরে দেখার অন্যতম কারণ। এখানের বিখ্যাত ব্যাকওয়াটার, সুন্দর হাউসবোট এবং মন্দিরের উৎসব দর্শনীয়।
কেরালার কেন্দ্র হলো কোচি শহর, যেখানে আধুনিক ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের পাশাপাশি স্থানীয় মাছ ধরার শিল্প আপনাকে মুগ্ধ করবে। কোচি জাতিগত এবং ধর্মীয়ভাবে বৈচিত্র্যময়। এখানে ইহুদি উপাসনালয়, একটি ডাচ প্রাসাদ, পর্তুগিজ পল্লীপুরম দুর্গ এবং হিন্দু থ্রিক্কাকারা মন্দিরও ঘুরে দেখার মতো।

৪. বারাণসী

বারাণসী বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত শহরগুলির মধ্যে একটি। প্রায় ৩,০০০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসের সাক্ষী, গঙ্গা নদীর তীরে উত্তর ভারতে অবস্থিত, বারাণসী যুগ যুগ ধরে শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের হওয়ার পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি প্রধান তীর্থস্থান। বারাণসীকে হিন্দু, জৈন এবং বৌদ্ধদের জন্য একটি পবিত্র শহর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এখানের মানুষ বিশ্বাস করে যে, মৃত ব্যক্তির আত্মাকে পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি দেয়া হয় এবং গঙ্গা নদীতে স্নান করার মানে পাপ মোচন করা হয়। হাজার হাজার মন্দির হওয়ার কারণে একে মন্দিরের শহর বলা হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য হল শিবের কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, দুর্গা মন্দির এবং সংকট মোচন হনুমান মন্দির, যা অসংখ্য বানরের বসতির জন্য পরিচিত।

এই শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থানগুলো হলো ঘাট। বাঁধের ধাপগুলো গঙ্গা নদীর দিকে নেমে যায়, যেখানে অনেক লোক গোসল করতে একসাথে হয়। প্রাচীনতম এবং প্রধান ঘাট হলো দশাশ্বমেধ ঘাট। মণিকর্ণিকা ঘাট হলো একটি জ্বলন্ত ঘাট যেখানে হিন্দু শ্মশান এবং মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ঘাট দেখার সবচেয়ে ভালো সময় হল সূর্যোদয়ের সময়। বারাণসীতে রেশম খুবই জনপ্রিয়, অন্যান্য হস্তশিল্পের পাশাপাশি শাড়ি এবং স্কার্ফের মতো রেশম পণ্য বিক্রিরর অনেক দোকান ও বাজার রয়েছে সেখানে।

৫. ইলোরা ও অজন্তা গুহা

মহারাষ্ট্র রাজ্যে ইলোরা এবং অজন্তা উভয়ের গুহা ঘুরে দেখতে পারেন। ইলোরাতে পাথুরে ল্যান্ডস্কেপ থেকে খোদাই করা মন্দিরের একটি বিশাল কমপ্লেক্স রয়েছে। এই ৩৪টি গুহা মন্দির ১,৫০০ বছর পর্যন্ত পুরানো, এবং এগুলি তিনটি স্বতন্ত্র ধর্ম থেকে এসেছে: বৌদ্ধ, জৈন এবং হিন্দু ধর্ম। দুই ঘণ্টা দূরে অজন্তা, যেখানে ২৯টি গুহা রয়েছে। অজন্তা গুহাগুলি ম্যুরাল এবং পেইন্টিংয়ে আচ্ছাদিত, যার বেশিরভাগই বৌদ্ধ কাহিনী প্রতিফলিত করে। যদিও দুটি গুহা কমপ্লেক্স একে অপরের থেকে দুই ঘণ্টা দূরে, এই অবিশ্বাস্য আকর্ষণগুলির তুলনা করার জন্য দুটি জায়গাই পরিদর্শন করা ভালো।