গাছগুলো খুব একটা বড় না হলেও তাতেই ধরে আছে ফুল, কলি আর চালতা। দূর থেকে কলি চোখে না পড়লেও অনায়াসে দেখা যায় ফুল আর চালতা। কৌতূহলবশত গাছ গুনতে গিয়ে চোখে পড়লো বুলবুলি পাখি। মুখে খাবারও আছে। তখনও জানা ছিল না সড়কের পাশের চালতার এই গাছটিতেই বুলবুলি পাখির বাসা। গাছের অন্য ডালের ছন-খড়ের বাসায় দেখা গেল দুটি বুলবুলি পাখির শাবক। তবে মা অথবা বাবা বুলবুলি পাখিটি মানুষের উপস্থিতির কারণে পাশের মেহগনি গাছে বসল।

মাত্র কোয়ার্টার কিলো সড়কটিতে রয়েছে ৩৬টি চালতার গাছ। দুয়েকটি বাদে সব গাছে ধরেছে চালতা ফল। কোনোটিতে ফুল, কোনোটিতে কলি, আবার কোনোটিতে ঝুলছে আস্ত চালতা। গাছজুড়ে এ যেন ফুল, কলি আর চালতার মেলা। রাজশাহী নগরীর কয়েরদাঁড়ার নাহার স্কুলের সামনের সড়কের পাশে লাগানো চালতার গাছগুলো এই চিত্রের দেখা মিলে। 

চালতার ফুলের মধ্যে রাজকীয় ও দৃষ্টিনন্দন একটা ব্যাপার রয়েছে। সবুজ পাতার মাঝে শুভ্র ও সুন্দর চালতা ফুল দেখতে বেশ চমৎকার। যদিও ঘন পাতার কারণে সহজেই চোখে পড়ে না। তবে চালতা ফুলের সাদা ও নরম পাপড়ি ক্ষণস্থায়ী, বেশি দিন থাকে না। মাত্র দুয়েক দিনের মধ্যেই ঝরে পড়ে। এছাড়া ফুলের প্রধান অংশগুলো দৃশ্যমান।

স্থানীয়রা বলেন, রাজশাহী সবুজ নগরী। প্রশস্ত সড়কগুলোর বিভাজনে রয়েছে বিভিন্ন ফল আর ফুলের গাছ। তাই সারা বছরই চোখে পড়ে বিভিন্ন ফুল। এছাড়া বিভিন্ন সড়কের একটা, দুইটা চালতার গাছ দেখা যায়। তবে নগরীর কয়েরদাঁড়ার এই সড়কের মতো একসঙ্গে ৩৬টি চালতার গাছ রাজশাহীর কোনো সড়কে নেই। ফলে এই সড়কটি অনেকের কাছে ‘চালতা গাছের সড়ক’ নামেও পরিচিত।

স্থানীয় বাসিন্দা আজগর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজশাহী নগরীতে অনেক নতুন-পুরাতন সড়ক রয়েছে। সড়কের ফুটপাত ও বিভাজনে নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। কিন্তু চালতার গাছ খুব কম দেখা যায়। জানামতে ২০০৭-২০০৮ সালের দিকে কয়েরদাঁড়ার এসব গাছ লাগানো হয়েছিল। শুধু কয়েরদাঁড়ার এমন চালতার গাছ দেখা যায়। সকালে চালতা ফল পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকেই একসঙ্গে এতগুলো চালতার গাছ দেখে অবাক হন। সাধারণত বাগান ছাড়া একসঙ্গে এত চালতার গাছ দেখা যায় না।

সাইমা ইসলাম নামের স্থানীয় এক নারী ঢাকা পোস্টকে জানান, গাছগুলোর বয়স অনেক দিনই হলো। কিছু বছর ধরে চালতা ফল ধরতে দেখা গেছে। যে যার ইচ্ছেমতো চালতা ফল নামিয়ে নিয়ে যায়। অনেকেই আবার নিষেধও করে। সবমিলিয়ে চালতার গাছগুলোর কারণে এই সড়কটা দেখতে তার দারুণ লাগে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েরদাঁড়ায় গাছগুলো রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন লাগিয়ে ছিল। এখন সেই গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করেছে। সবুজ গাছগুলোর কারণে এই সড়কের রূপই বদলে গেছে। সড়কটি ছোট হলেও অনেক ভালো লাগে চলাচলে। 

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের (বিএআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজশাহীতে মানুষের বাসাবাড়ি ও বাগানে অনেক চালতার গাছ রয়েছে। তবে একসঙ্গে এত চালতার গাছ চোখে পড়ে না। চালতা ফল সাধারণত আচার করে খাওয়া হয়। কেউ কেউ টক খাওয়ার জন্যও তরকারিতে দেয়।

রাজশাহী।