ভ্রমণপিপাসুদের জন্য শ্রীনগর ভীষণ পছন্দের জায়গা অনেকদিন ধরেই। নিত্যনতুন আকর্ষণের কারণে বছরের পর বছর শ্রীনগরে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে।

প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আতিথেয়তার কারণে গেল কয়েক দশক ধরেই ‘বাকেট লিস্ট’-এ পর্যটকেরা শ্রীনগরের নাম রাখছেন।

২০২২ সালে ২৬ লাখের বেশি পর্যটক শ্রীনগরে আসেন। এর আগে ২০১৬ সালে প্রায় ১৩ লাখ পর্যটক আসেন এখানে। করোনার কারণে পর্যটকদের আগমনে ভাটা পড়ে।

ভারতের অন্যান্য শহর ও পর্যটন স্থানের তুলনায় খরচ কিছুটা বেশি হলেও পর্যটকদের আগ্রহ থামছে না। নিত্যনতুন ভ্রমণের সুযোগ আর অনাবিল সব নৈসর্গ্য লাখো পর্যটকদের ডেকেই চলছে।

নিহাল শর্মা নামের এক পর্যটক জানান, শ্রীনগরের মুঘলদের বাগানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা স্মরণে রাখার মতো। এটা যেন স্বপ্নের মতো একটা জায়গা। এত সুন্দর, নিখুঁত আর দারুণ বাগান না দেখলেই যে নয়।

হিমালয়ের কোলে এই বাগানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনন্য ও কল্পনাতীত। নিহাল মনে করেন, শ্রীনগর সব পর্যটকের প্রত্যাশা ছাপিয়ে অনেক দারুণ অভিজ্ঞতার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এখান থেকে চলে গেলেও এখনকার স্মৃতি অনেকবেশি বার মনে পড়বেই।

দাল লেইক বা দাল হৃদসহ নানান প্রাকৃতিক স্থাপনা সবাইকে মুগ্ধ করে। এখানে বলিউডের নানান জনপ্রিয় সিনেমার শুটিং হওয়ার কারণে অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।

এই হৃদে আসলেই শিকারা নামের নৌকাতে চড়ে পড়েন পর্যটকেরা। ভাসমান বাগান দেখার মাধ্যমে অনন্য এক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তারা।

শ্রীনগরের স্থাপত্য বহুমাত্রিক সংস্কৃতি ও শতবছরের ঐতিহাসিক আমেজকে প্রকাশ করছে। ১৪শ শতকে তৈরি জামে মসজিদ যেকোনো পর্যটকের মন টানবেই। হযরত ব্যাল দরগা মুসলিম পর্যটকসহ সবার ভীষণ প্রিয় এক গন্তব্যস্থল।

শঙ্কচূড়া মন্দির দূরের এক পাহাড়ের শীর্ষে দেখা যায়। সেখান থেকে পুরো শহরের একঝলক দেখা যায়। সেই সুযোগ নিতে দেখা যায় দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটকদের।

ভূ-প্রকৃতি আর প্রকৃতির মধ্যে কাশ্মিরি রসনা পর্যটকদের অভিজ্ঞতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। রোগান জোস আর কাশ্মিরি পোলাও না খেয়ে এখান থেকে ফিরে যাওয়া দুর্ভাগ্যই বটে। জম্মু ও কাশ্মিরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহার ভাষ্যে, প্রতিবছরই এখানে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে।

২০২৩ সালের মে মাসে জি-২০ সম্মেলনের কারণে বিদেশি পর্যটকদের আসার হার আরও বেড়ে গেছে। তিনি জানান, জি-২০ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা সুন্দর বার্তা নিয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন, সেই আমেজেই বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। এরই মধ্যে ২০২৩ সালে ১৫ হাজারের বেশি পর্যটক আসার জন্য নাম নিবন্ধন করেন। যেখানে বেশিরভাগই সাউথ ইস্ট এশিয়ান অঞ্চলের পর্যটক।

পর্যটকদের জন্য নানান সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে মোদি সরকার। প্রায় ২৭১১টি ভূমিহীন পরিবারকে ভূমির অধিকার দেওয়া হয়েছে। ১ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি গৃহহীন মানুষকে ঘর প্রদান করা হয়েছে। এখন অমরনাথ যাত্রায় পূজারীরা যেন নিরাপদে যেতে পারে সেই বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

নানান আকর্ষণে শ্রীনগর এখন ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। এদের মধ্যে দাল লেক দেশি-বিদেশি সব পর্যটকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। সিটি সেন্টার থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই লেক। বিখ্যাত দাল লেক জম্মু ও কাশ্মিরের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক।

স্বচ্ছ পানির এই হৃদে পাশের পীর পঞ্জল পর্বতের ছায়া দৃষ্টিনন্দন আমেজ তৈরি করে। নৌকা ভ্রমণের নেশায় এই লেকে সব সময়ই পর্যটকদের ভিড় থাকে। সিটি সেন্টার থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টিউলিপ গার্ডেন।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় টিউলিপ বাগানে সবসময়ই ভিড় থাকে। জাবারওয়ান পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত টিউলিপ বাগান। প্রতি বছর এখানে টিউলিপ উৎসবে হাজারও পর্যটক অংশ নেন। সিটি সেন্টার থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শঙ্খচূড়া মন্দির।

শঙ্খচূড়া পর্বতের শীর্ষে অবস্থিত মন্দির সবচেয়ে পুরাতন মন্দিরের একটি। ১১০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত এই মন্দির। ১২টি প্রকাণ্ড বাগান নিয়ে নিশাত বাগ পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

শালিমার বাগের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুঘল বাগান নিশাত বাগ। সিটি সেন্টার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শালিমার বাগ মুঘল বাগান। শ্রীনগরের মুকুট হিসেবে আলোচিত এই বাগান।