সমুদ্র সৈকত, সৃজিত বন বনানি, ইকোপার্ক, আদিবাসীদের বসবাস, শুটকি পল্লীর শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা, নদী-কেন্দ্রিক সভ্যতা, জেলে পল্লীসহ হরেক বৈচিত্র্য নিয়ে সাজানো তালতলী। বরগুনা জেলাধীন এই উপজেলায় রয়েছে একাধিক ভ্রমণ কেন্দ্র। এক চক্করে একাধিক কেন্দ্র দেখার সুযোগ মিলবে তালতলী ভ্রমণের মধ্য দিয়ে। বরগুনা জেলার তালতলীর বিশেষ কেন্দ্রগুলো নিয়ে আজকের এই ভ্রমণ ফিচার-

শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত

শুভসন্ধ্যা একটি সমুদ্র সৈকতের নাম। সমুদ্রের কোল ঘেঁষা তালতলীর নিশান-বাড়িয়া ইউনিয়নের নল বুনিয়ায় অবস্থিত এই শুভসন্ধ্যা সৈকতটি। বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মিলিত জলমোহনায় এই সৈকতটি দাঁড়িয়ে আছে যৌবনা রূপ নিয়ে। এই বেলাভূমিটি প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা এলাকা জুড়ে বিস্মৃত। তালতলী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে সোনাকাটা ইকো পার্ক সংলগ্ন নলবুনিয়ার এই চরটি এখন অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। 

টেংরাগিরি ইকো পার্ক

সমুদ্র তীরের দক্ষিণা হাওয়াকে গাঁয়ে মেখে প্রকৃতির সান্নিধ্যে গড়ে ওঠা একটি পর্যটন কেন্দ্র টেংরাগিরি। প্রাকৃতিক নিয়মে জন্ম নেওয়া ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরাজির এই বনটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের পর্যটক মহলে। স্থানীয় জনপদ থেকে শুরু করে সমগ্র বরিশাল বিভাগের মানুষের কাছে একটি বিশেষ পছন্দের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে টেংরাগিরি। বিশেষ করে ২০১০ সালে সরকারি সহায়তায় ইকো ট্যুরিজম পরিকল্পনার মাধ্যমে বনটিকে সজ্জিত করার পরে দৃষ্টি কাড়ে দেশি বিদেশি পর্যটকদের।

রাখাইন পল্লী

তালতলী উপজেলার কবিরাজ পাড়া, তালতলীপাড়া, আগাঠাকুরপাড়া, তাঁতিপাড়া, মনুখাপাড়া, মোমেষেপাড়া, ঠংপাড়া, লাউপাড়া, ছাতনপাড়া, তালুকদারপাড়া, বড় অংকুপাড়া, ছোটো অংকুপাড়া, ও সওদাগর পাড়াসহ রাখাইন সম্প্রদায়ের মোট ১৩ টি পল্লী রয়েছে। এসব পল্লীতে বসবাস করছেন প্রায় ২ হাজার রাখাইন।

আশারচর শুটকি পল্লী

নিকটবর্তী  বঙ্গোপসাগর  আর  অফুরন্ত  সামুদ্রিক মাছের সহজলভ্য প্রাপ্তির ফলে তালতলীর আশাচরে গড়ে উঠেছে বৃহৎ শুঁটকি পল্লী। স্থানীয় অসংখ্য মানুষের পেষা হিসেবে পরিণত হয়েছে শুঁটকি ব্যবসা। মাছ আহরণ থেকে শুরু করে শুঁটকি বাজারজাতকরণ পর্যন্ত চলে এখানকার শুঁটকি শ্রমিকদের কর্মকাণ্ড। জীবন ধারণের প্রয়োজনে হাড়ভাঙ্গা কাজের মাঝে চলে শুঁটকি-পল্লীর মানুষের জীবনযাত্রা। শত শত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের শুঁটকি উৎপাদনের এমন কর্মযজ্ঞ দেখতে শুটকি মৌসুমে অসংখ্য পর্যটক আসে আশারচরে। 

পায়রা নদী

তালতলী ভ্রমণের মধ্য দিয়ে দেখতে পাবেন সুদীর্ঘ পায়রা নদী। এ নদীর আরেক নাম বুড়িশ্বর নদী। দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১২০০ মিটারের নদীটি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়ন এলাকায় প্রবহমান পাণ্ডব নদী হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর নদীটি লেবুখালি, পাঙ্গাসিয়া, ইটবাড়িয়া, আয়লা, পাটকাটা, আমতলী, বুড়িরচর, আড়পাঙ্গাসিয়া এবং পাঁচকোরালিয়া ইউনিয়ন অতিক্রম করে বড় বগী ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। পায়রায় সারা বছর পানি প্রবাহ আর ঢেউ থাকে। জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত এই নদীটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ দ্বিতীয় শ্রেণির নৌ পথ হিসেবে বিবেচিত।

বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় তলতলী প্রকৃতিগতভাবে সমৃদ্ধ একটি পর্যটন অঞ্চল। এখানে সড়ক এবং নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছ। ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি তালতলীর একাধিক বাস রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা সদরঘাট থেকে আমতলীর উদ্দেশে প্রতিদিন লঞ্চ ছেড়ে যায়। সেসব লঞ্চে আমতলী পর্যন্ত পৌঁছে স্থানীয় যানবাহনে যাওয়া যাবে তালতলী অবধি।

আরআর/এএ