ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ দেবে ভ্রমণের নতুন স্বাদ
নদীপথের যাত্রা আরামদায়ক করতে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের লঞ্চগুলোর মধ্যে অদৃশ্য এক যুদ্ধ চলছে। সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে আকর্ষণীয় সব সেবা নিয়ে এই রুটে নিত্য নতুন লঞ্চের আগমন ঘটছে। যার সর্বশেষ সংযোজন দেশের অন্যতম নৌযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স মিতা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি’র তৈরি বিলাসবহুল লঞ্চ এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০।
প্রায় দুই বছর ধরে নির্মাণকাজের পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্য প্রথমবারের মতো যাত্রা করে লঞ্চটি। প্রথম যাত্রায় সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে লঞ্চটির অত্যাধুনিক সব সুযোগ সুবিধা, নিরাপত্তা ও বিনোদনের ব্যবস্থা।
বিজ্ঞাপন
প্রিন্স আওলাদ-১০ ভ্রমণে প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে কাঠের কারুকাজ। চোখ এড়াবে না আলোকসজ্জা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনও। এরপরই চোখে পড়বে লিফট। হ্যাঁ, লঞ্চটিতে লিফটের ব্যবস্থাও রয়েছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সুবিধার জন্যও থাকছে লিফটের ব্যবস্থা।
লঞ্চটির কর্ণধার ও পরিচালক যুবরাজ হোসেন শিশির জানান, প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চটি তৈরির সময় যাত্রী ও নৌযানের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া লঞ্চটির নির্মাণকাজ প্রায় দুই বছর ধরে চলেছে। আমাদের নৌযানটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক সিওটু নিরাপত্তা ব্যবস্থার ইঞ্জিনরুম। এটি বাংলাদেশে আমরাই প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেছি। এর ফলে লঞ্চের ইঞ্জিনরুমে কখনো আগুন লাগলে মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
চারতলা এ লঞ্চের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কেবিনের যাত্রীদের জন্য রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা, বসার জন্য আছে পর্যাপ্ত চেয়ার। এছাড়াও রয়েছে বিনোদন স্পেস, বড় পর্দার টিভি। স্যাটেলাইট অ্যান্টেনার মাধ্যমে টেলিভিশনে দেড়'শ চ্যানেল দেখার ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগের ব্যবস্থা, রেস্টুরেন্ট, উন্মুক্ত ওয়াইফাই সুবিধাসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। লঞ্চের চতুর্থ তলায় রয়েছে নামাজের জন্য মসজিদের ব্যবস্থা। মসজিদটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন একজন ইমাম। এছাড়াও রয়েছে ছোট লাইব্রেরি, চাইনিজ রেস্তোরাসহ আরও অনেক কিছু।
প্রায় ৮৬ মিটার দৈর্ঘ্যে আর ১৪.৫ মিটার প্রস্থের এ লঞ্চটির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ইস্পাতের তৈরি নতুন পাত। যা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। দুস্তরবিশিষ্ট স্টিলের মজবুত তলদেশ থাকায় দুর্ঘটনায় তলদেশ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কম। লঞ্চটির ডেকের তলদেশে পৃথক কম্পার্টমেন্ট বা হাউজ সিস্টেম করা হয়েছে। যাতে দুর্ঘটনায় তলদেশের কোনও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অপর অংশে পানি প্রবেশ না করতে পারে এবং লঞ্চটি নিরাপদে চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তায় লঞ্চে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, লাইফ জ্যাকেট-বয়াসহ পানিতে ভেসে থাকার সকল আধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে।
নৌযানটিতে রয়েছে ১৪৮০ এইচপির জোড়া ডাইহাটসু ইঞ্জিন। যার কারণে লঞ্চটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ নটিক্যাল মাইল বেগে ছুটতে সক্ষম হবে। লঞ্চটি মেকানিক্যাল ও ইলেক্ট্রো হাইড্রোলিক সুকান সিস্টেমসহ মাষ্টার ব্রিজে প্রয়োজনীয় আধুনিক সকল ইকুইপমেন্ট দ্বারা নির্মিত। চলার সময় নদীর গভীরতা জানতে লঞ্চের সামনে ও পেছনে দুটি ইকোসাউন্ডার বসানো হয়েছে। এছাড়া রাডারসহ লঞ্চ চালনায় আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। লঞ্চটি দেড় হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে এবং পর্যাপ্ত পণ্যও পরিবহন করতে পারবে।
চারতলা এ লঞ্চটির বিজনেস ক্লাসে রয়েছে বিলাসবহুল ৮ টি ভি.আই.পি কেবিন। যার প্রতিটি কেবিন রয়েছে অ্যাটাচ বাথ ও বারান্দাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ভিআইপি কেবিনের আরও একটি আকর্ষণীয় দিক হলো, এই লঞ্চে রয়েছে ডুপ্লেক্স কেবিন ব্যবস্থাও। তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সহযোজন হয়েছে এই ডুপ্লেক্স কেবিনে।
যাত্রীদের বাজেট এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা ভেবে নৌযানটিতে এসি ও নন-এসি মিলিয়ে মোট ১২৪টি সিঙ্গেল কেবিন ও ৭০টি ডাবল কেবিন রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে সেমি ভি.আই.পি কেবিন ও ফ্যামিলি কেবিন। প্রতিটি শ্রেণির কেবিনগুলো বানানো হয়েছে বিলাসবহুল আবাসিক চার তারকা হোটেলের আদলে। ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো প্রতিটি কক্ষ। প্রতিটি কেবিনের সঙ্গে রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। এখানে বসে চাইলেই উপভোগ করা যাবে নদীর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য।
লঞ্চটিতে ডেকের যাত্রী থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবস্থা ও পরিশুদ্ধ পানি, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ও বিনোদনের জন্য এলইডি টেলিভিশনের ব্যবস্থা।
আওলাদ শিপিং লাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুল হক মাসুম জানান, লঞ্চটিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে সর্বদা তিনজন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও যাত্রী সেবার জন্য থাকবে ২৮ জন কেবিন বয়। পুরো লঞ্চটি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।