অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া আইনের বিরুদ্ধে কড়া হুমকি গুগলের
অস্ট্রেলিয়ানদের গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের সুবিধা বন্ধের কড়া হুমকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অস্ট্রেলিয়ার খসড়া নিউজ মিডিয়া আইন বাতিলের দাবিতে এ হুমকি দিল গুগল।
শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) গুগল এ হুমকি দেয়।
বিজ্ঞাপন
‘নিউজ মিডিয়া অ্যান্ড ডিজিটাল প্ল্যাটফরমস মেন্ডেটরি বারগেইনিং কোড’ নামের ওই আইনে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ফেসবুক ও গুগলের মতো টেক জায়ান্টদের বিজ্ঞাপন ও আর্থিক চুক্তির বিষয় স্থান পেয়েছে। ফেসবুক ও গুগলের বিজ্ঞাপন থেকে মাধ্যমগুলো সঠিকভাবে অর্থ পায় না। এছাড়া গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান সংবাদমাধ্যমের কন্টেন্ট ব্যবহার করে আয় করছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম তাদের থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে না। এসব বিষয় এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনের অর্থের বৈষম্য দূর করতেই এই আইন।
• প্রতি ১০০ ডলার অনলাইন বিজ্ঞাপনের ৫৩ ডলারই নিয়ে নেয় গুগল
• খসড়া মিডিয়া বিলটি গত ডিসেম্বরে উত্থাপিত হয় অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে
• আইন পাস হলে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজারে বৈষম্য দূর হবে বলে দাবি অস্ট্রেলিয়ার
অস্ট্রেলিয়ার এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, প্রতি ১০০ ডলার অনলাইন বিজ্ঞাপনের ৫৩ ডলারই নিয়ে নেয় গুগল। ২৮ ডলার নিচ্ছে ফেসবুক। বাকি টাকা ভাগ হয় অন্যদের মধ্যে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত মিডিয়া আইনে বলা হচ্ছে, নিজেদের প্ল্যাটফর্মে সংবাদ প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থাকে তাদের সাংবাদিকতার জন্য টাকা দিতে হবে। ফেসবুক ও গুগলের মতো টেক জায়ান্টদের বাধ্য করতে এমন বিল গত ডিসেম্বরে উত্থাপিত হয় অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে।
প্রস্তাবিত আইন সংশোধন করা না হলে ব্যাপার ভালো হবে না। বন্ধ করে দেওয়া হবে অস্ট্রেলিয়ায় গুগলের সেবা।
গুগল অস্ট্রেলিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেল সিলভার হুমকি
আজ শুক্রবার গুগল অস্ট্রেলিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেল সিলভা অস্ট্রেলিয়াকে হুমকি দিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত আইন সংশোধন করা না হলে ব্যাপার ভালো হবে না। প্রস্তাবিত এ খসড়াটি যদি আইন হয়, তাহলে অস্ট্রেলিয়ায় গুগলের সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মেল সিলভা বলেন, গুগল অবশ্যই সংবাদমাধ্যমকে সাপোর্ট দিতে চায়। তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত মিডিয়া আইনের সংশোধনও চায়।
অস্ট্রেলিয়ায় কী করা যাবে না-যাবে তা আমরাই ঠিক করে দেব। কোনো ধরনের হুমকি আমরা গ্রাহ্য করব না।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় কী করা যাবে না-যাবে তা আমরাই ঠিক করে দেব। আমাদের আইন মেনে এখানে যারা কাজ করতে চান তাদেরকে স্বাগতম। কিন্তু কোনো ধরনের হুমকি আমরা গ্রাহ্য করব না।
আমেরিকান টেক ফার্মগুলো অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের উপার্জনে ধস নামিয়েছে বলে এর আগে মন্তব্য করেছিলেন স্কট মরিসন।
গুগল অস্ট্রেলিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেল সিলভা বলেন, অবশ্যই সংশোধনের মাধ্যমে আইনটিকে যৌক্তিক ও সহনীয় করতে হবে। তাহলেই শুধু এটা কার্যকর হতে পারে।
প্রস্তাবিত আইনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এর আগে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের খবর খুঁজতে অসহযোগ পালন করে গুগল। কিছু সংখ্যক ব্যবহারকারীকে পরীক্ষামূলকভাবে কোম্পানিটি সংবাদ খুঁজতে বাধাও দেয়। কিন্তু আজই প্রথমবারের মতো কোম্পানিটি ঘোষণা করল যে, অস্ট্রেলিয়ানদের গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার বন্ধ করতে তারা প্রস্তুত।
সংবাদ ব্যবসার স্বার্থে গুগল অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত মিডিয়া আইনের গ্রহণযোগ্য সংশোধন দাবি করেছে। এদিকে প্রস্তাব পাস হলে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজারে বৈষম্য দূর হবে বলে দাবি অস্ট্রেলিয়ার।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে তাই ‘ঠিকমতো বুঝতে পারছে না’
ফেসবুক
খসড়া আইনে কী আছে?
‘নিউজ মিডিয়া অ্যান্ড ডিজিটাল প্ল্যাটফরমস মেন্ডেটরি বারগেইনিং কোড’ নামের ওই আইনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এবং টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে আর্থিক চুক্তি করতে হবে বিভিন্ন টেক জায়ান্টকে। চুক্তির মাধ্যমে অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। আইন না মানলে এক কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ৬৩ কোটি বাংলাদেশি টাকা) পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।
খসড়া আইনে ফেসবুক নিউজ ফিড ও গুগল সার্চকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে অন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম একইভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
ফেসবুকের প্রতিক্রিয়া
প্রস্তাবিত আইনে গুগলের সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়েছে ফেসবুকও। টাকার বিনিময়ে ‘অস্ট্রেলিয়ার কোনো সংবাদ ফেসবুকে প্রকাশ করা হবে না’ এমন হুমকিও দিয়েছে তারা। ফেসবুকের পক্ষ থেকে গত ডিসেম্বরে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার সরকার ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে তাই ‘ঠিকমতো বুঝতে পারছে না’।
প্রস্তাবিত মিডিয়া আইনে অস্ট্রেলিয়া সরকার যাদের রক্ষা করতে চাচ্ছে, সেই সংবাদমাধ্যমগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মত ফেসবুকের।
সূত্র: ফ্রান্স২৪
এইচকে