দেশের যুবসমাজের মধ্যে ৮৬ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে সামগ্রিকভাবে ৭২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও তাদের মধ্যে মাত্র ২৮.৩ শতাংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ (টিভিইটি) সম্পর্কিত উপকরণ অনুসন্ধান করেন।

ব্র্যাকের উদ্যোগে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং পরবর্তীকালে কর্মসংস্থানের ব্যাপারে যুবাদের ধারণাসংক্রান্ত একটি বেসলাইন জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী যুবাদের অধিকাংশ (৬৫%) ফেসবুককে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে কার্যকর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ‘বাংলাদেশের কর্মমুখী শিক্ষায় যুবদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন’ শীর্ষক জাতীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এই সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) কে.এম. তারিকুল ইসলাম, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) দুলাল কৃষ্ণ সাহা, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সেলিমা আহমাদ।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ই পিটারসেন। ব্র্যাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহে্র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ব্র্যাক স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের বর্তমান ইনচার্জ তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান বলেন, বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার চাকরিগুলোকে এখনও ব্লু কলার জব বা কায়িক শ্রমের চাকরি হিসেবে অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। এই ভুল ভাঙাতে সচেতনতা তৈরি করা এবং সমাজকে টিভিইটির গুরুত্ব এবং তার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বক্তারা বলেন, সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণকে জনপ্রিয় করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছেনি। তাই সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলো দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের সুফল-বিষয়ক ইতিবাচক বার্তা দুর্গম এলাকাসহ জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই দক্ষতা উন্নয়নে নিবন্ধিত এনজিওগুলো যেন এ কার্যক্রমে আরও বেশি জোর দেয়- সে ব্যাপারে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো সুপারিশ করতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে.এম. তারিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি জেলায় সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও আগে দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এখানে বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো ভূমিকা রাখতে পারে। ব্র্যাকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকার এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা উপকৃত হবে, নিজেদের সংস্থায় এই ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারবে।

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, বিভিন্ন খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ধরে রাখতে হবে। দক্ষতা ছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে টিকে থাকা যাবে না। তাই বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং দক্ষ জনবল তৈরিতে ব্যাপক প্রচারণা জরুরি।

বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ই পিটারসেন বলেন, তরুণদের কথাগুলো আমাদের শুনতে হবে এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির অধীনে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। সরকার, প্রাইভেট সেক্টর এবং অংশীদারদের মধ্যে থেকে স্টেকহোল্ডার গঠন করে তরুণদের মানসিকতা কীভাবে পরিবর্তন করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে।

ব্র্যাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে শুধু দালান তৈরি করলেই চলবে না, বরং তারা যাতে সেই দক্ষতা প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে চাকরি পায়, অথবা উদ্যোক্তা হতে পারে, বা আয় বর্ধককাজে আত্মনিয়োগ করে জীবনমান উন্নত করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করতে এবং টিভিইটি-র নতুন উদ্ভাবনী সমাধানের জন্য প্রস্তুত।

এসকেডি