মহাকাশ ঘুরে এলেও সম্ভবত নভোচারী উপাধি পাচ্ছেন না জেফ বেজোস ও ব্লু অরিজিন টিম

সম্প্রতি মহাকাশ ভ্রমণ করে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী রিচার্ড ব্র্যানসন এবং মার্কিন বিলিয়নিয়ার জেফ বেজোস। মহাকাশ ভ্রমণের পর তারা উভয়েই এখন নিজেদেরকে ‘নভোচারী’ দাবি করতে পারেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ একটি সিদ্ধান্ত তাদের সেই স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষায় ঠান্ডা পানি ঢেলে দিতে পারে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মহাকাশ ভ্রমণকারী তথা অ্যাস্ট্রোনট বা নভোচারী শব্দটির সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। নতুন ওই সংজ্ঞায় নভোচারী উপাধি পাওয়ার শর্ত বা বিধি আরও কঠোর করা হয়েছে।

ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) নতুন আইন অনুযায়ী, যারা নভোচারী হতে ইচ্ছুক তাদেরকে অবশ্যই মহাকাশযানের ক্রুদের অংশ হতে হবে এবং মহাকাশযানের নিরাপত্তা রক্ষায় অবদান রাখতে হবে।

যার অর্থ, মহাকাশযানে করে মহাকাশ ভ্রমণ করেও জেফ বেজোস ও স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন এখনও নভোচারী নন। আরও স্পষ্ট করে বললে, অন্তত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের দৃষ্টিতে তারা নভোচারী নন।

বিবিসি বলছে, ২০০৪ সালে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) উইংস প্রোগ্রাম শুরু হয়েছিল। এরপর এবারই প্রথম তাদের আইনে পরিবর্তন আনা হলো। গত মঙ্গলবার কমার্শিয়াল অ্যাস্ট্রোনট উইংস প্রোগ্রামের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া ওই। ওই একইদিনে ব্লু অরিজিন রকেটে চড়ে টেক জায়ান্ট অ্যামাজনের জেফ বেজোস মহাকাশে ভ্রমণ করেন এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

তবে কেউ মহাকাশে ঘুরতে গেলে বাণিজ্যিক নভোচারীর উপাধি পাবেন। আর সেটা পেতে হলে মহাকাশ ভ্রমণকারীদের ভূ-খণ্ড থেকে ৫০ মাইল বা ৮০ কিলোমিটার ওপরে উঠতে হবে। যেটা জেফ বেজোস ও রিচার্ড ব্র্যানসন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করে এসেছেন।

এফএএ বলছে, এই উচ্চতার শর্তের পাশাপাশি হবু নভোচারীদের অবশ্যই মহাকাশ ফ্লাইটে ভ্রমণের সময় ক্রু হিসেবে কাজে সক্রিয় থাকতে হবে অথবা হিউম্যান স্পেস ফ্লাইটের নিরাপত্তায় অবদান রাখতে হবে।

গত ১১ জুলাই ব্রিটিশ বিলিওনেয়ার ব্যবসায়ী রিচার্ড ব্র্যানসনকে নিয়ে ভার্জিন গ্যালাকটিক নামে একটি যান মহাকাশের দ্বারপ্রান্তে ভ্রমণের পর নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে। নিজের প্রতিষ্ঠানের তৈরি রকেটে চেপে মহাশূন্যে ভ্রমণ করেন তিনি। ভ্রমণ শেষে রকেটটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউমেক্সিকোতে অবতরণ করে।

বিবিসি সেসময় জানায়, এক ঘণ্টাব্যাপী যাত্রায় ইউনিটি-২২ নামের এই মহাকাশযানটি ঘণ্টায় তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে উড়ে যায়। এসময় কয়েক মিনিট ধরে রকেটের ছয় যাত্রী ভরশূন্যতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

এরপর গত ২০ জুলাই নিজের রকেট জাহাজ নিউ শেপার্ডে করে মহাকাশে ছোট-খাট ভ্রমণ করে ফিরে আসের বিলিয়নিয়ার জেফ বেজোস। তার এই রকেট জাহাজটিতে এবারই প্রথম কোনো ক্রু ফ্লাইট পরিচালনা করা হলো।

এ যাত্রায় বেজোসের সঙ্গে ছিলেন তার ভাই মার্ক বেজোস, মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার দৌড়ের একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত ৮২ বছর বয়সী ওয়ালি ফাঙ্ক এবং ১৮ বছর বয়সী একজন শিক্ষার্থী। তারা এমন একটি ক্যাপসুলে করে এই ভ্রমণ করেছেন যার জানালাগুলো বড় থাকায় পৃথিবীর চমকপ্রদ দৃশ্য উপভোগের সুযোগ পেয়েছেন।

মহাকাশ ভ্রমণ শেষে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডের মাথায় ক্যাপসুলটি পৃথিবীতে ফিরে আসে। বেজোসের সংস্থা ব্লু অরিজিন এই নিউ শেপার্ড নামে রকেটটি তৈরি করেছে। এটি মহাকাশ পর্যটনের জন্য ক্রমবর্ধমান বাজারের চাহিদা পূরণের জন্যই নকশা করা হয়েছে।

উড্ডয়নের দু’মিনিট পরে ক্যাপসুলটি তার রকেট থেকে আলাদা হয়ে কারমান লাইনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কারমান লাইন স্থানটি মহাকাশের সীমানা হিসেবে স্বীকৃত এবং এটি পৃথিবী থেকে ১০০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থিত। ক্যাপসুলটি পশ্চিম টেক্সাসের মরুতে অবতরণের আগে প্রায় সর্বোচ্চ ১০৭ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

ব্লু অরিজিনসহ নিজের অন্যান্য উদ্যোগগুলোতে মনোনিবেশ করার জন্য বৈশ্বিক ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী হিসাবে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন জেফ বেজোস।

টিএম