মানুষের মন বুঝতে পারে এমন একটি হেলমেট তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান কর্নেল ভিন্ন রকমের এই হেলমেট তৈরি করেছে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই এটি বাজারে আনা হবে।

জানা গেছে, উদ্ভাবিত হেলমেটের ওজন দুই পাউন্ডের মতো। এটি ৫০ হাজার ডলারেই কেনা যাবে। মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন ও ইলেক্ট্রনিক্স ইমপালসের ভিত্তিতে এটি কাজ করবে।

কর্নেলের প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান জনসন বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা হেলমেটটি বাজারে আনবো। এটি সহজেই মানুষের মনের ভাষা শনাক্ত করতে পারবে। তাছাড়া এটি মস্তিষ্কের বয়স বেড়ে যাওয়া, মানসিক রোগ বা এর পেছনের কারণ এবং বিভিন্ন মেটাফিজিক্যাল ডিসঅর্ডার শনাক্ত করার কাজ করতে সক্ষম।’

ব্রায়ান জনসন আরও বলেন, হেলমেটটি তৈরি করতে ৫ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। ‘এর মাধ্যমে আপনি উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টরল স্বাভাবিক আছে কি না সেটি পরীক্ষা করতে পারবেন।’

জনসন বলেন, ‘মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করেই এটি তৈরি করা হয়েছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে হেলমেটটি স্মার্টফোন রেঞ্জের ভেতর আনতে চাই।’

এনডিটিভি জানায়, শরীরের প্রতিটি কোষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হেলমেটটি তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অন্য মানুষেরা মনে মনে কী ভাবছেন সেটি জানা যাবে।

কে এই জনসন?

হেলমেটটির প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান জনসন একেবারেই দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। তার জন্ম ১৯৭৭ সালে। মা-বাবার ৫ ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার মা এলেন হাফ বলেছেন, ‘আমরা সীমাহীন দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটিয়েছি এবং সাদাসিধাভাবে ছেলেমেয়েদের বড় করেছি।’

ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে জনসন এনডিটিভিকে বলেন, ‘আমার মনে পড়ে মা কাপড় পরিষ্কার করতেন এবং আমাদের জন্য রুটি তৈরি করতেন। আমি অনেককেই দোকান থেকে বিভিন্ন জিনিস কিনতে দেখেছি। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে আমরা কোনো দোকানেই যেতাম না। ২০ বছর ধরে কষ্টকর জীবনযাপনের পর বাবা আমাদের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। তার পরিশ্রমের কারণেই আমরা দারিদ্র্য থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি এবং আমাদের জীবন স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।’

জনসন প্রায়ই ভেবেছেন, কীভাবে মানুষকে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া যায়? আর মানুষের কথা ভেবেই তিনি শিল্পোদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। এর শুরুটা ছিল ব্রিয়াংহাম ইয়াং ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নের সময়ে। তখন তিনি স্মার্টফোন সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করেছেন। পরবর্তীতে ক্রেডিট কার্ড বিক্রেতা হিসেবেও কাজ করেছেন। সামান্য একজন ক্রেডিট কার্ড বিক্রেতা থেকে ধীরে ধীরে তিনি শিল্পোদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেন। ২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তার ভোক্তারা অভিযোগ করেন, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তারা ক্রেডিট কার্ড কিনতে পারছেন না। এ সমস্যার সমাধানও হয়েছে। তবে একটু দেরিতে। ২০০৭ সালে তিনি সফটওয়্যার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ব্রেইনট্রি প্রতিষ্ঠা করেন।

ধীরে ধীরে ব্রেইনট্রি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্ত জনসাধারণের আস্থাভাজন হয়ে উঠল। অনেকেই তখন এয়ারবিএনবি, ওপেনটেবিল, উবারসহ আরও অনেক অনলাইন সেবার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।

পরবর্তীতে জনসন ক্যালিফোর্নিয়ায় স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান কর্নেল প্রতিষ্ঠা করেন। মনোবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে তিনি এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কারণ তখন তার মাথায় ঘুরছে এমন একটি হেলমেট বানানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা যা মানুষের মনের কথা বুঝতে পারবে। এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধি, বিভিন্ন মানসিক রোগ কিংবা এর পেছনের কারণসহ আরও নানা কাজ করা সম্ভব।

এই যন্ত্রের সাহায্যে মানুষ সহজেই অন্যের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। ফলে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।

সূত্র : এনডিটিভি।

এইচএকে/আরআর/এএ