বিটিআরসির শুনানি
মোবাইলে কল ড্রপ, নেটওয়ার্ক সমস্যাসহ নানা অভিযোগ গ্রাহকদের
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান বলেছেন, বর্তমানে দেশে ৯৯ ভাগ মোবাইল হ্যান্ড-সেট স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। যার মধ্যে স্মার্ট ফোন পেনিট্রেশন ৬০ ভাগের বেশি।
বুধবার (৮ মে) দেশের টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে বিটিআরসির গণশুনানিতে এ তথ্য জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
মোহাম্মদ খলিল বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে মোবাইল সিম সংযোগের সংখ্যা ১৯ কোটি ২২ লাখ, ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ৪৭ লাখ, মোবাইল ডেনসিটি ১০৮.৪১% এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ৭৫.৭৪%। মার্চ ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ তথা ডাটার ব্যবহার হয়েছে ৫ হাজার ৯১২ জিবিপিএস।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, গণশুনানিতে অংশে নিতে নিবন্ধন করেছেন ৩ হাজার ২৫ জন যা ২০২২ সালের গণশুনানিতে নিবন্ধনের সংখ্যার চেয়ে চারগুণ বেশি।
এ সময় বিভিন্ন সেবা গ্রহীতা মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান যথা-কলড্রপ ও বিভিন্ন প্যাকেজ (ভয়েস, ডাটা বান্ডেল) এর মূল্য এবং ইন্টারনেট সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ, প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি, সাইবার অপরাধ এবং সংশ্লিষ্ট টেলিকম সেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ, পরামর্শ তুলে ধরেন।
গণশুনানিতে ধানমন্ডির ব্যবসায়ী নাহিয়ান তার বাসায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ না পাওয়ার অভিযোগ করেন। জবাবে কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেসব এলাকায় বহুতল অবকাঠামো রয়েছে সেখানে নেটওয়ার্ক কভারেজ সহজে প্রবেশ করতে পারে না। অপারেটরগুলো নতুন সাইট স্থাপন করতে চাইলেও জনগণ বিভিন্ন এলাকায় নতুন সাইট নির্মাণের অনুমতি না দেওয়ার ফলে পর্যাপ্ত সাইট স্থাপন করা যাচ্ছে না।
টাওয়ার স্থাপনের বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাওয়ার স্থাপনের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য বিটিআরসি টাওয়ার শেয়ারিং চালু করেছে। এর ফলে এক টাওয়ার থেকে সব অপারেটর সেবা গ্রহণ করতে পারবে। বিটিআরসি সারাদেশে বিভিন্ন শহর ও উপজেলায় টাওয়ার রেডিয়েশন পরিমাপ করে এবং এর ফলাফল বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
দেশের রেডিয়েশন মাত্রা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে নিচে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রেডিয়েশনের নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মুন্সি আমানুর রহমান স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে পছন্দের ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন।
এর জবাবে কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিটিআরসি এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে অবৈধ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। আমিনুল ইসলাম নামে ঢাকার এক শিক্ষার্থী বলেন, তরঙ্গ বরাদ্দের পরও অপারেটরগুলো যথাসময়ে রোলআউট না করায় গ্রাহকরা মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, অপারেটরদেরকে যথাসময়ে তরঙ্গ রোলআউটের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে যা বাস্তবায়ন হলে মোবাইল নেটওয়ার্কের মান বাড়বে।
ঝিনাইদহ থেকে জুম প্ল্যাটফর্মে অংশ নিয়ে ইমরান হোসেন নামে এক গ্রাহক প্রত্যন্ত এলাকার সিমের মালিকানা পরিবর্তন, এমএনপিসহ সকল টেলিযোগাযোগ সেবা এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে গ্রহণের সুবিধা চালুর বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান বলেন, সিমের মালিকানা পরিবর্তন ও এমএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয় বিধায় তা এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে সম্ভব হয় না, ভবিষ্যতে মোবাইল অপারেটর সংক্রান্ত সকল সেবা যাতে অনলাইনে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বর্তমানে যেসব অনিবন্ধিত ফোন রয়েছে তা বন্ধ হয়ে যাবে কি না এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, নেটওয়ার্কে সচল সকল মোবাইল হ্যান্ড-সেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হচ্ছে, তাই আপাতত কোনো মোবাইল হ্যান্ড-সেট বন্ধ হবে না।
গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ডিজিটাল কানেক্টিভটি, সারাদেশে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো, রাজস্ব আদায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রযুক্তি শিল্প বিকাশে বিটিআরসির অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান চাহিদা এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আধুনিক ও ভবিষ্যতমুখী টেলিযোগাযোগ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কমিশনের অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসাইন, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো. নুরুল হাফিজ এবং পরিচালকসহ বিটিআরসির অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএইচটি/এসকেডি