দেশের শীর্ষস্থানীয় আইটি প্রতিষ্ঠান বিডিকলিং আইটি লিমিটেডের নতুন অফিসের উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে চার শতাধিক কর্মীর প্রতিষ্ঠান বিডিকলিংয়ে নতুন করে আরও প্রায় ১৫০ কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র আইটি সেক্টরেই ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে জানিয়েছে বিডিকলিং।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনশ্রী এফ-ব্লক এলাকায় নতুন এ অফিসের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।

উদ্বোধন শেষে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বিডিকলিংয়ের অগ্রযাত্রা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।

তিনি বলেন, বিশ্বে আইটি সেক্টরে প্রচুর কাজের চাহিদা রয়েছে। সে অনুপাতে আমরা কাজ করতে পারছি না। তবে সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা দেশের জন্য আরও রেমিট্যান্স নিয়ে আসতে পারি।

রাসেল টি আহমেদ বলেন, এই মুহূর্তে আমরা আইসিটি সেক্টর থেকে প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করি। এর মধ্যে প্রথম চারটি ডেসটিনেশন হলো, আমেরিকায় ৩৪ শতাংশ যায় এবং যুক্তরাজ্যে হয় ৩০ শতাংশ। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানেও বড় একটা অংশ আমরা এক্সপোর্ট করে থাকি। এই মুহূর্তে এই সময়ে শুধুমাত্র আমেরিকাতে ৩ মিলিয়ন আইসিটি লোকের স্বল্পতা আছে। যুক্তরাজ্যে ১ মিলিয়নের মতো, ইউরোপের দেড় মিলিয়নের মতো এবং জাপানে সাড়ে ৮ লাখের মতো লোকের স্বল্পতা আছে। তারা কাজের লোক খুঁজে পাচ্ছে না, মানুষের অভাব। এই মানুষগুলোই কিন্তু আমরা হতে পারি। আমাদের জন্য বড় একটা সুযোগ।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র এই চারটি দেশের চাহিদা যদি আমরা ১০ শতাংশও পূরণ করতে পারি, তাহলেই আমাদের এক্সপোর্ট ২০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। আর আইসিটিতে সমগ্র বিশ্বের যে চাহিদা আছে, তার ১ শতাংশও যদি আমরা পূরণ করতে পারি, তাহলেও আমাদের এক্সপোর্ট ছাড়িয়ে যাবে ২০ মিলিয়ন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে করারোপ প্রসঙ্গে বেসিস সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি আইনের ১২৪ ধারা অনুযায়ী ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কোনো কর নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে একটা সার্কুলার দিয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। সুতরাং এটা নিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের ভয়ের কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা খুঁজ নিয়ে দেখেছি অনেক ফ্রিল্যান্সাররাই ব্যাংক থেকে ক্যাশ ইনসেনটিভ পান না। কোন কারণে তারা সেটা পান না, আমরা খুঁজে বের করেছি এবং সেটা নিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি। আশা করছি, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যেই এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিডিকলিং আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাবিনা আক্তার। তিনি বলেন, আজকের এই দিনটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। প্রথম কারণ হলো, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এমন ক’জন অতিথিকে পেয়েছি, যারা ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত ব্যস্ত একেকজন মানুষ। যাদের আলোয় প্রতিনিয়ত আলোকিত হচ্ছে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, বিডিকলিং আইটি লিমিটেড ধীরে ধীরে তার নিজস্ব লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলছে। আজকে ছয় হাজার স্কয়ার ফিটের এই বিশাল অফিস উদ্বোধন এবং নতুন আরও দেড় শতাধিক মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বপ্নের পানে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, অনলাইন শ্রমবাজার বা ফ্রিল্যান্সিং খাতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বের এ শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অংশ প্রায় ১৬ শতাংশ। তবে এ খাতের কর্মী হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও আয়ের দিক থেকে ৮ম। বিশ্বে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজার দেড় ট্রিলিয়ন ডলার। তাই এই বাজার আরও সম্প্রসারণের সুযোগ করে দিতে আয়ের বিপরীতে ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিডিকলিং আইটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, শুধুমাত্র আইটি সেক্টরেই ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিডিকলিং আইটি লিমিটেড। ৯ বছর আগে আমাদের যাত্রাটা বিস্তর পরিসরে ছিল না। ড্রয়িং রুমের একটা কম্পিউটারে আমাদের কাজ শুরু হয়েছিলে, আজ এই পর্যায়ে এসে আমাদের সাথে কাজ করছে ৪ শতাধিক এমপ্লয়ি। আশা করছি, ২০৩০ সালের মধ্যেই বিডিকলিং দেশের আইটি সেক্টরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক নাম হয়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হ্যাশটেক আইটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আসলাম হাসিব, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের ডিজিএম এবং ‘প্রিয় বনশ্রীবাসী’ ফেসবুক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুদ্দিন মানিক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিডিকলিংয়ের জিএম, হেড অব এইচআর, ফিন্যান্স ম্যানেজার এইচআর এবং বিডিকলিং পরিবারের সদস্যরা।

টিআই/এসকেডি