অনলাইনে কেনাকাটার সময় ডলার,পাউন্ড বা ইউরোর মতোই ব্যবহৃত হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন। প্রচলিত মুদ্রাব্যবস্থায় যেমন বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভূমিকা পালন করেন, তেমন ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে হয় না। বিশেষ করে কে বা কারা বিটকয়েন নিয়ন্ত্রণ করছে সে বিষয়ে এখন অবধি কিছুই জানা যায়নি। ২০০৮ সালের শেষভাগে সাতোশি নাকামোতো নামধারী এক ব্যক্তি সফটওয়্যার ডেভেলপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল মুদ্রাটি চালু করে। তবে যিনি বিটকয়েন চালু করেছেন তার প্রকৃত নাম বা পরিচয় এখনও জানা যায়নি। 

ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে সরাসরি এই মুদ্রার লেনদেন হয়। লেনদেনের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামক একটি সফটওয়্যার। ২০১৩ সালে এই মুদ্রার দাম ১০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। বিটকয়েনে লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে সংরক্ষিত থাকে। নাম প্রকাশ না করেও মুদ্রাটি লেনদেন করা যায়।

অনলাইনে বিটকয়েন চালু হওয়ার কারণে কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যেসব ব্যক্তি এতে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের সম্পদ আকস্মিকভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছে। কিন্তু অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় বিটকয়েন কেন এত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে? কেন বিভিন্ন দেশে মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া সত্ত্বেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিটকয়েন?- দীর্ঘদিন ধরেই এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন অর্থনীতিবিদ ও সংবাদকর্মীরা।

‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’ সম্মেলনের এক সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস. কে. সুর চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে কীভাবে ডিজিটাল মুদ্রার প্রচলন করা যায় সেটি খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে। 

বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সীমিত আকারে বিটকয়েনের মাধ্যমে কেনাবেচা হলেও আইন অনুযায়ী যেকোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে কেনাবেচা করা বেআইনী। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বিটকয়েনের অনুমোদন নেই। তাই এ ধরনের লেনদেন কখনোই বৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।  

২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েনের মাধ্যমে লেনদেনের বিষয়ে সতর্কতা জানিয়ে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নামবিহীন বা ছদ্মনামের কারও সঙ্গে অনলাইনে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’ 

সরবরাহ সীমিত

বিটকয়েনকে সোনার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কারণ এর সরবরাহ সীমিত। খনি থেকে উত্তোলনের পর যেমন সোনার সরবরাহ শেষ হয়ে যায়, তেমনই অ্যালগরিদমের সমাধানের মাধ্যমে বিটকয়েনও উত্তোলন করতে হয়। যা ‘বিটকয়েন মাইনিং’ নামে পরিচিত। বর্তমান সময়ে বিটকয়েন মাইনিংয়ে ২১৪০ সাল অবধি সময় প্রয়োজন। 

ভগ্নাংশেও কেনা যায় বিটকয়েন

২০১৩ সালে বিটকয়েনের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার কারণে ভগ্নাংশে কেনার ব্যাপারটি আলোচনায় উঠে আসে। অর্থাৎ বিটকয়েনের ভগ্নাংশও কেনা সম্ভব। উদ্ভাবকের নামের সঙ্গে মিল রেখে এর ভগ্নাংশকে বলা হয় ‘সাতোশি’। এক বিটকয়েনের ১০ ভাগের এক ভাগ হলো এক সাতোশি। 

প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে সহস্রাধিক

বিটকয়েনের মতো সহস্রাধিক ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশ্বব্যাপী চালু রয়েছে। তবে এসব ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে বেশিরভাগই বিটকয়েনের মতো সফল নয়। তবে এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল মুদ্রানির্ভর অর্থনীতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। 

দুই ভাগে বিভক্ত

বিটকয়েন সফটওয়্যার কোডে বিভক্তির কারণে ২০১৭ সালের ১ আগস্টের আগে কেনা সব বিটকয়েন ভার্চুয়ালি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বিটকয়েনের পাশাপাশি ‘বিটকয়েন ক্যাশ’ নামের আরেকটি ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভব হয়। অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১ আগস্টের আগে যদি কেউ বিটকয়েন কেনেন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি একটি বিটকয়েন ক্যাশের মালিক হয়ে যান। সে বছর ১ বিটকয়েন ক্যাশের মূল্য ছিল ১ হাজার ৩০০ ডলার। 

এইচএকে/আরআর/এএ