ঘুম থেকে উঠে আমরা প্রথমে হাতমুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা করার সময় সংবাদপত্র নিয়ে বসি। খুঁটে খুঁটে সংবাদপত্র পড়া শেষ করে মোবাইল নিয়ে বসি। সোশ্যাল মিডিয়ায় গতকাল দেয়া পোস্টে কত লাইক পড়লো সেটি দেখে নিই। অনেক সময় সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করি। আমি বা আমরা যে সোশ্যাল মিডিয়া ও ওয়েবসাইট এখন ব্যবহার করতে পারছি ঠিক একই সোশ্যাল মিডিয়া ও ওয়েবসাইট পৃথিবীর একাধিক দেশের মানুষ ব্যবহার করতে পারছে না। চলুন জেনে নিই সেই দেশগুলোর সম্পর্কে: 

১. তুরস্কে নিষিদ্ধ উইকিপিডিয়া 

২০১৭ সাল থেকে আঙ্কারা কর্তৃপক্ষ উইকিপিডিয়া নিষিদ্ধ করে। উইকিপিডিয়ার প্রকাশক সংস্থা উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন সিরিয়া যুদ্ধে সন্ত্রাসীদের প্রতি তুরস্কের সমর্থনের ব্যাপারে লেখা প্রত্যাহারের আবেদন প্রত্যাখ্যান করার কারণে দেশটিতে উইকিপিডিয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তবে উইকিপিডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, তুরস্কের রাষ্ট্রীয়ভাবে সিরিয়া যুদ্ধে সন্ত্রাসীদের সমর্থন দেয়ার বিরুদ্ধে তুরস্কের কিছু মানুষ উইকিপিডিয়ায় লিখেছিলো। 

২. রাশিয়ায় নিষিদ্ধ জেডব্লিউ ডট ওআরজি 

সন্ত্রাসী সমর্থন ও রাষ্ট্রবিরোধী কনটেন্ট প্রকাশের কারণে জেডব্লিউ ডট ওআরজি বা জেহোভাস উইটনেস ওয়েবসাইট রাশিয়ায় ব্লক করে দেয়া হয়েছে এমন দাবি করে আসছে দেশটির সরকার। ব্লক করার আগে কয়েক বছর ধরে ওয়েবসাইটটি পর্যবেক্ষণ করে আসছিলো মস্কো কর্তৃপক্ষ। 

৩. আরব দেশে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল সার্ভিস বন্ধ 

সৌদি আরব, কাতার, মরক্কো ও সংযুক্ত আরব আমিরাত- এই তিন দেশের সরকার জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্কাইপ, লাইন, ভাইবার এবং ফ্যাকটাইম ব্লক করে রেখেছে। অন্যদিকে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাট বন্ধ রয়েছে। 

৪. ভিমিও নেটওয়ার্ক নেই ইন্দোনেশিয়ায় 

২০০৮ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ায় ভিমিও নেটওয়ার্কসহ ১১৯টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়। ভিমিও নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার কারণ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার সরকার নারীদের নিয়ে উসকানিমূলক পোস্ট দেয়ার অভিযোগ দেখায়। 

৫. ইরানে টেলিগ্রাম ও ইন্সটাগ্রাম নেই 

২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইরানের সরকারবিরোধী কনটেন্ট পোস্ট করার অভিযোগে ইন্সটাগ্রাম ও টেলিগ্রাম ব্লক করে দেয় তেহরান কর্তৃপক্ষ। ইরানের অধিকাংশ লোক সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ টেলিগ্রাম ব্যবহার করে থাকে। ব্লক করার আগে ইরান টেলিগ্রামকে তাদের সরকারবিরোধী কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষ তা করতে অসমর্থ হওয়ায় ইরান তা ব্লক করে দেয়। 

৬. আরকাইভ ডট ওআরজি নেই রাশিয়ায় 

সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটসের একটি প্রপাগান্ডা ভিডিও দেখানোর অভিযোগে রাশিয়ার আদালত সাইটটি ব্লক করার রায় দেয়। সেই সঙ্গে ভিডিওটিও সেন্সর করে দেয়া হয়। এছাড়া ভিডিওটি অন্তত ৪০০টি ওয়েবসাইটে দেখতে পেয়েছে মস্কো কর্তৃপক্ষ। 

৭. চীনে নিষিদ্ধ সোশ্যাল মিডিয়া 

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুক, টুইটার ও ইন্সটাগ্রামসহ প্রায় সব কটি নিষিদ্ধ দেশটিতে। গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশেষ করে বেইজিং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর গণনিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রয়েছে। 

৮. রাশিয়ায় নিষিদ্ধ টেলিগ্রাম, অ্যামাজন ক্লাউড ও গুগল ক্লাউড 

২০১৮ সালের এপ্রিলে রাশিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যামাজন ও গুগল ক্লাউড ব্লক করে দেয়। এসময় মস্কো কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করতে থাকে সন্ত্রাসীরা এই দুই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা করতে পারে। এর আগেও সন্ত্রাসীরা এই দুই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা করেছিলো। তবে রাশিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম সরাসরি নিষিদ্ধ করেনি। কারণ গুগল ও অ্যামাজনের সার্ভার ব্যবহার করায় পরোক্ষভাবে রাশিয়া টেলিগ্রামও নিষিদ্ধ করে। 

লিস্টভার্স ডট কম অবলম্বনে এইচএকে/এইচএন