প্রায় ১৫ বছর ধরে গুগল সার্চ ইঞ্জিন এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে এই দু’টোই ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।

চলতি সপ্তাহে বিচার বিভাগ গুগলের বিরুদ্ধে তাদের অনলাইন বিজ্ঞাপন ব্যবসায় অবৈধ একচেটিয়া আধিপত্য চালানোর অভিযোগ এনে এর কিছু অংশ সরিয়ে ফেলার আহবান জানিয়েছে। অনৈতিক অনুসন্ধানের কারণে প্রযুক্তি জায়ান্টটির দাপটের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন একই ধরনের মামলা দায়ের করেছিল।

যদিও মামলাগুলো গুগলের আয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, কিন্তু এইগুলো  কার্যকর হতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। এর মধ্যেই গুগল আরো বিশাল দুটি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। একটি হলো জেনেরেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্যটি হলো অনলাইন মার্কেট শেয়ারের হ্রাস।

আরও পড়ুন> জুনায়েদের গুগলে চাকরি পাওয়ার গল্প

গুগল দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন অনুসন্ধানের জন্য জনপ্রিয় ছিল। প্রথম আধুনিক প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি ছিল গুগল।

কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে একটি নতুন হুমকি দেখা দেয়। যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা সংস্থা ওপেনএআই প্রকাশ্যে চ্যাটজিপিটি নামে একটি ভাইরাল নতুন এআই চ্যাটবট প্রকাশ করে।

চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীরা কবিতা, আইনি নথির খসড়া তৈরি, কোড লেখা এবং জটিল আইডিয়া ব্যাখ্যা করার জন্য বটটির সাহায্য নিতে পারবে। চ্যাটজিটিপি অনেক ডাটা দ্বারা প্রশিক্ষিত।

জিমেইলের অন্যতম নির্মাতা পল বুচেইট গত বছর টুইট করেছিলেন, গুগল শেষ হয়ে যেতে আর এক বা দুই বছর সময় লাগবে। এআই গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের জায়গা দখল করে নেবে,গুগলের মূল উপার্জনের বেশিরভাগই এটি উপর নির্ভর করে।

যদি আরও বেশি ব্যবহারকারী তাদের তথ্যের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভর করতে শুরু করে, তবে এটি গুগলের অনুসন্ধান ব্যবসাকে হ্রাস করতে পারে। যা কোম্পানির ১৪৯ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সেগমেন্টের অংশ। চ্যাটজিপিটির মিডিয়া কভারেজ এই চিন্তাকে দ্বিগুণ করেছে, কিছু আউটলেট হেড-টু-হেড পরীক্ষায় গুগলের বিরুদ্ধে চ্যাটজিপিটিকে তুলে ধরেছে।

আরও পড়ুন> চ্যাটজিপিটির ব্যাপক সাড়া, এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছে গুগল

তবে, গুগল একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্কেলে কাজ করে। ট্র্যাফিক বিশ্লেষণ ওয়েবসাইট সিমারওয়েব অনুসারে, নভেম্বরে গুগলের ওয়েবসাইটটি ৮৬ বিলিয়নেরও বেশি ভিজিট পেয়েছে, যেখানে চ্যাটজিপিটির জন্য ৩০০ মিলিয়নেরও কম ভিজিট হয়েছে।

গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই বলেছেন, যদিও গুগলের চ্যাটজিপিটির মতো সক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু ভুল তথ্য সরবরাহের ঝুঁকির কারণে সংস্থাটি এখনও এআই-উৎপাদিত অনুসন্ধান প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না, কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদে গুগলের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে।

তবে মার্কেটে গুগল নতুন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হওয়ায় এই পতন আসতে পারে। অ্যামাজন, টিকটক এবং এমনকি অ্যাপল সহ প্রতিদ্বন্দ্বীরা ডিজিটাল বিজ্ঞাপন মার্কেটকে আকর্ষণ করছে।

ফলে গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যবসা এখনও বিশাল তবে ক্রমবর্ধমান প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তবে জেনারেটরি এআই সম্পর্কে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী যদি বাস্তবায়িত হয় এবং বিচার বিভাগের মামলাগুলো যদি শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে গুগলের দখলকে দুর্বল করে দেয় তবে গুগলের বিপত্তি আরও বেড়ে যেতে পারে।