২০১১ সাল থেকে নিউইয়র্কের বাসিন্দা নাইডেলিন মেজিয়া ফেসবুক ব্যবহার করছেন। ২২ বছর বয়সী এই তরুণী বলেন, ‘আমি তখন অবধি নিয়মিতভাবে টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার শুরু করিনি। তবে প্রতিদিন ফেসবুক ব্যবহার করতাম ও মেসেঞ্জারে টেক্সট করতাম।’ 

কয়েক বছর পরে তিনি ফেসবুকের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। তখন থেকে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার শুরু করেন এবং তার বেশিরভাগ বন্ধুই সোশ্যাল মিডিয়া ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে তিনি একদম লগইন করেন না।’ উল্লেখ্য, তিনি এখন অবধি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেননি। 

ফেসবুকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে তিনশো কোটিরও অধিক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন এবং ফেইক অ্যাকাউন্টসহ প্রায় ২৬০ কোটি ব্যবহারকারী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি প্রতিদিন লগইন করেন। বিশ্বে এখনো ৪০ কোটি মানুষ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন না। 

২৬ বছর বয়সী তাহমিনা ওসমাঞ্জাই নিউইয়র্কে বসবাস করেন। তিনি ২০১০ সালে থেকে ফেসবুক ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে আমি খুব একটা আনন্দ পাচ্ছি না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইলে ব্যবহার করার সময়ে এটি আমার জন্য বিরক্তিকর। কম্পিউটারে ব্যবহার করার সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এটি ধীরগতিতে চলে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি ফেসবুকের বিকল্প হিসেবে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার শুরু করেছি এবং এখানেই বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছি। বিশেষ করে ফেসবুক থেকে মেসেঞ্জার অ্যাপ আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকে এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে থাকি।’ 

নিউইয়র্কে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী তরুণী আলেক্সান্দ্রা কুর্কস ২০০৮ সালে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। কিন্তু তিনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটির ব্যবহার আমি কমিয়ে দিচ্ছি।’ 

বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই ধীরে ধীরে ফেসবুক ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু কেউ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দিতে চাইছেন না। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা যায়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ইন্টারনেটের ডিএনএ হিসেবে সমাদৃত হচ্ছে। ফেসবুকের মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হওয়ায় এটি ডিলিট করে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। 

ফেসবুকের প্রতি নির্ভরশীলতা

ফেসবুকের ব্যাপারে বিরক্ত হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহারকারীরা অতিমাত্রায় এর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এর মাধ্যমে জন্মদিন, বিবাহের দিনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিন মনে রাখতে পারেন তারা। এ কারণে ধীরগতির হওয়া সত্ত্বেও ফেসবুকের প্রতি ব্যবহারকারীদের নির্ভরশীলতা অনেক বেড়ে যাচ্ছে এবং অ্যাকাউন্ট ডিলিট করতে চাইছেন না ব্যবহারকারীরা। 

অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ফেসবুকের সংশ্লিষ্টতা

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের সঙ্গে অন্যান্য মাধ্যমের সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট ডিলিট করতে পারছেন না ব্যবহারকারীরা। কারণ অন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে সাইনআপ করার সময় ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ২০১২ সালে হোয়াটসঅ্যাপ ও ২০১৪ সালে ইনস্টাগ্রামের মালিকানা কিনে নেয়ার পর থেকে ফেসবুকের সঙ্গে এই দুই অ্যাপ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। সুতরাং ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে এসব প্ল্যাটফর্মের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। 

মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রামের মতো ফেসবুক মালিকানাধীন অ্যাপ

মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপ ব্যবহার করতে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগইন করে রাখা দরকার। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগইন করে না রাখলে এসব অ্যাপ ব্যবহার করা যায় না। আর সে কারণে ব্যবহারকারীরা সোশ্যাল মিডিয়াটি অপছন্দ সত্ত্বেও ডিলিট করে দিতে চাইছেন না। 

বন্ধুত্ব ছিন্ন করতে চান না অনেক ব্যবহারকারী

২০১৫ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ফেসবুক বা টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। কুর্কস বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুরা যেসব ছবি প্রকাশ করা হয় সেসব ছবিতে লাইক কমেন্টস ও শেয়ার করতে করতে আমাদের সময় কেটে যায়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেও অবসর সময় কেটে যায়। এ কারণে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেয়া সম্ভব হয় না।’ সুতরাং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় যাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, অফলাইনে তাদের যোগাযোগ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। 

অবসরের খোরাক যোগায় ফেসবুক

এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা কেবলমাত্র অবসরের বিনোদনের জন্য ফেসবুক ব্যবহার করেন। আর এ কারণে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দিতে চান না অনেক ব্যবহারকারী। ওসমাঞ্জাই বলেন, এক দশক ধরে ফেসবুকে নিজেকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন তিনি। তখন ‘কোনো কারণে অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করা হলে’ ভালো লাগতো না। তিনি বলেন, ছবিতে অন্য বন্ধুদের ট্যাগ করতে তার অনেক ভালো লাগে এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। 

প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হয় ফেসবুক

সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হওয়ার কারণে অনেকে অ্যাকাউন্ট মুছে দিতে পারেন না। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ফলে কিংবা বিভিন্ন কোম্পানি অনলাইনে মিটিং ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ফলে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিতে পারেন না ব্যবহারকারীরা। 

সূত্র: ম্যাশেবল।

এইচএকে/এএ