আইফোনের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আসলে কী? যেভাবে ব্যবহার করবেন
সম্প্রতি অ্যাপল তাদের বহুল আলোচিত স্যাটেলাইট প্রযুক্তিসহ আইফোন ১৪ সিরিজ উন্মুক্ত করেছে। বলা হচ্ছে, জরুরি মুহূর্তে প্রচলিত নেটওয়ার্কের বাইরে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে সেলুলার বা টাওয়ারভিত্তিক নেটওয়ার্ক এমন কি ওয়াই-ফাই পাওয়ার নেই, সেসব ক্ষেত্রে এসওএস পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে।
স্মার্টফোনে এই প্রযুক্তি অ্যাপলই প্রথম ব্যবহার করছে। এরআগে আরও কয়েকটি স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট প্রযুক্তি সংযুক্তির ঘোষণা দিলেও তাদের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সে ক্ষেত্রে অ্যাপল অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জরুরি মুহুর্তে এসওএস প্রযুক্তি যেভাবে কাজ করবে
অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যদি অপ্রত্যাশিত এমন কোনো মুহুর্তে তৈরি হয় বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, যখন স্মার্টফোনে সেলুলারভিত্তিক নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, তখন আইফোন ১৪ সিরিজের ফোনগুলো আপনাকে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দেবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে টেক্সট ও জরুরি কল করা সম্ভব হবে।
অ্যাপল তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সাপোর্ট ক্যাটাগরিতে এ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আপনি যখন স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন, তখন আপনার অভিজ্ঞতা স্বাভাবিক ভাবেই সেলুলার নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার মতো হবে না। এই প্রযুক্তির যোগাযোগ কিছুটা সময়সাপেক্ষ ও জটিল।
অ্যাপলের দেওয়া তথ্য মতে, আপনার অবস্থান যদি পরিষ্কার আকাশে নিচে হয় এবং সেই মুহুর্তে আপনি প্রচলিত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার বাইরে থাকেন, তখন স্যাটেলাইটের সঙ্গে আইফোন ১৪ সংযুক্ত করার সুযোগ পাবেন। সহজ করে বললে, পরিষ্কার আকাশ, সামনে উঁচু পাহাড় বা অধিক পাতাযুক্ত গাছ না থাকলে সহজেই আইফোনে স্যাটেলাইট যুক্ত হবে। স্মার্টফোনটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত হতে কত সময় নেবে, সেটা নির্ভর করছে আপনার অবস্থান ও পরিবেশের ওপর।
এছাড়াও স্বচ্ছ আকাশ থাকলে স্যাটেলাইটে যুক্ত হয়ে কোনো টেক্সট পাঠালে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছবে। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে অ্যাপল তাদের আইওএস ১৬ আনছে। সেখানে এ প্রযুক্তির আরও উন্নয়ন করা হবে।
এসওএস যেভাবে ব্যবহার করবেন
আগেই বলা হয়েছে, যখন সেলুলার প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক বা ওয়াইফাইয়ের কভারেজ এরিয়ার বাইরে থাকবেন, তখন আইফোনের মাধ্যমে জরুরি মুহূর্তে টেক্সট বা কল করা যাবে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে আপনার আইফোনে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। চলুন জেনে নিই-
প্রথমেই আপনার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকান। সেখানে প্রদর্শিত ‘কানেক্ট টু অ্যা স্যাটেলাইট’ এ ক্লিক করুন। এ জন্য প্রথমেই আপনার ফোন পকেট থেকে বের করতে হবে। তবে প্রতিনিয়ত যেভাবে ফোনটি ধরে কাজ করেন, সেভাবে ধরলেই হবে। আলাদা কোনো পজিশনে যেতে হবে না। একই সঙ্গে নিশ্চিত হতে হবে, আপনার অবস্থান পরিষ্কার আকাশের নিচে।
অবস্থার গতিবিধি দেখে, যদি আপনার অবস্থান পরিবর্তনের দরকার হয়, তাহলে আইফোন সে অনুসারে গাইডলাইন দেবে। অর্থাৎ আপনাকে কতটুকু ডানে বা বামে যেতে হবে, তা স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে। একবার স্যাটেলাইট কানেকটেড হলে, ফোন লকড হওয়ার পরেও সেটা চলমান থাকতে হবে।
স্যাটেলাইট ব্যবহার করে জরুরি মুহূর্তে টেক্সট করাও যাবে। প্রথমে কল করার চেষ্টাও করতে পারে। তবে স্যাটেলাইটে সংযুক্ত হওয়ার পর কল করা না গেলে টেক্সট পাঠাতে পারবেন। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেক্সট পাঠাতে ১৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
* প্রথমে ফোনের ইমার্জেন্সি টেক্সট ভায়া স্যাটেলাইট অপশনে ক্লিক করুন।
* এরপর জরুরি টেক্সট পাঠানোর অপশন পাবেন।
* এছাড়াও আপনি টেক্সট এর মাধ্যমে আপনার বর্তমান অবস্থান ও লোকেশন পাঠাতে পারবেন।
* এ ক্ষেত্রে আপনাকে স্কিনে প্রদর্শিত নির্দেশনা অনুসারে কাজ করতে হবে।
ফোনে একবার স্যাটেলাইট কানেক্ট হলে ইমার্জেন্সি রেসপন্ডার্স দলের সঙ্গে টেক্সট কনভারসেশন করা যাবে। এমনকি তাদেরকে আপনার মোবাইলে ব্যাটারির লাইফ, মেডিকেল আইডি বা জরুরি কন্টাক্ট নম্বর প্রদান করা যাবে
এসব ছাড়া প্রয়োজন অনুসারে ইমার্জেন্সি রেসপন্ডার্স দলের সঙ্গে যেকোনো কথা বলা যাবে। তবে ইংরেজি বা ফ্রেঞ্চ এই ভাষায় সুবিধাটি পাওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসকারীরা এই সেবা পাবেন।
স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য আপনার কাছে অবশ্যই আইফোন ১৪ সিরিজের স্মার্টফোন থাকতে হবে। এবং সেসব ফোনে অবশ্যই অ্যাপলের আইওএস এর সর্বশেষ সংস্করণ ১৬ থাকতে হবে। যা চলতি বছরের নভেম্বরে বাজারে আসছে।
প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসকারী ও এসব দেশে ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকরাও এই সুবিধা পাবেন। তবে যেসব আইফোন চীনের মূল ভূখণ্ড বা হংকং থেকে কেনা, সেসব আইফোনে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সেবা প্রদান করা হবে না।
আরআর