নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র : ভাবসম্প্রসারণ (৫ম পর্ব)
সুপ্রিয় নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নির্মিত অংশ থেকে আরো দু’টি ভাবসম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব। বোর্ড পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে ভাবসম্প্রসারণে সাধু ও চলিত ভাষার সংমিশ্রণ ঘটাবে না। ভাবসম্প্রসারণে উদাহরণ, উপমা, তুলনা, কোটেশন দিতে পারো, তবে উত্তর দীর্ঘায়িত করার জন্য একই কথা বারবার না লেখাই ভালো।
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন
বিজ্ঞাপন
নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন
ভাবসম্প্রসারণ : গ্রন্থগত বিদ্যা যা আত্মস্থ করা হয়নি এবং অন্যের ধন যা স্বীয় করায়ত্ত হয়নি এ সমস্তই নিরর্থক। কারণ প্রয়োজনীয় মুহূর্তে এগুলো যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তখন ঐ সময় কষ্ট ভোগ করতে হয়।
পৃথিবীতে মানুষের জীবনে ধন-সম্পদ ও বিদ্যার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু বিদ্যা যদি গ্রন্থের ভেতরেই মলাটবদ্ধ হয়ে নির্জীব পড়ে থাকে, মানুষ যদি তা আত্মস্থ না করে কিংবা আত্মস্থ করে চলমান জীবনপ্রবাহে কাজে লাগাতে না পারে, তবে সে বিদ্যা মূলত কোনো বিদ্যাই নয়। মলাটবদ্ধ নির্জীব বিদ্যাকে মুক্ত করে এনে মানুষের আত্মকে পরিশুদ্ধ করতে হয়। তবেই সে বিদ্যা পৃথিবীর মানুষের মঙ্গলার্থে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে- ভারতের ‘থ্রি ইডিয়ডস’চলচ্চিত্রে আমির খান প্রতীকীরূপে ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে ভালোভাবে আত্মস্থ করার মাধ্যমে লেখাপড়া করে পরবর্তী সময়ে সে একটা ভালো চাকুরি পেয়েছে। কিন্তু তার দুই বন্ধু মা-বাবার প্রেসারে জোর করে ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে পড়তে এসে তেমন ভালো করতে পারেনি। আর চাতুর নামে একবন্ধু সে শুধু না বুঝে মুখস্ত করায় তার আরো খারাপ ফলাফল হয়। অন্যদিকে নিজের অর্জিত ধনসম্পত্তি যদি অন্যের কাছে রক্ষিত থাকে, তবে প্রয়োজনের সময় রক্ষিত সম্পত্তি উদ্ধার করাও অনেক সময় প্রকট সমস্যা হয়। কেননা নিজের কাছে রক্ষিত ধনসম্পত্তিই প্রয়োজনমাত্র মানুষ ব্যবহার করতে পারে। সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের প্রয়োজনে বিদ্যাকে গ্রন্থের বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে আত্মস্থ করতে হবে, পরের হাতে সংরক্ষিত সম্পত্তিকে নিজের করায়ত্ত করতে হবে। বিদ্যা ও ধনসম্পদ যখন মানুষের যথার্থ প্রয়োজন মেটায় তখনই তার সার্থকতা। কিন্তু মানুষের যথার্থ প্রয়োজনের সময় যদি তা কাজে লাগানো না যায় তবে সেই বিদ্যা ও অর্থ-সম্পদের কোনো মূল্য নেই।
গ্রন্থগত বিদ্যা এবং পরহস্তের ধন জীবনের প্রয়োজনীয় সময়ে অব্যবহৃত থাকে বিধায় এগুলো প্রকৃতপক্ষে কোনো বিদ্যা বা ধন নহে। এ বিদ্যা এবং ধনকে মানুষের নিজস্ব সম্পদ হিসেবে অর্জন করতে হবে। আর বাস্তব জীবনে সেটা প্রায়োগও করতে হবে।
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
ভাবসম্প্রসারণ : কাজই মানুষের পরিচয়কে ধারণ করে। তাই মুখে বড় বড় কথা বলার পরিবর্তে কাজে মনোনিবেশ করলে দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত হবে।
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা অনেক কথা বলতে ভালোবাসে কিন্তু কাজের সময় ফাঁকি দেয়। আবার অন্যের সমালোচনা করার বেলাতেও তারা অত্যন্ত পটু। এসব মানুষ সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তারা সভ্যতার বিকাশে কোনো ভূমিকা রাখে না বরং এর অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। নিজে কাজ করলে এবং অন্যের কাজে সহায়তা করলে আমাদের দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। বিশ্বের সব দেশেই শ্রমকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়। মহামানবদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়, তাঁরা কর্ম ও নিষ্ঠা দিয়ে পৃথিবীতে নিজেদের নাম স্মরণীয় করে রেখেছেন। এখন থেকে চার দশকেরও অধিক সময় আগে নিল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও এডউইন অলড্রিন এই তিনজন মানুষ ঐকান্তিক সাধনা, নিরলস শ্রম ও কঠোর অধ্যবসায়ের ফলে চাঁদে অবতরণ করতে পেরেছিলেন। এই দুঃসাহসী কাজের জন্য তাঁরা আজও মানুষের কাছে বরণীয় হয়ে আছেন। এই কাজের মধ্য দিয়ে তাঁরা বিজ্ঞানকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদেরও উচিত তাঁদের পথকে অনুসরণ করে ভালো ও পুণ্যকর্ম করে নিজের, পরিবারের তথা দেশের মুখ উজ্জ্বল করা।
অর্থহীন কথা পরিহার করে কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াতেই নিজের ও দেশের উন্নতি নিশ্চিত করা যায়। তাই আত্মঅহংকার পরিত্যাগ করে কাজ ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হবে।
এমকে