ফাইল ছবি

সুপ্রিয় নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নির্মিত অংশ থেকে দু’টি ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব। পরীক্ষায় বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের ভাব-সম্প্রসারণে বেশি নম্বর পেতে মূল ভাব ঠিক রেখে সঠিক বানানে উত্তর লিখবে ও বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি দেবে। ভাব-সম্প্রসারণ তিনটি প্যারায় লিখবে।

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।

ভাব-সম্প্রসারণ : যে কোনো জাতির জীবনে স্বাধীনতা সূর্যকে ছিনিয়ে আনা কষ্টকর এবং তার চেয়েও কষ্টকর ঐ স্বাধীনতা রক্ষা করা।

স্বাধীনতা মানুষের অমূল্য সম্পদ। কোনো মানুষই পরাধীনরূপে বেঁচে থাকতে চায় না। স্বাধীনতা অর্জন অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। তাই মানুষ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে, যুদ্ধ করে। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয় এবং অমুল্য জীবন বিসর্জনের মাধ্যমেই স্বাধীনতা আসতে পারে। কারণ স্বার্থমগ্ন শক্তিশালী বেনিয়া শাসকেরা সহজে কোনো জাতিকে স্বাধীনতা দিতে চায় না; বহু কষ্টে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমেই তা ছিনিয়ে আনতে হয়। স্বাধীনতা অর্জিত হলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না; তখন বিজয়ী জাতির সামনে আসে স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম। এ সংগ্রামে আরো বেশি ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শক্তি-সামর্থের প্রয়োজন হয়। কারণ স্বাধীন দেশের ভেতরে ও বাইরে শত্রুর অভাব নেই। এরা সুযোগের সন্ধানে তৎপর থাকে সর্বক্ষণ। এরা যে কোনো সময় সুযোগ পেলে হিংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। সুতরাং, এ ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল, মীরজাফরী চরিত্রের হিংসাত্মক দৃষ্টি থেকে দেশকে রক্ষার জন্য শক্তি ও বুদ্ধির প্রয়োজন। যদিও তাদের পরাভূত করা কঠিন ব্যাপার। যথেষ্ট দায়িত্ব সচেতন, সদা সতর্ক, নিবেদিত প্রাণ, দেশপ্রেমিক ও শক্তিশালী না হলে স্বাধীনতাকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। শিল্পী হায়দার আলীর কণ্ঠে ‘ত্রিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি’ গানের কথা ও সুর আমাদের  সে শিক্ষা দেয় ।

স্বাধীনতা রক্ষা করা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে কঠিন ও দুরূহ কাজ। তাই স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য সবাইকে প্রাণপণ চেষ্টা করা উচিত।

মানুষ বাঁচে তাহার কর্মের মধ্যে বয়সের মধ্যে নয়।

ভাব-সম্প্রসারণ :  অনন্ত কাল প্রবাহে মানুষের জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত এ সময়ে মানুষ মহৎ কর্মের মাধ্যমে মৃত্যুর পরেও স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে। সেখানে বয়স কোনো বিষয় নয়, কর্মই মূল বিবেচ্য বিষয়।

পৃথিবীতে যেসব মহৎ হৃদয় মানুষ মানবহিতৈষী-ব্রতে আত্মোৎসর্গ করেছেন, যাঁরা অন্যের দুঃখ মোচনের জন্য যথাসর্বস্ব ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যাঁরা হৃদয়ের মহত্ত্বে ও চরিত্রের ঔদার্যে মানুষকে মহৎ জীবনের সাথে পরিচালিত করেছেন, তাঁরা মানবজাতির কাছে চিরস্মরণীয় ও সদাবরণীয় হয়ে আছেন।  কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথা ধরা যাক। তিনি মাত্র ২০ বছর ৯ মাস ১৩ দিন এ নশ্বর পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর কবিতাসহ সৃজনশীল বিভিন্ন লেখার কারণে এখনও মানুষের মনের মধ্যে অমর হয়ে আছেন । আবার বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কবিতা, গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখে গেছেন। যার দ্বারা তিনিও মানুষের মনে অমর হয়ে আছেন। এভাবে দেশে বিদেশে অনেক কবি, সাহিত্যিক, নোবেল বিজয়ী, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, গবেষক, সমাজ সংস্কারক, খেলোয়াড় রয়েছেন যারা কেউ অল্প বয়সী আবার কেউ হয়তো সর্বোচ্চ ১০০ বছর জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাঁরা কেউই অল্প বয়স কিংবা বেশি বয়সের কারণে সুনাম অর্জন করেননি; বরং তাঁরা কল্যাণমূলক কর্মের কারণে অমর, অক্ষয়, অব্যয় হয়ে মানুষের মনে যুগ যুগ ধরে, শতাব্দী শতাব্দী ধরে কিংবদন্তি হয়ে কালজয়ী হন। তাই প্রসঙ্গত ইংরেজি প্রবাদটি প্রণিধানযোগ্য- ‘ Man does not live in years but in deeds.’

বয়স মানুষের জীবনের সার্থকতার মাপকাঠি নয়, মহৎ কীর্তির মাধ্যমেই মানুষের জীবন ও সার্থক ও সফল হয়।

শিক্ষক (বাংলা), আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা

এমকে