সানিয়া মির্জা। টেনিস র‌্যাকেট হাতে জিতেছেন একের পর এক শিরোপা। মাঠ মাতিয়েছেন বিশ্বের বড় বড় সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে। সোনালি সেই পথ চলা এবার থামার ক্রান্তিলগ্নে। চলতি মাসেই অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন এই টেনিস সুন্দরী। এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামও। পেছন ফিরে কীভাবে দেখছেন তিনি নিজের ক্যারিয়ার। ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক বোরিয়া মজুমদারের কাছে সানিয়ার স্মৃতিচারণে উঠে এলো আরও অনেক অজানা অধ্যায়। 

ধ্রবতারার মতো উত্থান। ছয়টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম, ৪১ টা ডাবলস জয়। অনেক সাফল্য, অনেক ইতিহাস। তারপর হঠাৎ করেই পথচলা থামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। সানিয়া মির্জার অবসরের ঘোষণা স্বাভাবিকভাবেই তাই মেনে নিতে পারছেন না অনেকে।

তবে নিজের অবসর নিয়ে কোনো খেদ নেই সানিয়ার। তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘আমি মাথা উঁচু করে টেনিসকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলাম। তাই মনে হলো, এটাই অবসরের ঠিক সময়। জানি, এখনও আমার বড় ম্যাচ জেতার ক্ষমতা রয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলেছি। আসলে আমি ওই পর্যায়ে খেলতে পছন্দ করি। এখনও কেন খেলা ছাড়ছি না, এটা শোনার থেকে ‘কেন খেলা ছাড়লেন’শোনা আমার কাছে অনেক বেশি তৃপ্তিদায়ক। বরাবর আমি কঠিন থেকে কঠিনতর চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেছি। তার জন্য পরিশ্রম, আত্মত্যাগ কম কিছু করতে হয়নি। সেই তাগিদটায় ঘাটতি আসুক চাইনি। তাই মনে হলো, এটাই খেলা ছাড়ার আদর্শ সময়।’

নিজের টেনিস যাত্রা, একের পর এক সাফল্য-এসব নিয়ে ভারতীয় এ টেনিস কিংবদন্তি বলেন, ‘যদি কেউ আমার কাছে আসে, আর তাকে ৩০ বছর আগে আমাদের পরিবার যেমন ছিল সেই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি, আমি নিশ্চিত, সে অবাক হয়ে যাবে। অবশ্যই এই টেনিস যাত্রা আমার নিজের কাছে খুব স্পেশাল। ছয়টা গ্র্যান্ড স্ল্যামকে যদি ১২ করতে পারতাম, আরও ভাল লাগত। আসলে জেতার ইচ্ছের কোনো শেষ নেই। এটাই স্পোর্টসের মজা। টেনিস আমায় প্রতিনিয়ত শিখিয়েছে। পরিণত করেছে। অনেক প্রাপ্তি জড়িয়ে রয়েছে টেনিসের হাত ধরে। এই টেনিসের মাধ্যমে অনেককে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছি, এটা ভেবেও ভালো লাগে। যে জায়গায় আজ আসতে পেরেছি, তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান টেনিসেরই।’

টেনিসে দু’হাত ভরে সফলতা পেয়েছেন। তবে এর জন্য পরিশ্রম আর আত্মত্যাগও কম কিছু করতে হয়নি। যেমন মা হওয়ার পর ২৬ কেজি ওজন কমাতে হয়েছিল। নিজেকে আত্মনির্ভরতা ও দৃঢ়তার প্রতিমূর্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন। এ সম্পর্কে সানিয়া বলেন, ‘আসলে ভেতরে ইচ্ছাশক্তি ছিল বলেই আমি পেরেছি। অন্য কোনো কারণ নয়। তবে মা হওয়ার পর কোর্টে ফেরাটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল আমার কাছে। গোটা বিশ্বের কাছে বিশেষ করে নারীদের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছি, মা হওয়া মানেই নিজের ক্যারিয়ারের শেষ নয়। তা হতে পারে না। বরং এটা নতুন একটা যাত্রা। সন্তানকে সঙ্গে নিয়েও জীবনের সেই লড়াইগুলো জেতা যায়। সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছি। চেয়েছি, প্রতিটি মা যেন একটু উৎসাহ পাক। সেই প্রাপ্তিগুলো আমার আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়। এই কারণে টেনিসকে আঁকড়ে ধরে এতটা পথ চলা।’

অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত, অনেক সাফল্য যা হয়তো স্মৃতিপটে থেকে যাবে চিরঅম্লান। তবে এর মধ্যে ২০১৫ উইম্বলডনের কথা বেশি মনে পড়ে সানিয়ার। বলেন, আমার মনে ভাসছে ২০১৫-র উইম্বলডনের কথা। ওটা আমার কাছে একটু আলাদা, স্পেশাল। উইম্বলডন জেতা যে কোনো টেনিস তারকার কাছে ভীষণ দামি একটা মুহূর্ত। সেটাই সেবার করতে চেয়েছিলাম। প্রথমবার উইম্বলডন ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছিল। আর ভারতীয় টেনিসের জন্য সেটা ছিল মাইলস্টোন। ম্যাচটা এখনও আমার চোখের সামনে ভাসে। এক সেটে পিছিয়ে ছিলাম। পরের সেট টাইব্রেকে জিতে সমতা ফিরিয়ে ছিলাম আমরা। তৃতীয় সেটে আবার পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে আমরা কামব্যাক করি। ২-৫ থেকে ৫-৫ করা, সহজ ছিল ন। অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল, কারণ নার্ভটা আমরা ধরে রেখেছিলাম। কারণ হাল ছেড়ে দেওয়ার মানুষ কখনও ছিলাম না। আজও নই।

সাক্ষাৎকারটি পশ্চিমবাংলার দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন থেকে সংগৃহীত।

এফআই