‘লাইফ সাপোর্টে’ শতবর্ষী ওয়ারী
বাংলাদেশ তো বটেই, উপমহাদেশের অন্যতম পুরোনো ক্লাব ওয়ারী। ১৮৯৮ সালে বিলুপ্ত ওয়েলিংটন ক্লাবের কয়েকজন কর্মকর্তা তখনকার সময়ে ঢাকার অভিজাত এলাকা ওয়ারীতে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। রায় বাহাদুর সুরেন্দ্র নাথ রায়কে এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়।
শতবর্ষ পার করা এই প্রাচীন ক্লাবটি এখন রীতিমতো অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, টেবিল টেনিস ও ভলিবল এই পাঁচ ডিসিপ্লিনে অংশ নিত ক্লাবটি। বছর পাঁচেক আগে ক্লাবের ক্রিকেট উইং বিলুপ্ত হয়; ফুটবল শীর্ষ স্তর থেকে দীর্ঘদিন আগে অবনমিত হয়ে দ্বিতীয়-তৃতীয় স্তরে ওঠানামা করছে, এবার হকিও প্রিমিয়ার থেকে প্রথম বিভাগে নেমেছে। ভলিবল ও টেবিল টেনিস এখনো টিকে আছে কিছুটা।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়ের বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ক্লাবটির নানা সংকট, ইতিহাস -ঐতিহ্যের পাশাপাশি তুলে ধরেছেন ভারতের ওয়ারী ক্লাবের কিছু চিত্রও।
সভায় হট্টগোল, মারামারির উপক্রম
ওয়ারী ক্লাবের সর্বশেষ নির্বাহী কমিটির সভা হয়েছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। সেই সভা ছিল বেশ উত্তপ্ত, হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল সেখানে। অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লাবের সভাপতি ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম সভা মুলতবি করে ক্লাব ত্যাগ করেন।
ঝামেলার সূত্রপাত সদস্যপদ অনুমোদন নিয়ে। সদস্যপ্রার্থীর তালিকা সভায় উত্থাপিত হয়। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে নির্বাহী সভায় সদস্য অনুমোদনের সংখ্যা ছিল বেশি। এই সংখ্যা বৃদ্ধি এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে এক পক্ষের প্রবল আপত্তি ছিল। এ নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা হয়। একেকজন একেকভাবে ব্যাখা দেন। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় সভাপতি সদস্যপদ প্রদান বিষয়ে ভোটাভুটির প্রস্তাব দেন। কার্যনির্বাহী কমিটি ৪২ সদস্যের। উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে ভোটাভুটিতে ১১ জন সদস্য নেওয়ার পক্ষে ভোট দেন। ৪ জন বিপক্ষে ভোট দেন। ২ জন ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন।
ভোটাভুটি হওয়ার পর আবার বিতর্ক শুরু হয়। ৪২ জন কমিটির মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ অনুপস্থিত। তাদের অনুপস্থিতিতে এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির এ এখতিয়ার রয়েছে কি না এ প্রশ্ন তোলেন একজন। ভোটাভুটি হওয়ার পর আবার এই প্রশ্ন কেন, এ নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় সভাপতি সভা মুলতুবি করেন।
ঢাকা জেলা প্রশাসক ও ওয়ারী ক্লাবের সভাপতি শহীদুল ইসলাম এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিষয়টি অর্ন্তদ্বন্দ্ব না বলে মতানৈক্য বলব আমি। এই ক্লাবটি অনেক পুরনো। ক্লাবের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা উভয় পক্ষেরই রয়েছে। আমি চেষ্টা করছি একটি সমঝোতা করার। একজন এডিসিও নিযুক্ত করেছি ক্লাবের প্রয়োজনে সহায়তা ও সমন্বয়ের জন্য।’
জেলা প্রশাসক আশাবাদী তিনি একটি মধ্যস্থতা করতে পারবেন, ‘জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালে অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। এ রকম অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। যেখানে দুই পক্ষকে মিলিয়ে একটি সুন্দর ব্যবস্থা করেছি। আশা করি, সবার সহযোগিতা ও আন্তরিকতা থাকলে এখানেও পারব।’
শতবর্ষী ওয়ারী ক্লাবের আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে এই ক্লাবের সভাপতি মনোনীত। যুগ যুগ ধরে ঢাকা জেলার প্রশাসক এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অনেক ক্রীড়াপ্রেমী জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করার পর ক্লাবের সঙ্গে আজীবন সদস্য হয়ে এখনো জড়িত আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সভায় ডিসির সঙ্গে এডিসিও উপস্থিত থাকছেন। এ বিষয়ে ক্লাবের অনেক সদস্য ইতস্তত বোধ করছেন। ইতোপূর্বে কোনো ডিসি নির্বাহী সভায় কোনো এডিসি নিয়ে আসতেন না।
নির্বাচন ও বাচ্চু-মোমিন গ্রুপ
ওয়ারী ক্লাবের নির্বাহী কমিটি দুই বছর মেয়াদী। ২০১৮ সালে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে। দুই বছরের কমিটি ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ। সামনে নির্বাচন। সর্বশেষ নির্বাহী কমিটির সভায় সদস্যপদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার মূলে নির্বাচন। এই সদস্যপদ অনুমোদন পেলে নির্বাচনে নতুন মেরুকরণ হবে। এতে এক পক্ষ এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
আবার অন্য পক্ষের দাবি, সর্বশেষ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২১৩ জন। গত তিন বছরে করোনা ও বার্ধক্যজনিত কারণে ৩০ জনের বেশি সদস্য প্রয়াত হয়েছেন। ক্লাবের স্বার্থেই এই শুন্যপদ পুরণ করা প্রয়োজন।
ওয়ারী ক্লাবে সদস্য পদ দুই ধরনের। সাধারণ সদস্য ও আজীবন। সাবেক খেলোয়াড় ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরই সাধারণ সদস্য করে থাকে ওয়ারী ক্লাব। আজীবন সদস্য হতে এক কালীন ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আজীবন সদস্যের মর্যাদা পান।
১৯৯৮ সালে ক্রীড়াঙ্গনে ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচনী প্রথা শুরু হয়। এর আগে থেকেই শতবর্ষী ক্লাব ওয়ারীতে ছিল নির্বাচনী চর্চা। নব্বইয়ের দশকে দুই প্যানেলে নির্বাচন হতো ওয়ারীতে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ওয়ারী ক্লাবের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক ছিলেন মাহমুদুর রহমান মোমিন ও সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু। তারা একাধিকবার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির। সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু একসময় মাহমুদুর রহমান মোমিনের শিষ্য থাকলেও নব্বই পরবর্তীতে এই দুই জনের দুটো বলয় তৈরি হয়। গত ত্রিশ বছর যাবৎ দুই গ্রুপই সক্রিয়। ২০১৫ সালে প্রয়াত হয়েছেন বাচ্চু আর সম্প্রতি মারা যান মোমিন। দুই জন প্রয়াত হলেও তাদের গ্রুপ এখন আরো বেশি সক্রিয়।
মোমিনের গ্রুপে নেতৃত্ব দেওয়া ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর মুহম্মাদ মনোয়ার আলী মনু বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই আমাদের মধ্যে দুটো পক্ষ। তবে বাচ্চু ভাই ও মোমিন ভাইয়ের মধ্যে কিন্তু সুসম্পর্ক ছিল। অনেক সময় তারা সমঝোতাও করেছেন। দুটো পক্ষ থাকলেও আমাদের ক্লাবের সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’
বাচ্চুর গ্রুপের নেতৃত্ব দেওয়া আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এটি আসলে অনেক দিন থেকেই হয়ে আসছে। তারা দুজন বিষয়টি সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন আমাদের মধ্যে মাঝে মাঝে বিষয়টি একটু প্রকাশ্য হয়ে যাচ্ছে। তবে ক্লাবের স্বার্থে আমাদের ঐক্য রয়েছে। নির্বাচন আমাদের ক্লাবের একটি সুন্দর সংস্কৃতি।’ নিজেদের মধ্যে সমস্যায় ক্লাব যে পিছিয়েছে তা স্বীকার করলেন ক্লাবের এখন অন্যতম সিনিয়র সদস্য ও বর্তমান কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি মনু, ‘আমাদের মধ্যে ঐক্যটা আরো সুদৃঢ় থাকলে আরো বেশি উন্নতি হতো ক্লাবটির। এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’
৯৮ সালে মনু নিজেই সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন সমঝোতার ভিত্তিতে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একমাত্র ক্রিকেটার কাইয়ুম রেজা চৌধুরিই সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সেই কাইয়ুম রেজাই সর্বশেষ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে হেরেছেন অনুর কাছে। ফেডারেশনগুলোর নির্বাচনের মতো এখানেও অর্থের ছড়াছড়ি ছিল বলে মন্তব্য ক্লাব সংশ্লিষ্ট অনেকের।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নানাবিধ চাপে সর্বশেষ নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম অনু পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুসারে যুগ্ম সম্পাদক (ক্রীড়া) মহিদুর রহমান মিরাজ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই ভার বইছেন প্রায় দুই বছরের কাছাকাছি। বর্তমান কমিটির ৪২ জনের মধ্যে ৪০ জনই বাচ্চুপন্থি। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাচ্চু পন্থি হয়েও অনেক কিছুই করতে হচ্ছে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে। ক্লাবে ৪২ সদস্যের কমিটি থাকলেও অর্থ নির্বাহের বিষয়টি মূলত সাধারণ সম্পাদককেই দেখে আসতে হয় যুগের পর যুগ। আর্থিক বিষয়ে ওয়ারী ক্লাব সব সময় স্বচ্ছ বলে দাবি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের, ‘আমাদের ক্লাবে যে অর্থ আসে এর প্রায় সবই চেক-এর মাধ্যমে আসে। সাধারণ সম্পাদক অর্থ আনলেও এর খরচটা হয় বিভাগীয় সম্পাদকের চাহিদাপত্র অনুসারে এবং খরচের ক্ষেত্রে কয়েক জনের স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় অডিট হয় নিয়মিত।’ এত নিয়মতান্ত্রিকতার পরও ক্লাবের আর্থিক বিষয়ে অনিয়মের কানাঘুষা রয়েছে।
পাতানো ম্যাচে জড়িত থাকার অভিযোগে এই ক্লাবের কয়েকজন কর্মকর্তা বাফুফে ও এএফসি থেকে শাস্তি পেয়েছিলেন। ওয়ারী ক্লাবের সাথে পাতানো ম্যাচের সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানিয়েছিলেন ওয়ারী ক্লাবেরই এক সদস্য। বিষয়টিকে ক্লাবের একটি পক্ষ অর্ন্তদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখে।
ক্যাসিনো না করেও সংকটে ওয়ারী
মতিঝিল ক্লাবপাড়ার কয়েকটি ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালিত হতো। ওয়ারী ক্লাবের গা ঘেঁষেই ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডানে ক্যাসিনো চললেও ওয়ারী ছিল ক্যাসিনোমুক্ত। ক্যাসিনোমুক্ত থাকলেও ক্যাসিনো অভিযানের ধাক্কা এসে লেগেছে এই ক্লাবের গায়ে।
ক্যাসিনো অভিযানের পর ক্লাব পাড়ায় সব ধরনের কার্ড ও হাউজি খেলা স্থগিত আছে। এর আগে ক্লাবের সদস্যরা নিজেদের অবসর সময় কাটাতে সন্ধ্যায় কার্ড খেলতেন। সপ্তাহে এক দিন হাউজি হতো। যার মাধ্যমে ক্লাবের মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় হতো। যা দিয়ে ক্যাম্প খরচ, ক্লাবের স্টাফদের বেতনভাতা নির্বাহ হতো। ক্যাসিনো কান্ডের অভিযানের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে এখন সকল ধরনের আভ্যন্তরীণ খেলা বন্ধ। এতে ক্লাবের আয় একদম নেই। ফলে কঠিন আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষী ক্লাবটি।
‘আমাদের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোতে সরকারি-বেসরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তি ও সংগঠকদের অনুদানে দল গঠন করা হয়। ক্লাবের দৈনন্দিন কিছু ব্যয় রয়েছে। কার্ডের অনুমতি না থাকায় এখন একদম আয়শুন্য ক্লাব। ফলে ক্লাবের নির্বাহী কমিটির উপর আরো অধিক চাপ পড়ছে। এভাবে ক্লাব পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে ’ বলছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাঝে চুপিসারে ক্লাবে কার্ড খেলা পুনরায় চালু হয়েছিল। ক্লাবের সদস্যদের মধ্যেই এক পক্ষ পুলিশকে অবহিত করে। পুলিশ ক্লাবে এসে সতর্ক করে দেয়। এক পক্ষের দাবি, সেই সময় ক্লাবের কয়েকজন কর্মকর্তা দেয়াল টপকে পালিয়েছিলেন। তবে এটিকে অতিরঞ্জিত বলে আখ্যায়িত করেছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
বিলুপ্ত ক্রিকেট, হকিতে অবনমন, ফুটবলে ওঠানামা
দেশের তিন জনপ্রিয় খেলা যথাক্রমে ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি। এই তিন ডিসিপ্লিনের কোনটিতেই ভালো অবস্থানে নেই শতবর্ষী ওয়ারী ক্লাব। ক্রিকেটে এক সময় প্রিমিয়ারে খেলত। ক্রমান্বয়ে অবনমিত হতে হতে বছর পাঁচেক আগে ক্রিকেট একেবারে বাদ হয়ে যায় ক্লাবের খেলার তালিকা থেকে। অথচ এই ক্লাবে খেলেছেন গুরুগে, সামারাসেকারার মতো তারকা বিদেশি ক্রিকেটাররা।
আশির দশকে ওয়ারী ক্রিকেট দলের ম্যানেজার থাকা পারভেজ শামসুদ্দিন ক্রিকেট বিলুপ্ত হওয়ার পেছনে দু’টো কারণ ব্যাখ্যা করলেন, ‘প্রথমত আমাদের ক্লাবের সাংগঠনিক ব্যর্থতা। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের ক্রীড়া সংস্কৃতিতে সিসিডিএম ও বোর্ডের কিছু বিষয় থাকে। সেখানে ওয়ারী ক্লাব ঠিক মতো তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি।’ ক্রিকেট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান কাইয়ুম রেজা চৌধুরি অবশ্য একটি বিষয় সরাসরিই বলে দিলেন, ‘অনেক বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়েছে ওয়ারী।’
ওয়ারী ক্রিকেট একটা পর্যায়ে খেললেও এই ক্লাবের মূল দৃষ্টি ছিল ফুটবল ও হকিতে। কারণ, ক্লাবের শীর্ষ সংগঠকরা এ দুই খেলার মধ্য থেকেই আসতেন। ২০০৬-১৩ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু। ওই সময়ে ক্রমান্বয়ে বাজে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছিল ক্রিকেট। পরবর্তীতে শহীদুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক থাকাবস্থায় ক্রিকেট একেবারে বিলীন হয়ে যায়।
হকিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কখনো লিগ চ্যাম্পিয়ন না হলেও ভাষা শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে শিরোপা জেতার রেকর্ড ছিল ওয়ারীর। প্রিমিয়ার লিগে ওয়ারীর একটা মাঝামাঝি অবস্থান ছিল সব সময়। সেই প্রিমিয়ারে অবস্থান অনেকটা খুইয়েছে শতবর্ষী ক্লাবটি। এবার রেলিগেটেড হয়ে প্রথম বিভাগে নেমেছে ওয়ারী। ওয়ারীর সাবেক খেলোয়াড় ও হকি কমিটির সম্পাদক নাজিরুল ইসলাম ক্লাবের দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়ী করেছেন এজন্য, ‘যারা বছরের পর বছর ক্লাবের হকি দলের সঙ্গে জড়িত। তাদের এবার সম্পৃক্ত করা হয়নি।’
এবার হকি দলের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক হকি খেলোয়াড় আব্দুল্লাহ পিরু। তার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মহিদুর রহমান মিরাজের ব্যাখ্যা, ‘এই কমিটিগুলো আনু ভাই সাধারণ সম্পাদক থাকাবস্থাতেই করা। এখানে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের কোনো এখতিয়ার নেই’। দুই পক্ষের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট দুই পক্ষের দূরত্ব থাকার ফলেই এবার হকি দল প্রিমিয়ার থেকে অবনমিত হয়েছে।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে ওয়ারী এখন খেলে দ্বিতীয় স্তরে। সেই দ্বিতীয় স্তরেও নিয়মিত নয়। বছর চারেক আগে সেই দ্বিতীয় স্তর থেকে অবনমিত হয়ে সিনিয়র ডিভিশনে খেলেছিল। সেখানে খেলে আবার চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ফিরেছে।
ওয়ারীর এক সময় সবচেয়ে সফল খেলা ছিল ভলিবল। স্বাধীনতার আগে ও পরে ভলিবলে ওয়ারীর দাপট ছিল। ভলিবলে শীর্ষ স্তরে খেললেও সাফল্য খুব বেশি নেই। সার্ভিসেস বাহিনী আসার পর থেকে ভলিবলেও সাফল্য সোনার হরিণ ওয়ারীর কাছে।
টেবিল টেনিসের চর্চা ওয়ারীতে দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে টেবিল টেনিসে ওয়ারী একটি নির্দিষ্ট অবস্থান বজায় রেখেছে। লিগে আবাহনী, শেখ রাসেলেরই দাপট ছিল বেশি। ফেডারেশন কাপ ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টে শিরোপা রয়েছে এই ক্লাবটির। গত বছর ফেডকাপ টিটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ওয়ারী।
ওয়ারীর ৫৯ জন ‘কালার’
ফুটবলার খায়রুল ইসলাম, ক্রিকেটার মইনউদ্দিন মাহমুদ ১৯৫৩ সালে এই পদক পেয়েছিলেন। সর্বশেষ পদকপ্রাপ্ত খেলোয়াড়ের নাম সোহেল আহমেদ। ভলিবলে ২০০৯-১৩ সালের পারফরম্যান্সের জন্য ক্লাব তাকে এই সম্মাননা দেয়। শতবর্ষী ক্লাব হলেও কালারের সংখ্যা খুব সীমিত। এর কারণ অবশ্য ব্যাখ্যা দিলেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিদুর রহমান মিরাজ, ‘আমাদের ক্লাবের নিয়ম হচ্ছে এক টানা কমপক্ষে পাঁচ বছর খেলতে হবে এবং ভালো অবদান রাখতে হবে। বর্তমান সময়ে অনেক খেলোয়াড় এক টানা পাঁচ বছর থাকেন না। ফলে কালারের সংখ্যা কম’। ক্লাবটির ১৯৯৮ সালে সংশোধিত গঠনতন্ত্রে অবশ্য কালারের বিষয়টি সেভাবে উল্লেখ নেই। ক্লাবের অন্যতম সিনিয়র সদস্য মীর মুহাম্মদ মনোয়ার আলী মনু বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট না থাকলেও কালার আমাদের ক্লাবের রীতি। একটানা পাঁচ বছর খেলার পাশাপাশি, শৃঙ্খলা ও অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে কালার দেওয়া হয়।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম সজ্জন ব্যক্তিত্ব কাওসার আলী। যিনি ফুটবল ও হকি উভয় ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ওয়ারীর কালার প্রাপ্ত এই ক্রীড়াবিদ বলেন , ‘আজকের কাওসার আলী হওয়ার পেছনে অবদান ওয়ারী ক্লাবের। আমার ফুটবলের শুরু ওয়ারীতে। হকিতেও খেলেছি একটানা কয়েক বছর। ওয়ারী ক্লাব শুধু খেলাধূলার জন্য নয়, সেই সময় লাইব্রেরি ছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হতো। অন্য সব ক্লাব থেকে একেবারে ভিন্ন ছিল আশির দশকে।’
‘ওয়ারী আইলো’
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন ওয়ারী ক্লাবের বয়স ৭৩। বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্লাবটি ফুটবলে তেমন সাফল্য পায়নি। শুধু সত্তরের দশকে কয়েক বছর ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গনে ‘ওয়ারী আইলো’ প্রচলিত ছিল। সেটা হয়েছিল মূলত মোহামেডানের সমর্থকদের জন্য। ১৯৭৮ সালে আবাহনীকে লিগে দুই বারই হারায় ওয়ারী। তখন থেকে মোহামেডানের সমর্থকরা আবাহনীর সমর্থক ও ক্লাব সংশ্লিষ্টদের ‘ওয়ারী আইলো’ বলে টিপ্পনি কাটত। লোভন, বাচ্চুদের (বিকাশ চৌধুরি) সেই সময়টা ছিল ওয়ারীর ফুটবলে কিছুটা আলোচিত সময়। এই ভালো সময়টা অবশ্য খুব বেশি দিন থাকেনি।
ওয়ারীর মতো শতবর্ষী ও সবচেয়ে প্রাচীন ক্লাবের সেই অর্থে সমর্থক নেই। প্রায় ছয় দশক বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব আব্দুস সাদেক। আবাহনীর প্রথম ফুটবল দলের অধিনায়ক সাদেক ওয়ারীর সমর্থক প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা যখন খেলা শুরু করি ষাটের দশকে তখন ওয়ারী ফুটবল, হকিতে তেমন শক্তিশালী দল গড়ত না। তারকা খেলোয়াড়, দলীয় সাফল্য ছিল না। ওয়ারীর সমর্থক তেমন দেখিনি।’
স্বাধীনতার পর ক্রীড়াঙ্গনে আলোড়ন তোলা আরেকটি ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ব্রাদার্সের সাবেক তারকা ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু সাদেকের সঙ্গে একমত হয়ে যোগ করেন, ‘পাকিস্তান আমলে ভিক্টোরিয়া ও ওয়ান্ডারার্স সাফল্য পেয়েছে ফুটবলে। মোহামেডানও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফলে তাদের সমর্থক হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়ে সমর্থন পেয়েছে। আমরা ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিগ চ্যাম্পিয়ন না হলেও ঢামফা, ফেডারেশন কাপ, আগাখান জিতেছিলাম দুই বছরের ব্যবধানে। সাফল্য এবং পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক (গোপীবাগ) ক্লাব হওয়ায় সমর্থক ছিল। খেলাধূলায় বিশেষত ফুটবলের মতো দলীয় খেলায় সাফল্য না থাকলে সেই অর্থে সমর্থক তৈরি হয় না। ওয়ারী ক্লাব ওয়ারী থেকে স্থান্তারিত হওয়াও সমর্থনে ভাটা পড়ার আরেকটা কারণ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ওয়ারীর সাফল্য বলতে হকি, ভলিবল ও টেবিল টেনিসে। ফুটবল ও ক্রিকেটে তাদের কোনো ট্রফি নেই।’
’৪৭ এ দেশভাগ ও ওয়ারীর সংকট
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান পৃথক দেশ হয়। বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি অংশ হয়। সেই সময় বাংলাদেশ থেকে অনেকে ভারতে চলে যান চিরতরে। ওয়ারী ক্লাবে ৪৭ পর্যন্ত যারা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সবাই ছিলেন সনাতন ধর্মের। সেই সাবেক সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে কয়েকজন ভারতে গিয়ে ওয়ারী অ্যাথলেটিক্স ক্লাব খোলেন। এই বিষয়ে কলকাতা থেকে মুঠোফোনে ভারতের ওয়ারী ক্লাবের বর্তমান সচিব প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের এখানে ওয়ারী ক্লাব হয়েছে মূলত বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের হাত ধরে। বিশেষ করে পাখী দা সহ আরো কয়েকজনের প্রচেষ্টাতেই এই ক্লাব হয়েছে।’
ক্লাবের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় ওই সময় ক্লাবটি সংকটে পড়ে। ৪৭ পরবর্তী সময়ে ক্লাবের দায়িত্ব নেন বিশিষ্ট চিকিৎসক এমএন নন্দী। তিনি ৪৭-৫১ পর্যন্ত ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তারপর আর কোনো সনাতন ধর্মের ব্যক্তি সাধারণ সম্পাদক হননি।
১৯৪৭-৭১ এই সময়ে ক্লাবটির ইতিহাস ও সাফল্য সেভাবে লিপিবদ্ধ নেই। ক্লাবের প্রবীণ সদস্য ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে যা জানা গেছে,পাকিস্তান আমলে একবার হকি লিগ ও ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়ারী। ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই।
ব্রিটিশ আমলই স্বর্ণালী অতীত
১৮৯৮ সালে ঢাকার ওয়ারীতে এই ক্লাবের জন্ম। সেই সময় ঢাকায় অভিজাত শ্রেণির আবাসস্থল ছিল ওয়ারী। ইতিহাস ও ক্লাব সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির হাত ধরে এই ক্লাবের জন্ম। আভিজাত্য ছিল এই ক্লাবের অন্যতম প্রতীক। জন্মের পর থেকে ফুটবল ও ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করত ওয়ারী।
ব্রিটিশ আমলে ঢাকা ফুটবল লিগ নিয়মিত ছিল না। সেই সময় বিভিন্ন শিল্ড ও ট্রফির নামে টুর্নামেন্ট হতো। ওয়ারীর সেই শিল্ডগুলোতে সাফল্য ছিল। ঢাকার গন্ডি পেরিয়ে কলকাতার মাঠেও দাপট ছিল সেই সময়ের ওয়ারীর। মোহনাবাগান ও কলকাতার বিভিন্ন দলের সঙ্গে জয়ের ফলাফল পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়।
১৯১০ সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত কোরিয়ান্থ ক্লাব ঢাকায় এসেছিল। ঢাকা একাদশের হয়ে খেলা সেই ম্যাচে প্রথম একাদশের মধ্যে ১০ জনই ছিলেন ওয়ারীর। বৃটিশ আমলে ওয়ারীর অনেক সাফল্য থাকলেও এর কোনো তালিকা লিপিবদ্ধ নেই ক্লাবে। তিন বার (ওয়ারী থেকে পল্টন, পল্টন থেকে স্টেডিয়াম, স্টেডিয়াম থেকে মতিঝিল) ক্লাব টেন্ট বদল হওয়ায় অনেক নথিপত্র নেই। পাঁচ দশকের বেশি ক্রীড়া সাংবাদিকতা ও লেখালেখি করা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বৃটিশ আমলকেই ওয়ারীর সেরা সময় বলে আখ্যায়িত করলেন, ‘বৃটিশ পিরিয়ডের তথ্য-উপাত্ত সেভাবে পাওয়া যায় না। সুনির্দিষ্ট কয় বার চ্যাম্পিয়ন সেটা বলা না গেলেও এটা নিশ্চিত যে ৪৭ এর আগে একাধিকবার ফুটবল ও ক্রিকেটে ওয়ারী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’
কামরুজ্জামানের বক্তব্যকে সমর্থন করলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রথম সচিব কাজী আনিসুর রহমান। ৯২ বছর বয়স হলেও তার দেখা ওয়ারীর প্রথম ম্যাচ স্মরণ করলেন, ‘৪৩ কি ৪৪ সাল হবে, সেই সময় ওয়ারীর ফুটবল ম্যাচ দেখেছি। তখন মূলত ভিক্টোরিয়া ও ওয়ারীর মধ্যেই খেলা হতো। সেই সময় ওয়ারী বেশি শক্তিশালী ছিল।’
১৯৯৮ সালে ওয়ারীর শতবর্ষ হয়। শতবর্ষ উদযাপন হয়েছে ২০০০ সালে। সেই সময় ক্লাবের ইতিহাস সংরক্ষণের চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মনু, ‘আমাদের ক্লাবটি ছিল প্রথমে ওয়ারীতে। এরপর ডিআইটি রোড ও স্টেডিয়ামের সামনে। সেখান থেকে এই মতিঝিলে। কয়েক বার স্থানান্তর হওয়ায় আমাদের অনেক ইতিহাস সংরক্ষণে নেই।’
১৯৩০ সালে ওয়ারী অনুশীলনের জন্য মাঠ পায়। সেই মাঠে তৎকালীন সময় বিভিন্ন বিদেশি দল অনুশীলন করে। ডিআইটি রোডে ষাট-সত্তরের দশকে ওয়ারী, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়ার টেন্ট ছিল। এর মধ্যে ওয়ারীর টেন্ট ছিল সবচেয়ে বড়।
ভারত-বাংলাদেশের দুই ওয়ারীই অস্তিত্বের সংকটে
বাংলাদেশের ওয়ারী ক্লাবের মতো ভারতের ওয়ারী ক্লাবও নানা সংকটে আছে। সাংগঠনিক, আর্থিক নানা সমস্যার পাশে যোগ হয়েছে অগ্নিদুর্ঘটনা। ২০১৯ সালের এপ্রিলে ওয়ারী টেন্টে অগ্নিকান্ডের পর অনেকটা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ছিল ক্লাবটি। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টার কথা কলকাতা থেকে জানানা ক্লাবটির কর্মকর্তা ইন্দু, ‘আমাদের অনেক কিছু শেষ হয়ে গেছে আগুনের পর। এখন নতুনভাবে ক্লাব দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি।’ ভারতে ওয়ারী ক্লাব ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি খেলে। তিন ডিসিপ্লিনের মধ্যে দুই ডিসিপ্লিনে নিচের স্তরে, শুধু ক্রিকেটটা উপরের স্তরে।
দেশভাগের পর বাংলাদেশ থেকে গিয়েই ভারতের কলকাতায় ওয়ারী অ্যাথলেটিক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন পঙ্কজ গুপ্ত, পাখী সেন, দীনেশরা। ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো সাফল্য না পেলেও কলকাতার ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছিল ক্লাবটি। অনেক তারকা ফুটবলার তৈরি হয়েছে এই ক্লাব থেকে। ৪৭-এর পর ভারতে ক্লাব প্রতিষ্ঠা হলেও বাংলাদেশে যারা করেছিলেন তারাই সেখানে প্রতিষ্ঠা করায় ক্লাবের প্রতিষ্ঠা সাল ১৮৯৮ ব্যবহার করা হয়েছে কলকাতায়। ফলে কলকাতার শতবর্ষী ক্লাবের স্বীকৃতিও পেয়েছে এটি।
আগামী বছর ওয়ারী ক্লাবের সার্ধশতবার্ষিকী। এই উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে ওয়ারী ক্লাবকে জাগরণের চেষ্টা থাকবে বলে জানান সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম রেজা চৌধুরি, ‘করোনা পরিস্থিতির আরো একটু উন্নতি হলে আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নেব। ১২৫ বছর উপলক্ষ্যে ভালো কিছু করতে হবে।’
এজেড/এটি