সত্তর আশির দশকে প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, বশির আহমেদ, রামা লুসাই সহ আরো অনেকে একাধিক ডিসিপ্লিনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ধীরে ধীরে পেশাদার যুগে অগ্রসর হওয়ার পর সেই ধারা ক্রমেই আসছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে তিনবার অলিম্পিক খেলা সাঁতারু ডলি আক্তার এখন জাতীয় ভলিবল দলের খেলোয়াড়। ডলির মতোই আসিফুর রহমান চৌধুরী রাজীব। হকি জাতীয় দলের পর খেলছেন ব্রিজ জাতীয় দলে।

আসন্ন চীন এশিয়ান গেমসের জন্য ব্রিজ দলের ট্রায়াল হয়েছে। সেই ট্রায়ালে ব্রিজ লাভার্স দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই দলের অন্যতম সদস্য আশিকুর রহমান চৌধুরী রাজীব। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলেও খেলেছেন। ১৯৯৯ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ হকি দলের জার্সি পড়েছিলেন ফরিদপুরের এই সন্তান। ১৯৯৮ সালে ক্যারিয়ার শুরু করে পরের বছরই জাতীয় দলে খেললেও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজীব হকি থেকে নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেন, ‘ফরিদপুরে হকির আবহে বেড়ে উঠেছি। সেখান থেকেই হকির পেশাদার অঙ্গনে আসা। এখানে এসে দেখলাম লিগ অনিয়মিত, জাতীয় দলে খেললে দীর্ঘ সময় ক্যাম্প করতে হয়। এতে পড়াশোনার ব্যঘাত ঘটছিল।’

জাতীয় দলে বেশি দিন না খেললেও ২০০৮ পর্যন্ত হকির স্টিক হাতে ছিল রাজীবের, ‘দশ বছর হকি খেলেছি এর মধ্যে লিগ হয়েছিল মাত্র পাঁচটি। এটা খুবই দুঃখজনক ছিল। দশ বছরের ক্যারিয়ারে আবাহনী, মোহামেডান, অ্যাজাক্সের হয়ে খেলেছিলাম।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রাজীবের আবাসিক হল ছিল শহীদুল্লাহ্। যা বাংলাদেশের ব্রিজের একটি আতুড়ঘর। স্নাতক শেষের পরই মুলত ব্রিজের দিকে ঝুঁকেন রাজীব, ‘স্নাতক শেষ হওয়ার পর পড়াশোনার অ্যাকাডেমিক চাপ তেমন থাকে না। সেই ফ্রি সময় অনেকটা কাটত অকশন ব্রিজ খেলে। ওই সময় হলের বড় ভাই সোহাগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ব্রিজের দিকে ঝুঁকি। পরে ব্রিজেই অভ্যাস হয়ে যায়।’

২০০৪ এর পর থেকে ব্রিজ খেলা শুরু করলেও রাজীব-জিয়াদের দল ব্রিজ লাভার্সের সুসময় আসে ২০১১ এর পর থেকে। ইস্পাহানী গ্রুপের অন্যতম উর্ধতন কর্মকর্তা সাজিদ ইস্পাহানি ব্রিজ লাভার্স দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এর পর থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের সাফল্য ছুটতে থাকে। দুই বার বিশ্বকাপ খেলছে ব্রিজ লাভার্সই। এবার এশিয়ান গেমসে খেলবে প্রথমবারের মতো। পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেও আগামী কয়েক মাস ব্রিজে নজর রাখতে চান রাজীব, ‘জিয়া ভাই সোহাগ ভাই দেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তারা সহ আমাদের দলের সবাই পেশাগত ব্যস্ততা অনেক। এর মধ্যেও আমরা টিম মিটিং করে পরিকল্পনা সাজাব ও অনলাইন-অফলাইন অনুশীলন চালিয়ে যাব গেমস পর্যন্ত।’

ব্রিজ লাভার্স এশিয়ান গেমসে উত্তীর্ণ হওয়ায় আশার সঞ্চার হয়েছে ফেডারেশনের সভাপতি মুশফিকুর রহমান মোহনের মনে, ‘তারা অত্যন্ত যোগ্য ও অভিজ্ঞ দল। এই দলের এশিয়ান গেমসে ভালো কিছু করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা ও পরিকল্পনা। আমাদের জায়গা সহ নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকার আমাদের দিকে সুদৃষ্টি দিলে অবশ্যই আন্তর্জাতিক পদক সম্ভব। এশিয়ান গেমসগামী দলের পাশে সব সময় থাকবে ফেডারেশন।’ 

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের খেলোয়াড়-  রাশেদুল হাসান, মশিউর রহমান, মনিরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, শাহ জিয়াউল হক, আসিফুর রহমান চৌধুরী রাজীব। 

এজেড/এটি