‘শতাব্দী সেরা’ নিয়াজের চোখে ক্রীড়াঙ্গনের ৫০ বছর
দুইদিন পর বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। এই ৫০ বছরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে রয়েছে অসংখ্য কীর্তি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে বিশেষ উচ্চতায় নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম এবং বিশেষ একজন ক্রীড়াবিদ দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদ। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ তো বটেই উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন তিনি। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ‘গত শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ কে’- এই প্রশ্নে ভোটাভুটির আয়োজন করেছিল একটি গণমাধ্যম। ক্রীড়াবিদদের সেই ভোটে শীর্ষে ছিলেন নিয়াজ।
হাল আমলে বাংলাদেশের আনন্দ-বেদনার বড় প্রতীক কখনো সাকিব-মুশফিকরা আবার কখনো রোমান সানা-জামাল ভূঁইয়ারা। এরপরও স্বাধীনতার ৫০ বছরের এই লগ্নে ঢাকা পোস্টের জ্যোষ্ঠ ক্রীড়া প্রতিবেদক আরাফাত জোবায়ের সাক্ষাৎকারের জন্য বেছে নিয়েছেন উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার নিয়াজ মোর্শেদকেই। নিজের ক্যারিয়ার, বাংলাদেশের দাবা ও ক্রীড়াঙ্গনের ৫০ বছর নিয়ে কখা বলেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন : শুরুটা করতে চাই আপনার গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার সময় দিয়েই। মাত্র ২১ বছর বয়সেই আপনি জিএম হয়েছিলেন। বাংলাদেশ তো বটেই উপমহাদেশে প্রথম। এত দ্রুত কীভাবে সম্ভব হলো?
নিয়াজ : আমি দেশে ও দেশের বাইরে অনেক খেলতাম। খেলার কারণে অনেক রেটিং ও নর্ম বেড়েছে। এজন্যই অনেকটা দ্রুত হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনার এই দ্রুত জিএম হওয়ার পেছনে পরিবার ও ফেডারেশনের অবদান কেমন?
নিয়াজ : পরিবার দাবা খেলাকে সমর্থন দিয়েছে। বাকিটা নিজের উদ্যোগ। ফেডারেশনের সেই অর্থে অবদান নেই। কারণ আমি নিজ উদ্যোগেই বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় খেলেছি। নিজ থেকেই বিভিন্ন জায়গায় চিঠি লিখতাম, খোঁজ খবর রাখতাম। সুবিধা মতো সময়ে বাইরে খেলতে যেতাম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমানের অবদান রয়েছে। ১৯৮১ থেকে আমি বিমানে খেলি। বিমানে খেলার কারণে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের টিকিট ফ্রি পেতাম। মাত্র ১৬ বছর বয়সে আমি ইউরোপ যাই। সেটা সম্ভব হয়েছে বিমানের কারণেই।
প্রশ্ন : ফিদে যখন আপনাকে জিএম হিসেবে স্বীকৃতি দিল তখনকার তাৎক্ষণিক অনুভূতি কেমন ছিল?
নিয়াজ : এখন যেমন ফিদে মিটিং হয় দুই তিন মাস পরপর। আগে হতো এক বছর বা দশ-এগারো মাস পরে। আমার জিএম নর্ম ১৯৮৬ সালে হলেও ফিদের সভার কারণে সেটা ’৮৭ তে আসে। দেরিতে এলেও যেদিন খবর পেলাম সেদিন অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করেছে। অনেক দারুণ অনুভূতি, ঠিক ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
প্রশ্ন : তার মানে ফিদের সভা আগে হলো আপনি আরো আগেই এই খেতাব পেতেন?
নিয়াজ : সেটা তো বটেই। তবে ফিদে আমাকে একটু বিশেষ বিবেচনাও করেছে। আগে এশিয়াতে দুটি জোন ছিল। একটি ফার ইস্ট আরেকটি ওয়েস্ট ও সাউথ এশিয়া। ফার ইস্ট এশিয়ায় চার জন জিএম ছিলেন। আমাদের এই অঞ্চলে ছিলেন না কেউ। আমার জিএম নর্ম তিনটি হলেও গেম একটি কম ছিল। ২৪ গেমের জায়গায় ছিল ২৩টি। আমাদের এই অঞ্চলে জিএম নেই। তাই আমাকে এক গেম কম থাকা সত্ত্বেও জিএম-এর স্বীকৃতি দেয় তারা।
প্রশ্ন : ১৯৮৭ সালে উপমহাদেশে প্রথম জিএম হলেন আপনি। আশি-নব্বইয়ের দশকে ফুটবল অনেক জনপ্রিয় হলেও ব্যক্তিগত অর্জনে আন্তর্জাতিক অবস্থানে আপনি অনেকের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। নিজের এত জনপ্রিয়তা সম্পর্কে আপনার অভিব্যক্তি জানতে চাই।
নিয়াজ : এটা ঠিক, গত শতাব্দীর শেষ দিকে জনপ্রিয়তা আমার যথেষ্ট ছিল। আমি অন্যতম জনপ্রিয় ও সেরা ছিলাম অনেকের দৃষ্টিতে। এটা আমাকে তখন ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করেছে।
প্রশ্ন : তাহলে আপনাকে গত শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় বলাই যায়!
নিয়াজ: একটি পত্রিকা (প্রথম আলো) ২০০০/০১ সালে শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ নিয়ে একটি জরিপ করে। সেখানে ক্রীড়াবিদরাই ভোট দিয়েছিল। সেখানে আমি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলাম। শতাব্দী বললেও এখানে আসলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়টাই বেশি বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন : দাবা তো বটেই আপানকে দেশের অন্য ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশের অন্যতম মেধাবী ক্রীড়াবিদের স্বীকৃতি দেয়। এর সাথে কি আপনি একমত?
নিয়াজ : এটা সময়ের আলোকে বিচার করতে হবে। ১৯৭৯ তে ফিদে সদস্য হয় বাংলাদেশ। এরপর আট বছরের মধ্যেই ৮৭ তে জিএম হওয়া অবশ্যই বিশাল ব্যপার। তবে সেই অনুপাতে বাংলাদেশের দাবা এগিয়ে যেতে পারেনি।
প্রশ্ন : প্রশ্নটা খানিকটা এড়িয়েই যাচ্ছেন। আবার জানতে চাইছি, আপনাকে দেশের অন্যতম মেধাবী ক্রীড়াবিদ বলা হয়। এর সাথে আপনি কি একমত?
নিয়াজ : এটা আমার সৌভাগ্য মানুষ আমাকে এভাবে ভাবে। হয়তো ওই সময়টা কঠিন ছিল। এমনও দিন গেছে ঘুঁটি নেই, ঘড়ি নেই। ছোট ছিলাম, খেলতে গেছি, সিনিয়ররা চাল দিচ্ছে না, বসেই থাকতে হয়েছে। বই, ম্যাগাজিন ছিল না দাবার জন্য। শূন্য থেকে শুরু করে এই পর্যায়ে আসায় হয়তো মানুষ এটা বলে।
প্রশ্ন : মানুষ বলার যথেষ্ট কারণও তো আছে। যারা মেধাবী সব ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। আপনি ভালো খেলেন, গান করেন, পাশাপাশি লেখেনও দারুণ। তাহলে আপনাকে অতিমাত্রায় মেধাবী বলবে না কেন!
নিয়াজ : আমি আসলে সবকিছু করতে পছন্দ করেছি। এখন মনে হচ্ছে অত কিছু না করে দাবায় আরো মনোযোগী হলে হয়তো আরো ভালো কিছু করতে পারতাম।
প্রশ্ন : ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট মানুষরা যেমন আপনার মেধার কদর করে আবার এটাও শোনা যায়, ‘নিয়াজ একটু মুডি’!
নিয়াজ : মানুষ তো সবাই এক রকম নয়। একটু ব্যতিক্রম বা ভিন্ন হতেই পারে। হয়তো আমার সেই ভিন্নতা নিয়েই ওই রকম ভাবে মানুষ। আমি নিজে তো সেটা বুঝি না।
প্রশ্ন : আপনি জিএম হলেন ১৯৮৭ সালে। দ্বিতীয় জিএম হলেন জিয়া ২০০০ সালের পর। প্রায় ১৩ বছর সময় লাগল আপনার উত্তরসূরি খুঁজে পেতে!
নিয়াজ : সেটাই বড় কষ্টের জায়গা। ফলো আপটা ভালো হয়নি দাবা ফেডারেশনের।
প্রশ্ন : মাঝে তো আপনিও সংগঠক হতে চেয়েছিলেন। ২০১২ সালে আপনি ফেডারেশনের নির্বাচন করেছিলেন।
নিয়াজ : সংগঠকদের কাজটা ঠিক মতো হয়নি। এজন্য একটু ধাক্কা দিতে চেয়েছিলাম। খানিকটা প্রতিবাদ হিসেবেই নির্বাচনটা করেছিলাম। তবে আমি মনে করি খেলোয়াড়দের খেলা নিয়েই মনোযোগী হওয়া উচিত বেশি।
প্রশ্ন : জিয়া, রাকিব, রাজীব যেমন দাবায় নিয়মিত। আপনি সেভাবে দাবায় এক নাগাড়ে থাকেন না। মাঝে মধ্যে দূরে থাকেন কেন?
নিয়াজ : কোথায় দূরে থাকি? আমি তো এখনও চ্যাম্পিয়ন! সর্বশেষ জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। চ্যাম্পিয়নশিপে আমার আনন্দের চেয়ে কষ্টটাই বেশি। বাংলাদেশের দাবা সঠিকভাবে এগুলে আমার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা দূরে থাক, কোয়ালিফাই করতে পারতাম না। তরুণদের উঠে আসা উচিত। আমি ২০ বছরে জিএম হয়েছি। আমার ভাগ্নে যদি ১৭-১৮ তে না হতে পারে তাহলে কি আমার ভাগ্নে আমার চেয়ে বড় বলতে পারব। দাবা দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রতিভাবান জিএম তো দূরের বিষয়।
প্রশ্ন : বিশ্বখ্যাত দাবাড়ু ক্যাসপারভ তো মাত্র ৪১ এ অবসর নিয়েছেন। রাণী হামিদ ও আপনারা তো খেলে যাচ্ছেন এখনো..
নিয়াজ : এখানে একটা বিষয় রয়েছে। সে বিশ্বমানের দাবাড়ু। সে কখনো হারতে চায় না। এজন্য সে অবসরে গেছে। ফিসারও তাই করেছে। আমরা গুড খেলোয়াড় বাট নট গ্রেটেস্ট।
প্রশ্ন : কিন্তু গ্রেটেস্ট এক খেলোয়াড় বিশ্বনাথ আনন্দও আপনার ভক্ত। সম্প্রতি আমি তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তিনি সেখানে বলেছিলেন, ‘নিয়াজ আমার চেয়েও মেধাবী’!
নিয়াজ : আনন্দ অনেক বড় মাপের খেলোয়াড়। খেলোয়াড় যত বড় হয় তার বিনয় তত বড়। এটি সেই বিনয়ের-ই উদাহরণ।
প্রশ্ন : আপনার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা কী, কখন ঘুঁটির চাল থামাবেন?
নিয়াজ : জাতীয় দলে আসতে পারব না যখন তখন খেলা ছেড়ে দিতে পারি। আমি এখনো দাবার সঠিক পথেই আছি।
প্রশ্ন : আপনি এখন ৫৫। পাঁচ বছর পর ষাট হবেন। রাণী হামিদ আশি ছুঁই ছুঁই বয়সে খেলছেন..
নিয়াজ : রাণী হামিদ ভালোবাসার তাড়না থেকে খেলছেন। আমি যে রাণী হামিদকে জানি তিনি ২২০০ রেটিংয়ের কাছাকাছি। এখন ১৮০০’র ঘরে।
প্রশ্ন : সুপার জিএম না হওয়ার অপ্রাপ্তি পোড়ায় আপনাকে?
নিয়াজ : এটা শুধু আমার নয়, দেশেরই অপ্রাপ্তি বলতে পারেন।
প্রশ্ন : ২৭০০ রেটিং কি হবে না বাংলাদেশের কোনো দাবাড়ুর?
নিয়াজ : আগে ২৬০০ হোক বা ২৬৫০। ২৭০০ তো অনেক দূর। জিয়া একবার ২৫৫০ ক্রস করেছিল। আমি ২৫৩০ করেছিলাম একবার। তখন ২৭০০ রেটিং ছিল বিশ্বে তিন থেকে চার জনের। এখন তো ৪০ জনের বেশি।
প্রশ্ন : দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে আপনি বোধ হয় একমাত্র স্নাতক, যিনি দেশের বাইরে থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন। দাবা ও উচ্চ শিক্ষা সমন্বয় করলেন কীভাবে?
নিয়াজ : শ্যুটার নিনি ভাইও বোধ হয় করেছেন (কমনওথেলথ পদকজয়ী শ্যুটার আব্দুস সাত্তার নিনি)। আমি আমেরিকা থেকে ব্যাচেলর করি। একটু বিলম্বেই হয়েছে ব্যাচেলর। জিএম নর্ম পূরণ হয়েছে, ঘোষণা আসবে, ঠিক সেই সময় আমি আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন করি।
প্রশ্ন : ব্যাচেলর পর্যায়ে তো বৃত্তি সেভাবে থাকে না...
নিয়াজ : আমি অর্ধেক বৃত্তি পেয়েছিলাম। সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নয়, বিসিআইসি ব্যাংক ছিল। সেই ব্যাংকের একটি বৃত্তি পেয়েছিলাম।
প্রশ্ন : আপনি অর্থনীতিতে স্নাতক। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিনিয়োগ, স্পন্সরশিপের বিষয়গুলো কীভাবে দেখেন?
নিয়াজ : ক্রীড়াঙ্গনে আর্থিক অবস্থা ভালো না। এজন্য অর্থনীতিবিদের জটিল দৃষ্টি লাগে না। ক্রিকেটে আছে আর্থিক সচ্ছলতা, কারণ আন্তর্জাতিক সাফল্য ও দর্শকদের সম্পৃক্ততা। বাকি খেলাগুলোর সমস্যা হচ্ছে, খেলায় আন্তর্জাতিক সাফল্য থাকলেও দর্শকমুখী নয়। আবার কিছু খেলা দর্শকমুখী হলেও সাফল্য নেই। ফলে অর্থ-বাণিজ্যের সাথে সেভাবে মিশতে পারছে না খেলা। এর পেছনে সাংগঠনিক আরো অনেক কারণ তো আছেই।
প্রশ্ন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞানে পড়ে গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার বহুজাতিক এনজিওতে আছেন। আপনি অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমেরিকা থেকে ডিগ্রি নিয়ে সেভাবে কিছু করছেন কি?
নিয়াজ : আমার রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ছিল। ২০১১ সালে বন্ধ করে দাবায় পুনরায় মনোযোগ দিই। সম্প্রতি একটা ম্যানেজমেন্ট-এ যোগদান করেছি উপদেষ্টা হিসেবে।
প্রশ্ন : আপনি মোহামেডানের হয়ে দাবা খেলেছেন। দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের স্থায়ী সদস্যও। দেশের ৫০ বছরে ক্লাব সংস্কৃতি কেমন দেখলেন?
নিয়াজ : শুধু মোহামেডান নয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্লাব ফুটবল-ক্রিকেট ভিত্তিক। ক্লাব সংস্কৃতি বিকাশে যেটা খুব ইতিবাচক নয়।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন ?
নিয়াজ : ছোটকালে পাঠ্যবইয়ে ব্রজেন দাসের নাম পড়েছিলাম। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরে নাম লেখান। স্বাধীনতার বহু বছর আগে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। তিনি ছিলেন প্রায় সকল ক্রীড়াবিদের অনুপ্রেরণার উৎস।
স্বাধীনতার পরবর্তী পর্যায়ে ফুটবল, ক্রিকেট এই দুটি খেলার খেলোয়াড়দেরই তারকা হিসেবে বেশি জানতাম। আমি নিজেও স্টেডিয়ামে গিয়ে সালাউদ্দিন ভাই, রকিবুল ভাইদের খেলা দেখেছি। এই দুটি খেলা থেকে কিন্তু তখন খুব বেশি সাফল্য আসেনি। তখন অন্য খেলা থেকে সাফল্য এসেছে। শ্যুটিংয়ে যেমন আব্দুস সাত্তার নিনি, আতিকুর রহমানের কমনওয়েলথে গোল্ড, এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী পর্যায়ে আসিফ, সাবরিনা পদক আনে। আমি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হই। রাণী হামিদের আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়া বড় আলোড়ন তুলেছিল সে সময়। ওই সময়গুলোতে আমার স্মরণ আছে কিছু কিছু খেলায় আঞ্চলিকভাবে ভালো করতাম আমরা। সাঁতারে আমরা ভালো করতাম মোশাররফ ভাইয়ের সময়। দ্রুততম মানবও বাংলাদেশের ছিল একসময়। প্রায় সব খেলায় আমাদের সাফল্যগুলো ছিল বিচ্ছিন্নভাবে। ধারাবাহিকভাবে সেভাবে সাফল্য আসেনি।
১৯৯৭ সালে ক্রিকেটে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার পর বড় পরিবর্তন আসে। ক্রিকেট বিশ্ব মঞ্চে ধারাবাহিকভাবে একটা জায়গা করে নেয়। প্রায়ই সাফল্য আনছে। ক্রিকেটাররা নিজেদের বিশ্ব তারকা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ক্রিকেটের বাইরে গলফে সিদ্দিক আর আরচ্যারির রোমান সানা দুর্দান্ত করছে।
প্রশ্ন : ৫০ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে অতৃপ্তি আছে কোনো?
নিয়াজ : ক্রীড়াঙ্গনে ৫০ বছরে অর্জন মোটামুটি কম নয়। একটু খারাপ লাগে একটি বিষয়ে; নতুন কিছু খেলা ভালো করছে, পুরোনো খেলা যেমন শ্যুটিং দাবায় আগের অবস্থান ধরে রাখা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন : আপনি খেলোয়াড়দের জরিপে বিংশ শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছিলেন। আপনাকে যদি এখন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ডিসিপ্লিন ভিত্তিক কয়েকজন সেরা খেলোয়াড় বাছাই করতে বলা হয়, কাদের কথা বলবেন?
নিয়াজ : আমি সেই বাছাইয়ে যাব না। একেক খেলার ধরন ও গুরুত্ব একেক রকম। অনেকেরই অনেক কৃতিত্ব রয়েছে। সবাই সবার জায়গা থেকে সেরা। যা উল্লেখও করেছি কিছুটা। তবে ব্যক্তিগতভাবে একজনের নাম বলতে হলে সাকিব আল হাসানের নাম বলতেই হয়। গোটা বিশ্বের মধ্যে সেরা অলরাউন্ডার হওয়া এবং তা ধরে রাখা অত্যন্ত বিশাল কৃতিত্ব। গত বিশ্বকাপে সে দুর্দান্ত খেলেছে। সে-ই গত বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় ছিল আমার দৃষ্টিতে। তাকে ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট না দেয়ায় তার পাশাপাশি বাংলাদেশ এবং আমরাও বঞ্চিত হয়েছি বলে মনে করি।
প্রশ্ন : স্বাধীনতার শতবর্ষে ক্রীড়াঙ্গনকে কোথায় দেখতে চান?
নিয়াজ : আগামী ৫০ বছর ক্রীড়াঙ্গনে আরো অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পারব এই বিশ্বাস করি। এরকমটা যাতে হয়, সেই পর্যায়ে দেখতে চাই দেশকে।
এজেড/এটি/এনইউ/জেএস