ব্যাডমিন্টনে ইন্দোনেশিয়ার আধিপত্য, বাংলাদেশ পিছিয়ে সব সূচকেই
পল্টনস্থ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে ইউনেক্স-সানরাইজ জুনিয়র ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে পাঁচ ইভেন্টের স্বর্ণই জিতেছে ইন্দোনেশিয়া। মিশ্র ও পুরুষ এককে হয়েছে অল ইন্দোনেশিয়া ফাইনাল। অন্য তিন ইভেন্টে ভারতের শাটলাররা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে প্রতিষ্ঠিত নাম। জুনিয়র পর্যায়ের একটি টুর্নামেন্টেও তারা বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশে খেলতে আসা ইন্দোনেশিয়া ২০ জনের দলের কোচ তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, ‘খেলোয়াড়রা এই টুর্নামেন্টের জন্য দুই মাসের প্রস্তুতি নিয়েছে। ভালো খেলেই তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
জুনিয়র টুর্নামেন্টে ভারত ও ইন্দোনেশিয়াই শুধু অংশগ্রহণ করেছে। আগামী পরশু শুরু হতে যাওয়া সিনিয়র টুর্নামেন্টে আসবে প্রায় ১৫ দেশের বেশি। এই শাটলারদের অধিকাংশ নিজের আগ্রহে ও খরচেই মূলত আসছেন। সংশ্লিষ্ট ফেডারেশন শুধু অনুমতি বা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের কাজ করেছে। বাংলাদেশ স্বাগতিক হওয়ায় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অনেক বেশি সংখ্যক খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছেন। এতে র্যাংকিং বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ।
ভারতের সাবেক জুনিয়র নারী চ্যাম্পিয়ন ইশিতা নেগীর চোখে বাংলাদেশের শাটলারদের সম্ভাবনা ও দুর্বলতা দু’টিই চোখে পড়েছে, ‘বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা মেধাবী। তাদের উন্নতির অনেক জায়গা রয়েছে। বিশেষ করে আরো অনেক টুর্নামেন্ট খেললে তাদের খেলা আরো বেশি পরিণত হবে। খেলোয়াড়দের আরো সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নিজস্ব কোনো আয় নেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামান্য অর্থে খেলা আয়োজন ও কয়েকটি দেশে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেই বাজেট শেষ হয়। দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ও খেলোয়াড়দের আর্থিক সুবিধা প্রদানের কোনো সুযোগ থাকে না। ছেলে-মেয়েরা ব্যাডমিন্টন খেলে শখের বশেই যারা পেশা হিসেবে নেন পরবর্তীতে বিভিন্ন সার্ভিসেস সংস্থায় চাকুরি করেন।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যাডমিন্টনের চিত্র ভিন্ন। জুনিয়র খেলোয়াড়দেরই সুযোগ সুবিধা অনেক। ভারতের হয়ে জুনিয়র এশিয়ান গেমসে ব্যাডমিন্টন ডিসিপ্লিনে অংশ নেয়া নেগী বলেন, ‘খেল ইন্ডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ফেডারেশনের মাধ্যমে আমি মাসে ৩০ হাজার রুপি পেয়ে থাকি। এখানে খেলতে এসেছি সেটাও একটা স্পন্সরের মাধ্যমে। আমাদের অনেক খেলোয়াড়ই ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে।’
পল্টন কোর্টে নেগী যখন কথা বলছিলেন তখন তার মা পাশে দাড়িয়ে ছিলেন। ভারতে ফুটবল, ক্রিকেট, হকির পাশাপাশি ব্যক্তিগত খেলাগুলোও বেশ জনপ্রিয়। তাই নেগীর মায়ের ইচ্ছে ছিল তার মেয়ে একজন অ্যাথলেট হোক, ‘আমার মা চেয়েছিল আমি অ্যাথলেট হই। দিল্লিতে বাসার পাশে মাঠে অ্যাথলেট ট্রাক ছিল না। সেখানে ব্যাডমিন্টন শুরু করি এরপর থেকে ব্যাডমিন্টনই চলছে।’
ভারতের নারী শাটলারদের আইকন সাইনা নেওয়াল। যিনি অলিম্পিকে খেলেছেন। তারই সুবাদে ভারতের ব্যাডমিন্টন সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এই কথা বললেন নেগী, ‘ফেডারেশন, সরকার ও বেসরকারী পর্যায়ে ভারতে অসংখ্য (হাজার হাজার) ব্যাডমিন্টন একাডেমি রয়েছে। ছেলে-মেয়েরা প্রতিনিয়ত খেলছে এবং শিখছে।’ এত একাডেমি, খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ভারতের ব্যবধান স্পষ্ট। সেখানে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে পিছিয়ে ফলে ইন্দোনেশিয়া থেকে যোজন যোজন দুরত্বে।
বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নিজস্ব কোনো একাডেমি নেই। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাডমিন্টন ডিসিপ্লিন শুরু হয়েছে মাত্র দুই বছর আগে। সেখানে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী আর কোচ একজন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে অবশ্য একাডেমি রয়েছে বেশ কিছু। তবে সেই একাডেমিগুলো আবার ফেডারেশনের আওতার বাইরে থাকে বেশিরভাগ সময়। এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদুর রহমান রানার পর্যবেক্ষণ, ‘ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন একটি একাডেমী কাপ করতে পারে। এতে সকল একাডেমী এক প্ল্যাটফর্মে আসল। এখান থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহের পাশপাশি একাডেমীগুলো নিজেদের ব্র্যান্ডিংও হলো।’
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাডমিন্টনে সেই অর্থে সফলতা নেই। শহর ও গ্রামীণ উভয় পর্যায়ে খেলাটির প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশে শাটলারদের ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে। র্যাংকিং বাড়াতে কখনো পারিবারিক অর্থে, কখনো আবার ক্রীড়াঙ্গনের শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে দেশের বাইরে টুর্নামেন্টে খেলেন।
ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন কামরুন নাহার ডানা ব্যাডমিন্টনের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনে ফিরলাম ২৬ বছর পর। দীর্ঘ সময় এখানে প্রকৃত সংগঠকরা আসতে পারেনি। ফলে কাজও সেভাবে হয়নি। যে ফেডারেশনে লিগ ও জাতীয় প্রতিযোগিতা নিয়মিত হয় না, সে খেলা থেকে খেলোয়াড় উঠবে কিভাবে আর আন্তর্জাতিক সাফল্যই পাবে কিভাবে।’
এজেড/জেএ