বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের ক্রীড়া কক্ষেই অলিম্পিয়াডগামী দলের সংবাদ সম্মেলন। এক দিকে উচ্ছ্বাস আরেক দিকে শূন্যতা। দুই বছর আগে চেন্নাই দাবা অলিম্পিয়াডে গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া ও তার ছেলে তাহসিন খেলতে গিয়েছিলেন। দাবা খেলতে খেলতেই দুনিয়া ত্যাগ করেন জিয়া। সেই শূন্যতা নিয়েই তাহসিন যাচ্ছেন হাঙ্গেরীর বুদাপেস্টে। অন্য দিকে পাঁচ জনের নারী দলে দুই বোন ওয়ালিজা ও ওয়াদিফা রয়েছেন। 

বাংলাদেশের নারী দাবায় ওয়ালিজা আহমেদ উঠতি তারকা। বিগত দুই অলিম্পিয়াডেও তিনি বাংলাদেশ দলে ছিলেন। এরপরও খেলা হয়নি। এবার বোনসহ অলিম্পিয়াডে যাচ্ছেন তাই বাড়তি উচ্ছ্বাস, ‘২০২০ সালে করোনার জন্য অলিম্পিয়াড হয়নি। ২০২২ সালে পরীক্ষার জন্য খেলতে পারিনি। এবার যখন অলিম্পিয়াড নিশ্চিত হলো তখনও অনিশ্চয়তা ভর করছিল। দেশের এই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত খেলতে যেতে পারবো তো। আগামীকাল রওনা হচ্ছি বোনকে সাথে নিয়ে এটা বিশেষ ভালো লাগা।'

দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ ওপেন ও মহিলা দুই বিভাগে অংশ নিচ্ছে। দুই বিভাগেই জাতীয় দাবায় শীর্ষ পাঁচ দাবাড়ুই জায়গা পেয়েছেন। ছোট বোন ওয়াদিফা আহমেদ মহিলা দাবায় তৃতীয় হওয়ায় অলিম্পিয়াড নিশ্চিত ছিল। পঞ্চম স্থানের জন্য ওয়ালিজাকে রাণী হামিদের সঙ্গে প্লে-অফ খেলতে হয়েছে। ওয়ালিজা সেই প্লে-অফ জেতায় বেশি খুশি হয়েছিলেন ওয়াদিফা,‌ ‘আপু যখন জিতল তখন আমি খুশিতে লাফিয়েছি। দুই বোন এক সঙ্গে অলিম্পিয়াড খেলব এর চেয়ে আনন্দ আর হয় না।’

ওয়াদিফা নবম শ্রেণীর ছাত্রী আর ওয়ালিজা ভিকারুন্নিসায় উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত। তাদের বাবা মঈনউদ্দিন আহমেদ সাবেক জাতীয় দাবাড়ু। বাবার কাছ থেকেই মূলত ওয়ালিজার দাবার আগ্রহ। বাবা ও বোনকে দেখেই ওয়াদিফার দাবার বোর্ডে চাল শেখা। দুই জনই দাবায় এই অবস্থানে আসার জন্য মায়ের অবদান দিলেন, ‘আমার বাবা ইতালি থাকেন। তিনি চান আমরা দাবা খেলি তবে মায়ের আগ্রহ ও সহযোগিতাই বেশি। মা আমাদের ফেডারেশনে নিয়ে আসতেন। দাবার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন।’

দুই বোনের উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি ফেডারেশন কক্ষে শূন্যতাও বিরাজ করছে। দাবা অলিম্পিয়াডে সবচেয়ে বেশি বার অংশগ্রহণ করেছেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রথম বোর্ডেই তিনি খেলতেন। দুই মাস দুই আগে এই দাবা কক্ষেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বাবাকে ছাড়া খেলতে যাওয়া তাহসিনের কণ্ঠে তাই জড়তা, ‘বাবা নেই এখনো মানতে পারছি না। বাবার খুব ইচ্ছে ছিল আমি যেন যেতে পারি। আমি ঠিকই যাচ্ছি কিন্তু বাবা নেই।’

জিয়ার মৃত্যু, দেশের পরিস্থিতি ও ফেডারেশনের সামগ্রিক অবস্থা মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি খুব বেশি হয়নি। গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব নারী দলকে অনুশীলন করিয়েছেন। তিনি এটা বিগত অলিম্পিয়াডেও করেছেন। দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম রাজীবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,‘গ্র্যান্ডমাস্টার যে পরিমাণ সম্মানী নিয়ে একটি সেশন করে। এর চেয়ে অনেক কমে রাজীব আমাদের নারীদের ট্রেনিং দিয়েছে। দেশের চলমান পরিস্থিতি ও সামগ্রিক প্রেক্ষাপট মিলিয়ে আমরা এরপরও আশা করছি সন্তোষজনক ফলাফল হওয়ার।’

হাঙ্গেরীতে ১১ সেপ্টেম্বর দাবা অলিম্পিয়াড শুরু হবে। দাবা অলিম্পিয়াড শেষে মনন রেজা নীড়, ফাহাদ রহমান, তাহসিন তাজওয়ার জিয়া, ওয়াদিফা ও ওয়ালিজা বুদাপেস্টেই আরো দু'টি টুর্নামেন্ট খেলবেন। ঐ টুর্নামেন্টগুলোতে নর্মের প্রত্যাশা রয়েছে তাদের। উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার আগেই ইউরোপ রওনা হয়েছেন। পরশু তিনি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। রাণী হামিদ আজ ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে আসতে পারেননি। জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্যও সঙ্গী হচ্ছেন ছেলের। নারী দলের অধিনায়ক মাহমুদা হক চৌধুরি মলি ও ছেলে দলের মাসুদুর রহমান মল্লিক দীপু। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শামীম কংগ্রেস ডেলিগেট হিসেবে যাচ্ছেন। 

এজেড/এফআই