প্যারিস অলিম্পিক কাভার করে ইতালি গিয়েছিলাম। মিলান, ভেনিস ঘুরে রোম। মিলানে গেলেও বিখ্যাত দুই ফুটবল ক্লাব এসি মিলান-ইন্টার মিলানে যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি। তাই রোমে এসে কলোসিয়াম, হাজার বছরের ঐতিহ্য দেখার পাশাপাশি এসএ রোমা পরিদর্শনের বিশেষ ইচ্ছে ছিল।

মিলানের মতো রোমেও সময় সংকট। দেড় দিনের মধ্যে ঘণ্টা দুই বের করে রোমায় যাওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজ হাবিব রোমে শুরু থেকেই আমার সঙ্গী। রোমার স্টেডিয়াম অলিম্পকিয়াসে যাওয়া হাবিবের সঙ্গেই। 

রোমার অলিম্পিকিয়াস স্টেডিয়ামটি রোমের এক প্রান্তে অবস্থিত। সুবিশাল স্টেডিয়ামে চত্ত্বরও বেশ বড়। অলিম্পিকিয়াস স্টেডিয়ামের তত্ত্বাবধান করে রোমের অলিম্পিক কমিটি। অলিম্পিক কমিটি আবার ই সলতে নামক একটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি দায়িত্ব দিয়েছে ব্যবস্থাপনার। তারাই মূলত ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য কার্যক্রম করেন।

ইউরোপীয়ান ফুটবল ও সিরি এতে খুব একটা সফল ক্লাব নয় রোমা। ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি সিরি এতে (ইতালিয়ান লিগ) তিনবার চ্যাম্পিয়ন ও বেশ কয়েকবার রানার্সআপ। এরপরও এই ক্লাবের স্টেডিয়াম ভ্রমণে মানুষের আগ্রহ দেখা গেল অনেক। ১৮ ইউরো করে ৪৫ মিনিট পরিদর্শন করলেন রোম ঘুরতে আসা অনেকেই।

স্টেডিয়াম পরিদর্শনের প্রথমেই চোখে পড়ল এই স্টেডিয়ামে খেলা বিশিষ্ট ফুটবলারদের জার্সি। রোমা আর ফ্রান্সিসকো টট্টি যেন সমার্থক। তার জার্সি ভালোমতো দেখা গেল। টট্টি ছাড়াও আরো অনেকের জার্সি।

জার্সি কর্ণার পেরিয়ে একটি বড় স্ক্রিন। সেই স্ক্রিনে স্টেডিয়ামের ইতিহাস ও বিশেষ ম্যাচের হাইলাইটস। মিনিট তিনেকের প্রামাণ্যচিত্রের পর আরেক অংশে পদার্পণ। এক পাশে মিক্সড জোন। সেখানে ম্যাচের পর ফুটবলাররা বাসে স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ইতালির বড় ক্লাব হলেও মিক্সড জোন অবশ্য খুব বড় জায়গা জুড়ে নয়।

মিক্সড জোনের ওপর প্রান্তে ছোট্ট কর্ণার। সেখানে ঐতিহাসিক কিছু ট্রফি, স্মারক, জার্সি, বুট রয়েছে। রোমার ঘরের ছেলে ফ্রান্সিসকো টট্টির বুট বেশ সুসজ্জিতভাবে রক্ষিত। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিক আয়োজন করেছিল। সেই অলিম্পিকের ইতালির ফুটবল দলের জার্সিও রয়েছে এখানে।

অলিম্পিকিয়াস স্টেডিয়াম রোমা ও ল্যাজিও উভয়ে ব্যবহার করে। তাই দুই দলের আলাদা আলাদা ড্রেসিংরুম রয়েছে। দুই দলের ড্রেসিং রুম দুই দলের লোগো সম্বলিত চেয়ার আছে। প্রতি খেলোয়াড়ের নামও আছে আলাদাভাবে। ল্যাজিও রোমার চেয়ে পুরাতন ক্লাব। তাদেরও কিছু কীর্তির নিদর্শন রয়েছে এখানে। অলিম্পিকয়াস স্টেডিয়ামে জাতীয় দলও খেলে। তাই ইতালি জাতীয় দলের জন্য বিশেষ আলাদা ড্রেসিংরুম রয়েছে।

ড্রেসিংরুম থেকে ছোট্ট টানেল পেরিয়ে ফুটবলাররা মাঠে যান। সেই টানেলের দুই ভাগ আছে। এক অংশ রোমার আরেক অংশ ল্যাজিওর। দুই পাশই দুই দলের নানা কীর্তিতে ভরপুর। 

অলিম্পিক কমিটির আওতায় স্টেডিয়াম তাই ফুটবলের পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্স ট্টাকও রয়েছে। ট্রাকের এক পাশে দুই দলের জন্য টেন্ট। ৭২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে দুটি বড় জায়ান্ট স্ক্রিন। সাধারণ দর্শকদের বড় পর্দায় চোখ রাখতে হলেও লাউঞ্জে বসা দর্শকরা সিটের সামনে পর্দায় দেখেন। 

খেলার হাফ টাইমে আছে খাবার ব্যবস্থা। যারা রোমা ও লাজিওর স্থায়ী সদস্য তাদের জন্য বিশেষ রেস্টুরেন্ট। আর যারা সাধারণ দর্শক তাদের জন্য আলাদা। রেস্টুরেন্টের পাশে রয়েছে অফিসিয়াল স্টোর শপ। সেখানে স্টেডিয়াম, রোমা, ল্যাজিওর জার্সি কেনার সুযোগ রয়েছে। 

এজেড/এইচজেএস