ঐতিহাসিক টেনিস ভেন্যু রোলা গারোর বেশ কাছাকাছিই অবস্থান প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। লিওনেল মেসি ও নেইমার জুনিয়রদের সাবেক এই ক্লাবের হোম ভেন্যু পার্ক দ্য প্রিন্সেস। স্টেডিয়ামের বাইরে সুন্দর স্থাপত্য। ভেতরেও রয়েছে নান্দনিকতা।

ফ্রান্সের অন্যতম আইকনিক নির্দশন আইফেল টাওয়ার। প্রাক দ্য প্রিন্সেসের গ্যালারিতে রয়েছে অঙ্কিত আইফেল টাওয়ার। বিশ্বের জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। আর সেই খেলার প্রাণ দর্শক। ৪০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়াম পার্ক দ্য প্রিন্সেসের বেশ কয়েকটি স্ট্যান্ডে প্রতিটি আসনের সামনে রয়েছে ছোট টিভি ডিসপ্লে।

গত কয়েক বছর বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে আলোচিত ক্লাব পিএসজি। বিশ্ব ফুটবলের তিন শীর্ষ তারকা মেসি-নেইমার-এমবাপে একসঙ্গে এই ক্লাবে খেলেছেন। এখন অবশ্য তাদের কেউই নেই। তবে পিএসজি তাদের ক্লাব হিসেবেই সারাবিশ্বে পরিচিত। স্টেডিয়ামের সামনেই রয়েছে পিএসজির অফিসিয়াল শপ। সেই শপে রয়েছে তাদের জার্সিও।

পিএসজি ফ্রান্সের ক্লাব হলেও মালিকানায় কাতারের ধনকুবের। কাতারী রিয়াল আসার পর থেকেই পিএসজি ট্রান্সফার মার্কেটে একের পর এক চমক দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রেঞ্চ লিগেও দাপট দেখিয়েছে পিএসজি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারেনি অবশ্য। পিএসজির ভেন্যুতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচই হয়েছে। সেই ম্যাচের ছবি-ঘটনা জাদুঘরে থাকার কথা। অলিম্পিক গেমস উপলক্ষ্যে সেই জাদুঘর বন্ধ। স্টেডিয়াম প্যাভিলিয়নে দেখা গেল কিছু ট্রফির নমুনা।

পিএসজি বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ক্লাব। এই ক্লাবের পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা অনেক কিছু নিয়েই জানার আগ্রহ ছিল। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেও ক্লাবটির অফিসের সন্ধান পাওয়া গেল না। অলিম্পিক চলাকালে ক্লাবের অফিসও বন্ধ। এখন সবকিছুই অলিম্পিকের তত্ত্বাবধানে চলছে।

অফিসে আনুষ্ঠানিক তথ্য না পেলেও, এই ভেন্যুতে যাতায়াত আছে এমন অনেকের কাছেই অনানুষ্ঠানিক কিছু বিষয় জানা গেল। পার্ক দ্য প্রিন্সেসে পিএসজি শুধু লিগ ও টুর্নামেন্টের ম্যাচ খেলে। অনুশীলন ভেন্যু প্যারিসের নিকটবর্তী অন্যত্র। ম্যাচের আগেরদিন গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন এই ভেন্যুতে করেন ক্লাবটির ফুটবলাররা। খেলোয়াড়দের আবাসন ব্যবস্থাও প্যারিসের অন্য জায়গায়।

উন্নত ফুটবল স্টেডিয়ামের মিডিয়া ট্রিবিউন থাকে সুউচ্চ। পিএসজির মিডিয়া ট্রিবিউন লিফটের পাঁচ নম্বরে। ভলান্টিয়ার ও সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, সেখানে প্রায় তিনশ টেবিল রয়েছে সাংবাদিকদের জন্য। সাংবাদিকদের সামনে ও আশপাশে দর্শকরা বসছেন, করছেন চিৎকার। একেবারে ফুটবলের জমাট আবহ। দর্শক ধারণক্ষমতার অনুপাতে সাংবাদিক আসন একটু কমই।

অলিম্পিক গেমসের নারী ইভেন্টের ফাইনাল ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের। দু’টি বিশ্বকাপ কাভার করলেও নারী ফুটবলে বড় পর্যায়ের ম্যাচের অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। আমার প্রথম অভিজ্ঞতা আর মার্তার শেষ অলিম্পিক ম্যাচ একবিন্দুতে মিলে গেল। তার আগে স্বর্ণ নির্ধারণী ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার দল হেরেছে ১-০ গোলে। ফলে মার্তাকে তৃতীয়বারের মতো অলিম্পিক থেকে রৌপ্য নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।

নারী ফুটবলের কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান মার্তা। তার সাক্ষাতের জন্য খেলা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা। রৌপ্য পদক নিয়ে খেলোয়াড়রা ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে সাংবাদিকদের উপচে পড়া ভিড় মিক্সড জোনে। মিডিয়া ট্রিবিউন থেকে মিক্সড জোনে যেতেও বিচিত্র অভিজ্ঞতা। বেজমেন্টের আকা-বাকা বিভিন্ন কক্ষ পেরিয়ে মিক্সড জোনে উপস্থিত। আমেরিকান স্বর্ণজয়ী অনেকেই মিক্সড জোন দিয়ে হাঁটলেও সবারই অপেক্ষা মার্তার জন্য। ব্রাজিলিয়ান অনেকে এসে চলেও গেছেন। কিন্তু সবার আকর্ষণ মার্তার দিকে। মার্তা অবশেষে আসলেন। প্রথমে গেমসের এজেন্সির কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। এরপর ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকদের জটলা। পর্তুগিজ ভাষাতেই চলল আলাপ। সেই আলাপের সারাংশ জানা গেল, এটাই তার শেষ অলিম্পিক। তবে তিনি ব্রাজিলের ফুটবলের সঙ্গেই থাকতে চান।

পর্তুগিজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের পরই হাঁটা শুরু করলেন মার্তা। বাংলাদেশি তিন সাংবাদিক মিক্সড জোনের অন্যপ্রান্তে পিছু ছোটার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মার্তা আর থামলেন না। হাঁটতে হাঁটতে পর্তুগিজে কী বললেন সেটাও স্পষ্ট নয়। অস্পষ্টতা থাকলেও মার্তাকে কাছ থেকে দেখাও একটা অভিজ্ঞতা বটে।

এজেড/এএইচএস