মেইন প্রেস সেন্টারে আলোচনায় পাকিস্তানি অ্যাথলেট ও জ্যাভলিন থ্রোয়ার নাদিম আরশাদ। টোকিও অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী ভারতীয় থ্রোয়ার নীরাজ চোপড়াকে পেছনে ফেলে তিনি বাজিমাত করেছেন। তার স্বর্ণ জয় রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছে দক্ষিণ এশিয়ায়।

চলমান প্যারিস অলিম্পিকে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে রয়েছে চীন-আমেরিকা। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একটি পদক পেলেই তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। টোকিও অলিম্পিকে নীরাজ চোপড়া স্বর্ণ জিতেছিলেন। এবার তার রৌপ্য জয়ই ভারতের সর্বোচ্চ অর্জন। অ্যাথলেটিক্সে রৌপ্য, শ্যুটিংয়ে তিন ব্রোঞ্জ ও অন্য ডিসিপ্লিনের একটি ব্রোঞ্জই ভারতের সম্বল। আজ (শুক্রবার) রাতে অবশ্য তাদের আরও একটি ব্রোঞ্জের সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারত প্যারিস অলিম্পিকে ১১২ জন অ্যাথলেট পাঠিয়েছে। ১১২ অ্যাথলেটের বিপরীতে তাদের পদক মাত্র পাঁচটি। সেখানে পাকিস্তান মাত্র সাতজন ক্রীড়াবিদ প্রেরণ করেছে। সেই সাতজনের মধ্যে একজন স্বর্ণ পাওয়ায় তারা দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাকিস্তান পদক তালিকায় অবস্থান ৫৩তম আর ভারত ৬৪তম।

এক সময় হকিতে পাকিস্তানের দাপট ছিল অনেক। এবার প্যারিস অলিম্পিকে পাকিস্তান হকিতে আসতেই পারেনি। তিন সাঁতারু, দুই শ্যুটার ও দুই অ্যাথলেটকে পাঠিয়েছে। সাতজনের মধ্যে মূলত নাদিম আরশাদের সম্ভাবনা ছিল বেশি। তিনি সম্ভাবনার শতভাগ বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে পাকিস্তানের এক স্বর্ণের পেছনে পড়েছে ভারতের পাঁচ পদক।

প্যারিস অলিম্পিক গেমস কাভার করছেন ভারতের সাংবাদিক মুনাল চট্টোপাধ্যায়। স্তাদে দ্য ফ্রান্সে তিনি পাক-ভারত জ্যাভলিনও কাভার করেছেন। নাদিমের এক পদকের কাছে পিছিয়ে পড়েছে ভারত। তাই নাদিমকেই কৃতিত্ব দিলেন এই ভারতীয় সাংবাদিক, ‘এক সময় হকিতে পাক-ভারত নিয়মিত পদক পেয়েছে অলিম্পিকে। এখন ব্যক্তিগত ইভেন্টে আসছে। গুতবার নীরাজ ভালো করেছে, এবারও সে রৌপ্য পেয়েছে। নাদিমের যা অর্জন সম্পূর্ণ তার চেষ্টায়। এর পুরো কৃতিত্বই তার।’

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পদক তালিকায় নাম উঠেছে শুধু ভারত ও পাকিস্তানের। অন্য পাঁচ দেশের কোনো পদক নেই। অন্য পাঁচ দেশের মধ্যে পাহাড়ী দেশ নেপালের সাতজন, মালদ্বীপের পাঁচজন, ভূটানের তিনজন, শ্রীলঙ্কার ছয় ও বাংলাদেশের পাঁচ জন অংশগ্রহণ করেছেন।

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের পাঁচ জন ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একমাত্র সাঁতারু রাফিই তার নিজস্ব টাইমিংয়ের চেয়ে একটু ভালো করেছেন। এতেই বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, অথচ ওই ইভেন্টেও তারা নেপাল-শ্রীলঙ্কার পেছনে ছিল। শ্যুটার রবিউল, সাঁতারু সোনিয়া ও স্প্রিন্টার ইমরান নিজের সেরা টাইমিংই করতে পারেননি।

১৯৮৪ সাল থেকে বাংলাদেশ অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করছে। ১১ বার অলিম্পিক খেলেও শুধু অংশগ্রহণ আর অভিজ্ঞতা অর্জনেই সীমাবদ্ধ। পদক অর্জন তো দূরের কথা, চূড়ান্ত পর্যায়েও খেলতে পারেন না কোনো ক্রীড়াবিদ। অথচ অলিম্পিক আসলেই ক্রীড়াবিদ-কর্মকর্তা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য থাকে নানা তদবির। চার বছর বা আরও বেশি সময় পেয়েও পরিকল্পনার মাধ্যমে পদকের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ক্রীড়াবিদ প্রস্তুত না করে, শুধুই অংশগ্রহণ চলছে বাংলাদেশের।

প্যারিস অলিম্পিকে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়াবিদ সংখ্যা

পাকিস্তান- ৭ জন (তিন সাঁতারু, দুই শ্যুটার, দুই অ্যাথলেটিক্স)
বাংলাদেশ- ৫ জন (দুই সাঁতারু, একজন করে শ্যুটার, অ্যাথলেট ও আরচ্যার)
নেপাল- ৭ জন (দুই সাঁতারু, ব্যাডমিন্টন, শ্যুটিং, অ্যাথলেটিক্স, টিটি, জুডোতে একজন করে)
ভূটান- ৩ জন (আরচ্যারি, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার)
শ্রীলঙ্কা- ৬ জন (দুই সাঁতারু, তিনজন অ্যাথলেট ও একজন ব্যাডমিন্টনে)
মালদ্বীপ- ৫ জন (দুই সাঁতার, একজন করে টিটি, ব্যাডমিন্টন ও অ্যাথলেটিক্সে)
ভারত- ১১২ জন

এজেড/এএইচএস