প্যারিস অলিম্পিকের আসর এখন মাঝপথে। টেনিস, অ্যাথলেটিক্স, ফুটবল এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ডিসিপ্লিনের পদক নিষ্পত্তি হবে আগামী কয়েকদিনের ভেতর। পুরো বিশ্ব যখন ব্যস্ত পদক হিসেবের লড়াইয়ে, তখন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা আজ (রোববার) প্যারিসের স্থানীয় সময় অনুযায়ী সকাল থেকে দেশের বিমান ধরছেন। 

প্রথম ধাপে প্যারিস ছেড়েছেন শ্যুটার রবিউল ইসলাম, শেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদ অপু ও বিওএ উপমহাসচিব নজীব আহমেদ। প্যারিস ছাড়ার আগে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের শেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদ অপু হতাশাই প্রকাশ করে গেলেন, ‘শেফ দ্য মিশন হিসেবে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সে আমি হতাশ। আমাদের ক্রীড়াবিদরা তাদের নিজস্ব সেরা স্কোরই করতে পারেননি। সব মিলিয়ে এই অলিম্পিক আমাদের জন্য হতাশার।’

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের পাঁচজন ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছেন। শ্যুটার রবিউল, স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান, সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ও সোনিয়া ওয়াইল্ড কার্ডে। একমাত্র আরচ্যার সাগর ইসলাম নিজ যোগ্যতায় সরাসরি খেলেছেন। তাই তার ওপর প্রত্যাশা একটু বেশি ছিল। তিনিও সেটা পূরণ করতে পারেননি বলে মন্তব্য শেফ দ্য মিশনের, ‘আরচ্যার সাগরের ওপর আমাদের একটু প্রত্যাশা বেশিই ছিল। সে অন্তত আরও দুই-এক রাউন্ড খেলবে এমনটাই ভাবনা ছিল। র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে পিছিয়ে পড়ায় নক-আউটের প্রথম পর্বেই অনেক বড় আরচ্যারের সঙ্গে পড়ায় আর আগাতে পারেননি। আমাদের আশাও শেষ হয়।’

বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের উপমহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনেরও সেক্রেটারি। শ্যুটার রবিউলও নিজের সেরা স্কোরের চেয়ে অনেক কম করেছেন অলিম্পিকে। তাই যারপরনাই হতাশ শেফ দ্য মিশন, ‘শ্যুটিং, অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতারে আমাদের পদক জেতা সম্ভব নয়। টাইমিং ও স্কোরিং উন্নতিই ছিল লক্ষ্য। একমাত্র সাঁতারু রাফি ছাড়া আর কেউই টাইমিংয়ে ভালো করেনি। এটাই খুবই দুঃখজনক।’

শ্যুটার রবিউল ইসলাম

সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ৫৩.১০ সেকেন্ড টাইমিং করেছেন। তার ব্যক্তিগত সেরা টাইমিংয়ের চেয়ে মাত্র ০.০২ সেকেন্ড কমিয়েছেন। এরপরও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সাঁতারুরা তার চেয়ে এগিয়ে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসেও বাংলাদেশের জন্য অশনিসঙ্কেত। তাই বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজার কপালে চিন্তার ভাঁজ।

আরচ্যারি-শ্যুটিং এই দুই ডিসিপ্লিনে বিদেশি কোচ এবং বছরে বেশ কয়েকবার বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলেন আরচ্যার-শ্যুটাররা। এত বিনিয়োগের পরেও বিশেষ করে শ্যুটিংয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেমন সাফল্য আসছে না। এই ব্যাপারে শ্যুটিং ফেডারেশনের মহাসচিবের মন্তব্য, ‘বড় গেমসের আগে খেলোয়াড়দের বিদেশে কয়েক মাস অনুশীলন প্রয়োজন। বাংলাদেশে আসলে অনেক খেলায় অবকাঠামো নেই, আবার সব ফেডারেশনের সামর্থ্যও নেই। অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক ছিল না কয়েক বছর, অ্যাথলেট দৌড়াবে কোথায়?’

অলিম্পিকে সাঁতার-অ্যাথলেটিক্সে টাইমিং অবনতির চেয়ে ডিসকোয়ালিফাইড হওয়ার ঘটনাও আছে বাংলাদেশের। তবে এবার অলিম্পিকে নতুন এক বিতর্ক যোগ হয়েছে। বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান বাজে টাইমিংয়ের পর দাবি করেছেন– তিনি ইনজুরড, অনুশীলনে ছিলেন না। এমনকি তিনি অলিম্পিকেও খেলতে চাননি। যদিও ইমরানের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু।

ব্যর্থতা এড়াতে ইমরান ঢাল হিসেবে ইনজুরির কথা বললেন নাকি ইমরান ফেডারেশনের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন, এ নিয়ে ধূম্রজালে রয়েছেন খোদ শেফ দ্য মিশনও, ‘ইমরানের অসুস্থতা বা সমস্যার বিষয়টি শেফ দ্য মিশন হিসেবে আমাকে জানায়নি। ভিলেজে তাকে সুস্থ স্বাভাবিকই দেখেছি। দেশে ফিরে প্রয়োজনে এটি আরও খতিয়ে দেখা উচিৎ বিষয়টি।’

অলিম্পিকে অংশ নেওয়া দুই সাঁতারু ও তাদের কোচ (মাঝে)

বড় গেমসে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মানেই বিতর্ক। সেই বিতর্কের কেন্দ্রে থাকেন মূলত কর্মকর্তারাই। এই গেমসেও উদ্বোধনী দিন থেকেই কর্মকর্তারা কাঠগড়ায় রয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে কন্টিনজেন্ট তালিকায় না থাকা একজন কর্মকর্তা গেমসের উদ্বোধনী নৌকায় ছিলেন। ম্যানেজার হয়ে আসা কর্মকর্তারা ভিলেজ ও অ্যাথলেটদের অনুশীলন পর্যবেক্ষণের চেয়ে বাইরেই বেশি সময় কাটানোর অভিযোগ উঠেছে। দুই-একজন ফ্রান্সের বাইরে অন্য দেশেও গিয়েছিলেন গেমসের মধ্যেই। গেমস চলাকালে দায়িত্বরত অবস্থায় অন্যত্র রাত্রি যাপন অনৈতিক। কর্মকর্তা, খেলোয়াড় ও কোচদের তদারকির চেয়ে নিজেদের ভ্রমণ ও অন্য কাজেই বেশি ব্যস্ত।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জলস অলিম্পিক থেকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুরু। লস অ্যাঞ্জলস থেকে প্যারিস অলিম্পিক মোট ১১ আসরে বাংলাদেশ শুধু অংশগ্রহণ ও অভিজ্ঞতাই অর্জন করছে। অবকাঠামোগত সমস্যা, ফেডারেশন ও সংগঠকদের পরিকল্পনাহীনতা, ক্রীড়াবিদদের উদাসীনতাসহ আরও নানা কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে পশ্চাৎপদ!

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশ

আরচ্যার সাগর

রিকার্ভ পুরুষ ব্যক্তিগত ইভেন্ট
র‌্যাংকিং রাউন্ডে ৪৫তম। ১/৩২ পর্যায়ে সরাসরি ৬-০ সেটে বিদায়।

সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি

১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল
৫৩.১০ টাইমিং (০.০২ সেকেন্ড উন্নতি)
৭৯ জনের মধ্যে ৬৯তম

সাঁতারু সোনিয়া

৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল
৩০.৫২ টাইমিং (০.৪১ সেকেন্ড অবনতি)

স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান

১০০ মিটার স্প্রিন্ট
১০.৭৩ সেকেন্ড (০.৬২ সেকেন্ড অবনতি)
৪৫ জনের মধ্যে ২৫তম

শ্যুটার রবিউল ইসলাম

১০ মিটার এয়ার রাইফেল
৪৯ জনের মধ্যে ৪৩তম
৬২৪.২ স্কোর (ব্যক্তিগত সেরা ৬২৮)

এজেড/এএইচএস