একের পর এক বিতর্কে জর্জরিত প্যারিসে চলমান অলিম্পিক গেমসের ৩৩তম আসর। নতুন করে এবার লিঙ্গ বিতর্ক উঠেছে বক্সিং ম্যাচে। যার রেশ ধরে ম্যাচ শুরুর মাত্র ৪৬ সেকেন্ড পরেই ম্যাচে হার মেনে নেন ইতালিয়ান বক্সার এঞ্জেলা কারিনি। এ সময় তিনি প্রতিপক্ষ আলজেরিয়ার বক্সার ইমান খেলিফ মেয়ে নন বলেও অভিযোগ করেন। আর এই অভিযোগ ওঠার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

অলিম্পিক বক্সিংয়ে ১৬তম রাউন্ডের খেলায় মাত্র ৪৬ সেকেন্ডের ম্যাচটি ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিলো। এর আগে আলজেরিয়ান বক্সার খেলিফ যখন গত বছর ভারতে আয়োজিত বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে যান, সে সময় আন্তর্জাতিক বক্সিং এজেন্সি পরিচালিত লিঙ্গ-যোগ্যতা পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি তিনি। প্যারিস অলিম্পিকের এই ম্যাচে খেলিফের আঘাতে কারিনির নাক ভেঙে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ৬৬ কেজি বিভাগের এই ম্যাচ সম্পর্কে কারিনি বলেছেন, কোনো নারীকে তিনি এত জোরে আঘাত করতে দেখেননি।

ম্যাচে লড়াইয়ের প্রথমদিকে, খেলিফের ঘুষিতে কারিনির চিবুকের গার্ড খুলে যায়। এরপর কারিনিকে তার হেড গার্ড ঠিক করার জন্য সংক্ষিপ্ত বিরতি নিতে হয়। এরপর খেলা শুরু হতেই খেলিফ ডান হাতে কারিনির চিবুকের ওপর একটি ঘুষি বসান। এই সময় কারিনি তার দলের সহায়তা চান। কারণ ঘুষিতে কারিনির শর্টস পর্যন্ত রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি আর লড়াই চালিয়ে যেতে চাননি। ম্যাচ ছেড়ে দেন। রেফারিও তখন খেলা শেষ বলে ঘোষণা দেন। তখন কারিনি হাঁটু মুড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সান্ত্বনা দিতে খেলিফ তার হাত বাড়িয়ে দেন। তবে কারিনি খেলিফকে উপেক্ষা করে হাত মেলাননি।

পরবর্তীতে ২৫ বছর বয়সী কারিনি পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মন ভেঙে গেছে। আমাকে অনেকবার বলা হয়েছে যে আমি একজন যোদ্ধা। কিন্তু আমি আমার স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই ম্যাচটা থামিয়ে দিয়েছি। আমি কখনও কোনো নারী থেকে এত শক্তিশালী ঘুষি খাইনি। তবে, আমি লড়াই করার জন্য রিংয়ে নেমেছি। হাল ছাড়িনি। কিন্তু একটা ঘুষি আমাকে খুব জোরে আঘাত করেছে। আমি মাথা উঁচু করেই বাইরে যাচ্ছি।’

ইতালিয়ান বক্সার আরও বলেন, ‘এটা আমার পরাজয় নয়। আমি এখানে বিচারক হিসেবে আসিনি। এটা ম্যাচে জয় ন্যায্য নাকি অন্যায্যভাবে হয়েছে, তা বলার ক্ষমতাও আমার নেই। আমি শুধু আমার কাজ করেছি। মাথা উঁচু করে চলে যাচ্ছি। আমি একজন পরিণত নারী। যখন আমি অনুভব করলাম যে ম্যাচ চালিয়ে যেতে পারব না, তখন আমি সরে এলাম। আমি হার মানছি না। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি জিতব। আমি মনোযোগী এবং পরিষ্কার মনের। কিন্তু এই ঘুষি যেভাবে নাকে লেগেছে, আমি ম্যাচ থেকে সরে আসতে বাধ্য হলাম।’

ওই ঘটনার পর খেলিফ বিবিসিকে বলেন, ‘আমি এখানে সোনা জিততে এসেছি। এজন্য আমি যে কারও সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত।’ আলজেরিয়ার সরকারি টিভিতে খেলিফ বলেন, ‘আমি আলজেরিয়ার জনগণকে বলছি যে আমি তাদের খুশি করার জন্য আমার পক্ষ থেকে যথাসাধ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

এদিকে, গত বছর নয়াদিল্লিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক লড়াইয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে খেলিফকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সময়ে তিনি আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের (আইবিএ) যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এমনকি তাইওয়ানের দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন লিন ইউ-টিং-এর দিল্লি ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক একই মানদণ্ড পূরণ না করার জন্য তাইওয়ানের ওই বক্সারকেও অযোগ্য করা হয়েছিল। এ নিয়ে আইবিএ সভাপতি উমর ক্রেমলেভ বলেন, ‘দুই বক্সারের ডিএনএ পরীক্ষার পর প্রমাণ হয়েছে যে তাদের XY ক্রোমোজোম রয়েছে এবং তাই বাদ দেওয়া হয়েছে।’ ‍উল্লেখ্য, XY হলো পুরুষদের ক্রোমোজোম। আর নারীদের ক্রোমোজোম হলো XX।

যা বলছে আইওসি

এমন অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। সংস্থাটির মুখপাত্র মার্ক অ্যাডামস বলেন, ‘এরকম অনেক নারী আছে যাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অনেক বেশি। সে নারী নয় বরং পুরুষ এ বিষয়ে কোনো কিছু বলার নেই। খেলিফ ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটও নন। যদিও এ নিয়ে দ্বিধা রয়েছে। তবে তিনি আমাদের আইওসির সব শর্ত পূরণ করেছেন। যদি পাসপোর্টে লেখা থাকে আপনি নারী, তাহলে আপনি সে পরিচয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তিনি নারী হিসেবে জন্ম নেন, সে পরিচয়ে নিবন্ধন পান এবং নারী হিসেবে বড় হওয়ার পর প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছেন একই পরিচয়েই।’

এএইচএস