‘আমি হারিনি, শিখছি’, অলিম্পিক থেকে বাদ পড়ে সাগর
প্যারিস গেট পার হলেই অলিম্পিকে আরচ্যারির ইনভেলিডস ভেন্যু। জনপ্রিয়তা ও আকর্ষণের তালিকায় আরচ্যারি উপমহাদেশে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অলিম্পিকে নেই। তীব্র গরমে গ্যালারী প্রায় পরিপূর্ণ।
ফুটবল, হকির মতো দর্শকদের গ্যালারীতে বেশিক্ষণ থাকতে হয় না আরচ্যারি উপভোগ করতে। ব্যক্তিগত ইভেন্ট নক আউট স্টেজের খেলার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৫-২০ মিনিট। প্যারিস অলিম্পিকে রিকার্ভ পুরুষ ব্যক্তিগত ইভেন্টে ১/৩২ পর্যায়ে বাংলাদেশি আরচ্যার সাগর ইসলাম সরাসরি প্রথম তিন সেটেই হারায় মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই শেষ খেলা।
বিজ্ঞাপন
খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট পরই আরচ্যাররা মিক্সড জোন দিয়ে ড্রেসিং রুম ও স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন। বাংলাদেশি আরচ্যার সাগর ও তার জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক মিক্সড জোনে আসলেন খেলা শেষের কয়েক মিনিটের মধ্যেই। পাঁচ সেটের খেলা মাত্র তিন সেটেই শেষ হওয়ায় সাগর ও তার কোচের মুখে খানিকটা হতাশার ছাপ ছিল। তবে দুই জনই মিক্সড জোনে প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার চেয়ে বাস্তবতার বুলিই বেশি আওড়িয়েছেন।
রাজশাহীর সন্তান বিকেএসপির শিক্ষার্থী সাগর ইসলামের বয়স মাত্র ১৮ বছর। টিনএজার হলেও সাগরের কথাবার্তা বেশ পরিপক্বতা, 'কেউ তো চায় না হারতে, সবাই চাই জিততে আমিও চাই। আমিও নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আরেকটু ভালো করতে পারতাম। এখানেই থেমে থাকা যাবে না।'
অলিম্পিক বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সর্ববৃহৎ আসর। এখানে হারলেও অনেক কিছুই শিখেছেন বাংলাদেশের আরচ্যারস 'আমার এখানে হারানোর কিছু ছিল না। শেখার অনেক কিছু রয়েছে। আমি মাত্র ১৮ বছর বয়স। শেখার পর্যায়ে রয়েছি। হেরেছি খারাপ লাগছে, তবে এখানে থেমে থাকলে হবে না। আমি হারিনি, শিখছি।'
আরচ্যারি প্রতিযোগিতায় নক আউট পর্বের প্রতিপক্ষ ঠিক হয় র্যাংকিং অনুযায়ী। বাংলাদেশি আরচ্যার ৬৪ জনের মধ্যে ৪৫ তম হওয়ায় নক আউটের প্রথম পর্বেই শক্তিশালী ইতালিয়ান আরচ্যারের বিপক্ষে পড়েছেন। যিনি টোকিও অলিম্পিকে রৌপ্য জিতেছেন এবং বিশ্ব আরচ্যারির প্রতিষ্ঠিত এক নাম। এমন প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলা বাড়তি চ্যালেঞ্জই থাকলেও সাগর সেটি এড়িয়ে বলেন, 'আমি মাত্র শুরু করেছি, আমার চাপের কিছু নেই।'
মিক্সড জোনে সাগরের পাশে দাড়িয়েছিলেন জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক। তিনিও সাগরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, 'সাগরের বয়স মাত্র ১৮ আর তার প্রতিপক্ষ (ইতালিয়ান আরচ্যার) এক যুগের বেশি অলিম্পিকই খেলছেন। এই অলিম্পিকের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা সাগরের অনেক কাজে আসবে।'
অলিম্পিকে নক আউট পর্বে প্রথম স্টেজেই সাগরের বিদায় হলেও তিনি আবার এই মঞ্চে ফিরতে চান। এই প্রসঙ্গে বলেন, 'আমার দুর্বলতা কাটিয়ে নিজেকে আরো শক্তিশালীভাবে তৈরি করব। সবার কাছে দোয়া চাই যেন নিজেকে আরো ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারি।'
মার্টিন ফ্রেডরিক কোচ হিসেবে পাঁচ বার অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছেন। বিশ্ব আরচ্যারির অন্যতম পরিচিত এই কোচ সাগরের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান, 'দুই মাস আগেও সাগরের প্রতি এতটা প্রত্যাশা ছিল না। আনতালিয়ায় কোটা প্লেস অর্জন করে সে যোগ্যতা প্রদর্শন করেছেন। সামনে আরো অনেক কিছু করা সম্ভব তার পক্ষে।'
বাংলাদেশ ১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক থেকে বাংলাদেশের আরচ্যাররা অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করছেন। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে রোমান সানা সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। টোকিও অলিম্পিকে রিকার্ভ ব্যক্তিগত পুরুষ ইভেন্টে রোমান সানা ১/৩২ পেরিয়ে ১/১৬ পর্যায়ে খেলেছিলেন। ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে খেলা দিয়া ব্যক্তিগত ইভেন্টে ১/৩২ হারলেও মিশ্র বিভাগে ১/১৬ পর্যন্ত খেলেছেন। এবার সাগর ১/৩২ পর্যায়ে থামলেন।
ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে অলিম্পিক খেলা ক্রীড়াবিদদের নিয়ে বাংলাদেশের কখনো পদক জয়ের স্বপ্ন ছিল না। সরাসরি নিজ যোগ্যতায় প্যারিস অলিম্পিক নিশ্চিত করা আরচ্যার সাগর ইসলামের প্রতি প্রত্যাশা ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ১/৩২ স্টেজে টোকিও অলিম্পিকে রৌপ্য জয়ীর বিপক্ষে হেরে বাংলাদেশি আরচ্যারের পথচলা শেষ হয়েছে।
এজেড/এইচজেএস