ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্রাণকেন্দ্র থেকে ১৫-১৭ কিলোমিটার দূরের শহর সেন্ট ডেনিস। সেই ডেনিসই যেন এক বিশ্ব এক কমপ্লেক্সের নিচে। প্যারিস অলিম্পিক উপলক্ষে সেন্ট ডেনিসে গড়ে উঠেছে অলিম্পিক ভিলেজ। সেই ভিলেজে প্রায় সব দেশের ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের আবাস।

খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, কর্মকর্তার বাইরে অন্য কারো গেমসের অ্যাক্রিডিটেশন থাকলেই ভিলেজে প্রবেশাধিকার থাকে না। আবেদন, পূর্বানুমতি অনেক আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। সেই সকল আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করে দুপুরের দিকে ভিলেজে পৌঁছাই। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ও পাসপোর্ট প্রদর্শনের পর একটি গেস্ট পাস ইস্যু হয়। সেই পাসও ছবি, দেশ ও নানা তথ্য সম্বলিত। পাশ নিয়ে ভিলেজে প্রবেশের সময় মূল অ্যাক্রিডিটেশন জমা রেখে দেন আয়োজকরা।

ভিলেজে প্রাঙ্গনে পা রাখতেই বোঝা গেল পুরো বিশ্ব এই কমপ্লেক্সে। ছয় মহাদেশের বেশ কয়েকজন অ্যাথলেট চোখে পড়ল কয়েক মিনিটের মধ্যেই। কয়েক একর জায়গা নিয়ে হয়েছে ভিলেজ। গরমে হাঁটা অনেক দায়। তাই ভিলেজের মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট শাটল। সেই শাটলেই ভিলেজের অনেকটা দেখা মিলল।

ফুটবল, সার্ফিং, শুটিং ও আরও কয়েকটি খেলা প্যারিসের বাইরে হচ্ছে। ওই খেলার খেলোয়াড়রা ঐ শহরগুলোর ভিলেজে আছেন। এ ছাড়া বাকি সব খেলার খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কোচ সবাই সেন্ট ডেনিসের ক্যাম্পাসে। কয়েকশ’ বিল্ডিংয়ে থাকছেন নানা দেশের নানা ক্রীড়াবিদ।

অ্যাথলেট আবাসনের দিকে গেলেই প্রথমে চোখ কাড়বে আমেরিকা। ৬-৭ তলা বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং পুরোটাই আমেরিকার কন্টিনজেন্টের জন্য। এ রকম একটি দেশের জন্য পুরো বিল্ডিং দেখা গেল কয়েকটি। প্রতিটি বিল্ডিংয়ে সেই দেশের পতাকা এমনকি রংও সেই দেশের আদলে করা।

গেমস ভিলেজ মূলত আবাসন জায়গা। তাই আবাসিক ভবনের সংখ্যাই বেশি। এ-ই পাঁচটি ব্লক রয়েছে। বাংলাদেশ পড়েছে ‘ই’ ব্লকে। ই ব্লকে ঢুকতেই চোখ কাড়বে রিফিউজি দল। চার তলা বিল্ডিংয়ে পুরোটাই রিফিউজি দলের জন্য। কোনো দেশের হয়ে খেলতে না পারা দলটি আইওসির পতাকাই তাদের সঙ্গী।

বাংলাদেশের ভবনের নাম্বার ই-২২৷ এই ভবনে উজবেকিস্তান, চিলিসহ আরও কয়েকটি দেশের অবস্থান। বাংলাদেশ ই-২২ এর দুই ফ্লোরে চারটি করে আটটি রুম পেয়েছে। তৃতীয় তলায় থাকেন কোচ, কর্মকর্তারা আর দ্বিতীয় তলায় খেলোয়াড়রা। প্রতি ভবনের নিচ তলায় রয়েছে প্রশাসনিক কক্ষ। বাংলাদেশ খেলোয়াড় মাত্র পাঁচ জন হওয়ায় নিচ তলায় আলাদা অফিস নেই। রুমের মধ্যে বিওএ দুই জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় কাজ করছেন। 

গেমস ভিলেজের কক্ষ কিছু সিঙ্গেল বেড আবার কিছু ডাবল বেডও রয়েছে। সব কক্ষে আবার টিভি নেই। তবে এসি দেখা যায়নি কোনো কক্ষেই। গেমস ভিলেজের খাট, বসার জন্য টুল নির্মিত হয়েছে কাগজ দিয়ে। কাগজে হলেও ব্যবহারে বোঝার উপায় নেই বিশেষভাবে তৈরি।

গেমস ভিলেজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ডাইনিং। আবাসন ভিন্ন ভিন্ন ব্লকে হলেও ডাইনিং এক জায়গায়। ডাইনিংয়ের অবস্থান ভিলেজের একেবারে মাঝে। সব ব্লক থেকে প্রায় সমান দূরত্ব। একেক দেশের খাদ্যাভ্যাস একেক রকম। তাই সুবিশাল ডাইনিংয়েও রয়েছে আসিয়ান, সাউথ এশিয়ান, আফ্রিকান, ভেজ-নন ভেজ নানা ব্লক।

অ্যাথলেট,কোচ, কর্মকর্তাদের আবাসন ও খাবারের ব্যয়ের কিছু অংশ সেই দেশের অলিম্পিক কমিটিকে বহন করতে হয়। গেমস শুরুর কয়েক মাস আগেই ভিলেজ ফি পরিশোধ করা হয়। অতিথিদের ডাইনিং আপ্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট অলিম্পিক কমিটিকে একদিন আগে বুকিং ও অর্থ পরিশোধ করতে হয়।

সুবিশাল ভিলেজে রয়েছে রিক্রিয়েশন ব্যবস্থাও। খেলোয়াড়, কোচদের চাপ কাটানোর জন্য রয়েছে গেমিং জোন। সেখানে নানা ধরনের গেম খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। গেমসে একই দিন অনেক ভেন্যুতে অনেক খেলা চলে। ভিলেজে থাকা অনেক অ্যাথলেট-কোচ নিজেদের খেলা ও অনুশীলনের জন্য অন্য খেলায় যেতে পারেন না খুব একটা। তাই ভিলেজে কয়েকটি জায়ান্ট স্ক্রিন রয়েছে। শুয়ে, বসে খেলা দেখেন অনেকেই।

আইওসির অফিসিয়াল পার্টনার স্যামসাং। ভিলেজে স্যামসাংয়ের সুভ্যেনির শপ রয়েছে। সেই শপে ক্যাপ, কি রিং, টি শার্ট, মগ, ব্যাগ থেকে গেমসের সকল  সুভ্যেনির রয়েছে। অ্যাথলেট ও দর্শনার্থী যে কেউ সেই শপ থেকে  সুভ্যেনির কিনতে পারেন। অফিসিয়াল সুভ্যেনির শপ ও ভিলেজের মধ্যে হওয়ায় দাম একটু চড়া।

অলিম্পিক গেমসের বড় অংশ ভিলেজ। তাই ভিলেজের দিকে নজর থাকে মিডিয়ার। এ জন্য অন্য সকল ভেন্যুর মতো ভিলেজেও রয়েছে মিডিয়া সেন্টার। ভিলেজ মিডিয়া সেন্টার থেকে শাটল রয়েছে মেইন মিডিয়া সেন্টারেও। ভিলেজ পাশ জমা দিয়ে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ফেরত নিয়ে আবার মেইন সেন্টারের গাড়ি ধরলাম। 

এজেড/এফআই