প্যারিসে ভোরের আলো ফোটার আগেই বাসা থেকে সেন্ট ডেনিসে অলিম্পিক ভিলেজের উদ্দেশ্যে রওনা। প্যারিস থেকে ৩০০ কিলোমিটারের বেশি দুরত্বে শুটিংয়ের ভেন্যু সাতেউরো। গেমস আয়োজকরা প্যারিসের বাইরের ভেন্যুতে মিডিয়া শাটলের ব্যবস্থা রাখেনি। তাই বাংলাদেশের শেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর গাড়িতে রওনা। 

প্যারিসের সড়ক পেরিয়ে মহাসড়কে উঠতেই ভিন্ন এক ফ্রান্স। রাস্তার দুই ধারে সবুজ আর সবুজ। ছোট বড় গাছের সারি। ৫০-৬০ কিলোমিটার সবুজ পেরিয়ে গাড়ি থামল ফিলিং স্টেশনে। প্যারিস অলিম্পিকে ব্যবহৃত অধিকাংশ গাড়ি ইলেকট্রনিক চার্জ চালিত। গাড়ি চার্জ দিয়ে প্রাতঃরাশ সেরে আবার যাত্রা শুরু।

১০০ কিলোমিটার পার হওয়ার পর আবার গাড়ি চার্জের প্রয়োজন। দুটি ফিলিং স্টেশনে ঘুরে পাওয়া গেল না ইলেকট্রনিক চার্জ। গাড়িতে তখন চার্জ পঞ্চাশ শতাংশের নিচে৷ এই চার্জে ১৫০ কিলোমিটার যাওয়া সম্ভব নয়। এক স্টেশনে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসলেন ফরাসী এক বৃদ্ধা। নিজের গাড়ি কয়েক কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে গেলেন এক ইলেকট্রনিক চার্জ ফিলিংয়ে। সেখানে চার্জ ফি নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা শেষে নগদ ইউরোতে চার্জ প্রদান শুরু। সেই চার্জও খুব ফাস্ট নয়। আধ ঘন্টা দেয়ার পরও খুব বাড়েনি চার্জ। তাই কিছু ইউরো ফেরত দিয়ে সেখানে চার্জের সমাপ্তি।

গাড়ি আবার চলা শুরু করলে সবুজের দিকে চোখ পড়ল আবার। সাতেউরো প্রবেশ মুহূর্তে সবুজের মাত্রা আরো বেড়েছে। সবুজের সমারোহে যোগ হয়েছে হলুদও। সুবিশাল জায়গা হলুদ শস্য ও ফুলে শোভিত। এর মধ্যে দেখা গেল প্রাকৃতিক শক্তি কাজে লাগানোর জন্য সুন্দর প্ল্যান্ট৷ রাস্তা অনেক প্রশস্ত ও সুন্দর হওয়ায় গাড়ি ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চললেও মনে হয়েছিল যেন ৫০-৬০ মাত্র। 

প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। ৫০ কিলোমিটার এগিয়ে যাওয়ার পর আবার চার্জ সংকট। ২০ শতাংশে চার্জে যাওয়া যাবে ৪০ কিলোমিটার। শুটিং রেঞ্জের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের বেশি। তাই আবার চার্জিং স্টেশন খোঁজা। এবার অনেক ঘোরাঘুরির পর পাওয়া গেল চার্জিং সেন্টার। সেই সেন্টারে কেউ নেই। নিজেরাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ প্রদান করতে হয়। সেখানেও নানা প্রতিবন্ধকতা। এরপর এক পথচারীকে ডেকে সাময়িক সমাধান। বাকি সময় সাবধনতা অবলম্বনে এসি, মোবাইল চার্জ সব কিছু পরিহার করা হয় যেন ভেন্যুতে পৌঁছানো যায় অন্তত।

প্যারিস থেকে একই সময়ে রওনা হয়েছিলেন বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, শুটিং ফেডারেশনের সভাপতি আতাউল হাকিম। তেল চালিত গাড়িতে তারা পৌঁছে গেছেন ঘন্টা আড়াইয়ের মধ্যেই। সেখানে ইলেকট্রনিক চার্জ বিড়ম্বনায় সাড়ে চার ঘন্টাতেও পৌঁছানো যায়নি। চার্জ দেয়া-স্টেশন খুজত অনেক সময় ক্ষেপণ হয়েছে। ততক্ষণে রবিউল শুটিং রেঞ্জে নেমেছেন। সাতেউরো শুটিং রেঞ্জের সামনে অসংখ্য গাড়ির সারি। অনেক গাড়ি ইলেকট্রনিক চার্জ গ্রহণ করছে ফেরার জন্য। বাংলাদেশের শেফ দ্য মিশনের গাড়ি চার্জে দিয়ে রেঞ্জের ভেতরে প্রবেশ করা হলো। 

গুলির খেলা শুটিং। অনেক উন্নত বিশ্বের মতো শুটিং প্রতিযোগিতার রেঞ্জ রাজধানীর থেকে অনেক বাইরে একেবারে নির্জন জায়গায়। সাতেউরো কমপ্লেক্স যেন নির্জনতার চুড়ান্ত পর্যায়। কয়েক কিলোমিটার পেরিয়েও গাছপালা ও বিস্তীর্ণ ভূমি ছাড়া কিছু দেখা যায়নি। শুটিং মনোযোগ নির্ভর খেলা তেমনি অস্ত্র, গোলাগুলির খেলা হওয়ায় নিরাপত্তার বিষয় থাকে। তাই একেবারে বিচ্ছিন্ন এলাকায় ভেন্যু হয়। বাংলাদেশে অবশ্য ভিন্ন দেশের ব্যস্ত ও অভিজাত এলাকায় রেঞ্জ। 

রবিউলের খেলার শেষ মুহূর্ত, প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের মধ্যেই গাড়ির চার্জ একশ করিয়ে আনা হয় অন্য স্টেশন থেকে। একশ হলেও তিন'শ কিলোমিটার একটানে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই ফিরতি যাত্রা পথে পড়েছে আরেকটি বিরতি।

প্যারিস অলিম্পিক ঐতিহাসিক উদ্বোধন করলেও নানা বিষয়ে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। বিশেষ করে গাড়ি সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে অনেক। সাংবাদিকদের সেকেন্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হয়। সেখানে মিডিয়া ট্রান্সপোর্টে বিলম্ব হয় প্রায়ই। ভিলেজে অনেক গাড়ি ইলেকট্রনিক চার্জ সিস্টেম। সেই গাড়ি বিড়ম্বনার সাক্ষী শুটিং কাভার করতে যাওয়া বাংলাদেশের তিন সাংবাদিক, শেফ দ্য মিশন, বিওএ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার গেমস এন্ড আইআর ও শেফ দ্য মিশনের ছেলে। 

এজেড/এইচজেএস