প্যারিসের মেট্রো স্বস্তির আবার শঙ্কারও
প্যারিস অলিম্পিক কাভার করতে এসে সাময়িক আবাস লা কর্নোভে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপশহর লা কর্নোভ। পেশাগত কাজে প্রতিদিন ছুটতে হচ্ছে প্যারিসের প্রাণকেন্দ্র পোর্টে মেলিয়তে অবস্থিত মেইন প্রেস সেন্টারে। এই সেন্টার থেকে ভেন্যুতে ছোটা আবার এখানে ফিরে আসা। লা কর্নোভ ও পোর্তে মেলিয়তের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারের বেশি। যা অনেকটা ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান দূরত্ব।
প্যারিসের সুন্দর মেট্রো ব্যবস্থায় এত দূরত্ব আসা-যাওয়া হয় চোখের পলকেই। লা কর্নোভ থেকে সাত নম্বর মেট্রোতে ১৪ স্টেশন পেরিয়ে প্যারিস রয়েল স্টেশন। এরপর এক নম্বর লাইন ধরে চার স্টপেজ পরেই পোর্টে মেলিয়ত। সব মিলিয়ে ত্রিশ মিনিটেরও কম সময়।
বিজ্ঞাপন
প্যারিসের মেট্রো যেমন স্বস্তির, তেমনি আবার ভয়াবহ শঙ্কারও। মেট্রোতে প্রতিনিয়ত চোখ রাখতে হয় মোবাইল ও প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের ওপর। একটু চোখ এদিক-ওদিক বা মনোযোগে ঘাটতি হলে চুরি হওয়ার জোর সম্ভাবনা।
প্যারিসের মেট্রো ব্যবস্থা বিশ্বের পুরোনোদের মধ্যে অন্যতম। দ্রুতগতি, অতি অল্প সময় অন্তর অন্তর মেট্রো, সিটিং ব্যবস্থাও পরিপাটি। তবে বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও শীর্ষ দেশ হলেও ফ্রান্সের সব মেট্রোর ভেতরের পরিবেশ অবশ্য খুব বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। মেট্রো লাইন নাম্বার ভেদে পরিবেশের ভিন্নতা রয়েছে। বিশেষ করে এক নম্বর লাইনের মেট্রো স্টেশন অত্যন্ত পরিপাটি আর সাত নম্বর লাইনের মেট্রোর পরিবেশ অনেকটা ভারতীয় উপমহাদেশের মতোই।
প্যারিসের মেট্রো যেমন স্বস্তির, তেমনি আবার ভয়াবহ শঙ্কারও। মেট্রোতে প্রতিনিয়ত চোখ রাখতে হয় মোবাইল ও প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের ওপর। একটু চোখ এদিক-ওদিক বা মনোযোগে ঘাটতি হলে চুরি হওয়ার জোর সম্ভাবনা। তাই বাংলাদেশ থেকে প্যারিস অলিম্পিক কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা সাবধান করছেন প্রতিনিয়ত।
শুধু বাংলাদেশি প্রবাসী নয়, ফরাসিরাও উপদেশ দিচ্ছেন এই সংক্রান্ত। দিন দুয়েক আগে মেট্রো স্টেশনে মোবাইল ফোন শার্টের ওপরের পকেটে ছিল, তখন ফরাসি নাগরিক চোখের ইশারায় বোঝালেন এখানে ফোন রাখা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফরাসি ও বাংলাদেশি প্রবাসীদের মাধ্যমে জানা গেল, এক মেট্রো থেকে আরেক মেট্রো উঠা-নামার মুহূর্তে যখন মেট্রোরেলের গেট বন্ধ হয় ঠিক তখনই মোবাইল, ব্যাগ নিয়ে টানাটানির ঘটনা ঘটে। গেট বন্ধ হয়ে ট্রেন চলতে শুরু করায় আর উদ্ধারের সুযোগ সেভাবে থাকে না।
মেট্রো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ফরাসি ও প্রবাসী সবাই মেট্রোই বেছে নেন চলাচলে। কারণ দিনের বেলা প্যারিসের সড়কে ২৫-৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যায় না। তাই অনেকের ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও মেট্রো-ট্রামেই যাতায়াত করেন। মেট্রোর মতো একই পরিস্থিতি বাস ও ট্রামেও। সেখানে সুযোগ সন্ধানীরা চেষ্টা করেন পকেটে ও ব্যাগে হাত দেওয়ার। ২২ জুলাই বিকেলে প্যারিসে পৌঁছানের পর বিমানবন্দর থেকে লা কর্নোভ যাওয়ার পথে একবার বাসে উঠতে হয়েছিল। ভিড়ের মধ্যে এক সহকর্মীর পকেটে টান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জনৈক একজন।
গাড়ির পাশাপাশি রাস্তায় চলাচলেও রয়েছে ঝুঁকি। রাতে বেশ কয়েকটি রাস্তায় একা চলাচলে শঙ্কায় থাকেন বাংলাদেশি প্রবাসী এমনকি ফরাসিরাও। রাস্তায় ও মেট্রোতে আর্থিক সাহায্য প্রত্যাশীর সংখ্যাও অনেক। এদের অনেককে সাহায্য করতে গিয়ে অনেক কিছু হারানোর ঘটনাও ঘটছে। ছিনতাইকারীদের মূল লক্ষ্যবস্তু ভ্রমণকারীরা। তাই শিল্প-সংস্কৃতির নগরী প্যারিস সামনের দিনগুলোতে পর্যটক হারানোর শঙ্কায়!
ফ্রান্স ফুটবল দলে প্রকৃত ফরাসির চেয়ে আফ্রিকান বংশোদ্ভুতের সংখ্যা প্রায় সমান। প্যারিস অলিম্পিক কাভার করতে এসে এটি আরও ভালোভাবে টের পাওয়া গেল। সাত নম্বর মেট্রো লাইনের অধিকাংশ যাত্রীই অবশ্য প্রবাসী। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশের নাগরিকদের আধিক্যই বেশি। কেউ আশ্রয়ের আশায়, আবার কেউ উন্নত জীবনযাপনের আশায় এসেছেন। এদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘদিন থেকে আবার ফ্রান্সের নাগরিকত্বও পেয়েছেন। ফ্রান্সে প্রবাসীদের তালিকায় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কানের সংখ্যাও অনেক। ছিনতাই ও বিচ্ছিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনায় বাংলাদেশি প্রবাসী ও ফরাসি নাগরিকদের কাঠগড়ায় আফ্রিকার মহাদেশের নাগরিকরা!
১৯২৪ সালের পর প্যারিস আবার অলিম্পিকের আয়োজক। প্যারিস এর আগে সর্বশেষ আয়োজন করেছিল ১৯২৪ সালে। তৃতীয়বারের মতো আয়োজক হতে অপেক্ষা করতে হয়েছে একশত বছর। প্যারিসবাসীর জন্য এটি প্রথম অলিম্পিকের মতো হলেও পথেঘাটে তাদের কমই দেখা যায়। জুলাই-সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি। এই ছুটিতে অনেকেই অন্য শহরে বেড়াতে গেছেন। আবার অনেক ফরাসি অলিম্পিকের ভিড় এড়াতেও কয়েক সপ্তাহের জন্য পারিস ছেড়েছেন।
এজেড/এফআই