আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো পর্দা ওঠেনি প্যারিস অলিম্পিকের। তবে এরইমাঝে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ইসরায়েলের খেলোয়াড়দের বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে মাঠে গড়িয়েছে ফুটবল ইভেন্টের খেলা। মালির বিপক্ষে পুরো ম্যাচে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে রাখা হয়েছিল ১ হাজার বাড়তি পুলিশ সদস্য। ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এমন ব্যবস্থা নিয়েছে আয়োজক ফ্রান্স। 

এমন নিরাপত্তা অবশ্য অন্য কোনো দেশের অ্যাথলেটদের জন্য রাখছে না আয়োজকরা। এমনকি ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের অভিযোগ এনে রাশিয়াকে অলিম্পিক থেকে দূরে রাখলেও, ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের পর ইসরায়েলকে পড়তে হচ্ছে না জটিলতার মাঝে। 

বিতর্কের অন্য এক কারণ হিজাব নিষেধাজ্ঞা। এবারের আসরে কোনো ফ্রেঞ্চ মুসলিম নারী ক্রীড়াবিদ হিজাব পরিধান করে খেলায় অংশ নিতে পারবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে ফ্রান্স। কিন্তু হিজাব নিয়ে এমন নিষেধাজ্ঞার কারণে ফ্রান্সেরই দৌড়বিদ সুনকামবা সাইলার অলিম্পিকে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

ফ্রেঞ্চ এই অ্যাথলেট রিলে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মুসলিম এই নারী অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাকে নামেন হিজাব নিয়েই। বাকিদের সঙ্গে তার স্যুটেও আছে পার্থক্য। 

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফ্রেঞ্চ স্প্রিন্টার সুনকামবা সাইলা, ‘আপনি অলিম্পিক গেমসের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, যা কিনা আপনারই দেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপনি অংশ নিতে পারছেন না। কারণ মাথার ওপর আপনি একটা স্কার্ফ (হিজাব) পরিধান করেন।’ 

অবশ্য গেমসে অন্য দেশের ক্রীড়াবিদরা হিজাব পরিধান করতে পারবেন। তবে ফ্রান্সের সেক্যুলার আইন দেশটির সব মুসলিম নারী ক্রীড়াবিদের হিজাব পরার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরইসঙ্গে ফ্রান্সে অবস্থানকারী অভিবাসীদের ক্যাম্পে কোনো ক্রীড়াবিদ ভ্রমণ করতে পারবেন না বলেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। দুটো সিদ্ধান্তই মুসলিম ক্রীড়াবিদদের বিপক্ষে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকেই। 

ফ্রান্সের ক্রীড়া, অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিক বিষয়ক মন্ত্রী অ্যামেলিয়া ওদেয়া-ক্যাস্তেরা অবশ্য সায়লার জন্য বিকল্প পদ্ধতির কথা ভাবছেন, ‘আমাদের জনগণ প্রত্যাশা করে আমরা (ফ্রান্স সরকার) ধর্মনিরেপেক্ষতার এসব মূলনীতি অনুসরণ করব। কিন্তু আমাদের এমন সমস্যার সমাধানে আরও উদ্ভাবনী হতে হবে যেন সকলেই স্বস্তি অনুভব করে।’ 

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির অবশ্য ধর্মীয় কারণে মাথা ঢাকার বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয় হাইকমিশনার মারিয়া হুরতাদো গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ‘একজন নারী কী পরিধান করবেন আর কী পরবেন না, তা নিয়ে কারোর হস্তক্ষেপই কাম্য না।’ 

জেএ