বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর অলিম্পিক। আসন্ন প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের চার খেলার মাত্র পাঁচজন ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করছেন। পাঁচজনের মধ্যে একমাত্র আরচ্যার সাগর ইসলামই সরাসরি নিজ যোগ্যতায় খেলছেন। তাই সাগরকে নিয়েই আশা বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিএও)। 

বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান শেখ বশির আহমেদ আজ (বৃহস্পতিবার) বিওএ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আরচ্যার সাগরকে নিয়ে আমরা আশাবাদী। তিনি অন্তত কোয়ার্টারে খেলবেন এই আশা করছি। কোয়ার্টার থেকে এনি বডিজ গেম। যে কোনো কিছু হতে পারে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আরচ্যার সাগর ইসলামও। তিনি আশার বাণী শুনিয়ে বলেন,‌ ‘আমি সরাসরি অলিম্পিক খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি। কোচ আমাকে নিবিড় প্রশিক্ষণ করিয়েছে। অলিম্পিকে আমি ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চাই।’ বাংলাদেশ আরচ্যারির জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক অলিম্পিক আবহে অনেক অভিজ্ঞ কোচ। কোচ হিসেবে এটি তার পঞ্চম অলিম্পিক। তিনি সাগরকে অলিম্পিকের আবহে অনুশীলন করিয়েছেন বলে জানান এই আরচ্যার,‌ ‘কোচ আমাকে মোবাইলে ভিডিও এবং শব্দের মধ্যে অনুশীলন করিয়েছেন। অলিম্পিকের পরিবেশের মধ্যে আমি কিছুদিন অনুশীলন করেছি।’

বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন আরচ্যারির জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিকও। তিনি সাগরের সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, ‘কোটা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে সাগরকে নিয়ে বিশেষভাবে অনুশীলন করা হয়েছে। সাগর যোগ্যতা অর্জন করে অলিম্পিক খেলবে। তার পারফরম্যান্স ও স্কোর আশাব্যঞ্জক।’

সাগর ছাড়া বাংলাদেশের অন্য চারজন অ্যাথলেট যাচ্ছেন ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে। তাই তাদের প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা খানিকটা সাগরের চেয়ে ভিন্ন। প্যারিসগামী বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের উপমহাসচিব ও বাংলাদেশ শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ। আজ বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশ দলের শেফ দ্য মিশন বলেন, ‘যারা সরাসরি খেলেন তাদের প্রস্তুতি আর যারা ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে খেলেন তাদের প্রস্তুতির মধ্যে পার্থক্য থাকেই।’

১৯৯০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে শ্যুটার আতিকুর রহমান ও আব্দুস সাত্তার নিনি স্বর্ণ জিতেছিলেন। নতুন খেলা আরচ্যারি টানা দুইবার অলিম্পিকে সরাসরি খেললেও শ্যুটিং এখনও ওয়াইল্ড কার্ডে। এর কারণ সম্পর্কে ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। রবিউল কোয়ালিফাই করার খুব কাছাকাছি ছিল। অনেক টুর্নামেন্টে অর্থের জন্য আমরা পাঠাতে পারি না আবার কিছু টুর্নামেন্টে ভিসা আবেদন করতে করতেও সময় পেরিয়ে যায় কখনও, রিফিউজও হয়।’

শ্যুটার রবিউল অলিম্পিক কোটা প্লেসের কাছাকাছি থাকায় তাকে নিয়েও খানিকটা আশা রয়েছে। তবে সেটা সাগরের মতো অতটা জোরালো নয়। স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান, সাঁতারু সোনিয়া ও রাফি এদের নিয়ে মোটামুটি প্রত্যাশা প্রাথমিক ধাপ পার হওয়া। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘সম্মানজনক ফলাফলের প্রত্যাশা, মানে হিট উত্তীর্ণ হয়ে প্রাথমিক ধাপ পেরিয়ে যাওয়া।’

বাংলাদেশ ১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করছে। ২০১৬ রিও অলিম্পিকের আগপর্যন্ত সবাই ওয়াইল্ড কার্ড নিয়েই খেলেছে। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে গলফার সিদ্দিকুর রহমান, ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে আরচ্যার রোমান সানা ও আসন্ন প্যারিস অলিম্পিকে আরচ্যার সাগর ইসলাম সরাসরি খেলবেন। ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলসেও সরাসরি যোগ্যতায় খেলার সংখ্যা বাড়ানোর আশাবাদ বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজার কণ্ঠে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে সরাসরি যোগ্যতা অংশগ্রহণ করছি। যা আগে ছিল না। সামনের অলিম্পিক নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে মাননীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে পরিকল্পনা করছি। সম্ভাবনাময় খেলা নির্বাচন করে আমরা দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলন করে এগিয়ে যেতে হবে। এই গেমস থেকে ফিরে মন্ত্রীর সঙ্গে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে।’

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের কন্টিনজেন্ট ১৩ জনের। ৫ ক্রীড়াবিদের সঙ্গে কোচ চারজন, কর্মকর্তা দুইজন। একজন শেফ দ্য মিশন ও আরেকজন অলিম্পিক এটাচে। আজ রাতেই শেফ দ্য মিশন প্যারিস যাচ্ছেন। আগামীকাল শ্যুটার ও আরচ্যাররা রওনা হবেন। সাঁতারুরা যাবেন ২৩ জুলাই। ইমরান ইংল্যান্ড থেকে সরাসরি প্যারিস যাবেন। 

সাম্প্রতিক সময়ে গেমসে ম্যানেজার সঠিক সময়ে মিটিংয়ে উপস্থিত না হতে পারা, ক্রীড়াবিদের গাড়ি মিস করার ঘটনা ঘটেছে। প্যারিস অলিম্পিকের শেফ দ্য মিশন বিওএ উপমহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ শৃঙ্খলার বিষয়ে বলেন, ‘আমরা এই বিষয় খেলোয়াড় ও কোচকে যথাযথ ব্রিফ করেছি। পাশাপাশি মহাসচিব মহোদয় যথেষ্ট সতর্ক এবং নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি প্যারিস অলিম্পিকে আমরা সুশৃঙ্খলতার পরিচয় দেব।’

বিওএ সহ-সভাপতি শেখ বশির আহমেদ টোকিও অলিম্পিকের শেফ দ্য মিশন ছিলেন। তিনি সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘অলিম্পিকে আমাদের কন্টিনজেন্ট খুবই ছোট। অলিম্পিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেলা এখানে আনুষ্ঠানিকতা অনেক। কোনো মিটিং ৭টা মানে ৭টায়। ৭টা এক মিনিটও নয়। এ রকম বিষয়ে অপুকে (ইন্তেখাবুল হামিদ) আমার অভিজ্ঞতা বলেছি। অপু যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও দক্ষ সংগঠক। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট সুন্দরভাবে প্যারিস অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করবে।’

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট :

আরচ্যারি : সাগর ইসলাম (ক্রীড়াবিদ)
                  মার্টিন ফ্রেডরিক (প্রধান কোচ)
                  হাসান (সহকারী কোচ)

শ্যুটিং : রবিউল ইসলাম (ক্রীড়াবিদ)
             মোহাম্মদ জায়ের রেজাই (কোচ)

সাঁতার : সামিউল ইসলাম রাফি (ক্রীড়াবিদ)
             সোনিয়া খাতুন (ক্রীড়াবিদ)
             আব্দুল হামিদ (কোচ)
             এমবি সাইফ (ম্যানেজার)

অ্যাথলেটিক্স : ইমরানুর রহমান (ক্রীড়াবিদ)
                        আব্দুর রকিব (ম্যানেজার)

অলিম্পিক অ্যাটাচে : নজীব আহমেদ (উপমহাসচিব বিওএ)
শেফ দ্য মিশন : ইন্তেখাবুল হামিদ (উপমহাসচিব বিওএ)

এজেড/এএইচএস