গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান ও ছেলে তাহসিন তাজওয়ার (ফাইল ছবি)

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন ছিল ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়াকে নিয়ে আবারও অলিম্পিয়াড খেলবেন। নিজের অলিম্পিয়াড নিশ্চিত হলেও ছেলে জাতীয় দাবায় শীর্ষে পাঁচে থাকবে কি না এ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জিয়া পৃথিবীর পরপারে, আর তার ছেলে তাহসিন যাবেন হাঙ্গেরিতে অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে।

গতকাল (বুধবার) জাতীয় দাবার শেষ রাউন্ড ছিল। ১৩ রাউন্ড শেষে মনন রেজা নীড় ১০ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন। আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ ও গ্র্যান্ডমাস্টার রাজীব ৯ পয়েন্ট নিয়ে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে। দুই গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ ও জিয়ার সমান ৮ পয়েন্ট। জিয়া আর নেই, তাই সাত পয়েন্ট নিয়ে যুগ্মভাবে ফিদে মাস্টার তাহসিন ও অনত চৌধুরি পঞ্চম স্থানে ছিলেন। জাতীয় দাবায় পঞ্চম স্থানধারী অলিম্পিয়াডে খেলেন, তাই আজ (বৃহস্পতিবার) প্লে-অফে পঞ্চম স্থানের নিষ্পত্তি হয়েছে। বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া প্লে-অফের প্রথম পর্বে তাহসিন কালো ঘুটি নিয়ে অনতকে পরাজিত করেন। কিছুক্ষণ পর সাদা নিয়ে আরেক রাউন্ডে ড্র করলে তাহসিনের অলিম্পিয়াড নিশ্চিত হয়ে যায়। 

জিয়া খুব করে চেয়েছিলেন এবার ছেলে তাহসিন যেন অলিম্পিয়াডে যেতে পারেন। ছেলে বাবার সেই ইচ্ছেপূরণ করতে পেরে খানিকটা তৃপ্ত, ‘আবারও অলিম্পিয়াডে খেলব, ভালো লাগছে। কিন্তু বাবা নেই, সেই শূন্যতাও বিরাজ করছে।’ ২০২২ সালে বাবা-ছেলে দুজনই অলিম্পিয়াডে খেলেছেন। এবার বাবা নেই, তাই তাহসিনকে একাই যেতে হবে। এটা এখনও মানতে পারছে না ১৮ বছরের এই দাবাড়ু, ‘বাবা আমাদের মাঝে নেই, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।’ তাহসিনের পাশে বসা জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্যও একই কথা বললেন, ‘জিয়া, আমি ও তাহসিন আমরা তিনজন সব সময় একসঙ্গে ছিলাম। জিয়া আমাদের মাঝে নেই। এটা মানতে পারছি না। এখনও মনে হয় জিয়া বাইরে আছে, এসে পড়বে।’

জিয়ার ছেলে তাহসিন তাজওয়ার ও স্ত্রী তাসমিন লাবণ্য

গত শুক্রবার জিয়া পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনদিন বিরতির পর আবারও মঙ্গলবার থেকে জাতীয় দাবা শুরু হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবার ১২ ও ১৩তম রাউন্ডে ড্র করেছিলেন তাহসিন। পঞ্চম স্থানে পয়েন্ট সমান থাকায় আবার প্লে-অফ খেলতে হয়েছে। একদিকে বাবার শোক, আরেক দিকে অলিম্পিয়াডের চাপ। এই দু’টো এক সঙ্গে সামলানো অনেকের জন্য খুব কঠিন। এ নিয়ে অবশ্য ১৮ বছরের তাহসিন বলেন, ‘আমি শুধু খেলেছি।’ ১২ ও ১৩তম রাউন্ড সহজে ড্র করলেও আজ একটু চাপের মধ্যে ছিলেন তিনি। প্লে-অফে প্রথম পর্ব জিতলেও দ্বিতীয় পর্বে হারের পজিশনে ছিলেন। সেখান থেকে ড্র করতে পেরে খানিকটা খুশি জিয়ার ছেলে, ‘পরের গেমে আমার পজিশন ভালো ছিল না। প্রতিপক্ষের ভুল চালে খেলা ড্র করতে পেরেছি। ২০২২ সালেও অলিম্পিয়াড প্লে-অফে নিশ্চিত হয়েছিল, এবারও।’

তাহসিনের বাবা জিয়াউর রহমান ১৯৮৮ সাল থেকে অলিম্পিয়াডে খেলেছেন। দুই বছর অন্তর অন্তর হওয়া অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিয়মিত মুখ ছিলেন জিয়া। ২০১০ সালে ফেডারেশনের সঙ্গে মনোমালিন্যে গ্র্যান্ডমাস্টাররা অলিম্পিয়াড বয়কট করেছিলেন। সেই আসর ছাড়া একটানা এবং সর্বাধিক ১৬ অলিম্পিয়াডে খেলেছেন জিয়া। যে রেকর্ড বাংলাদেশের আর কারও নেই। তাহসিনের ১৮ বছরেই দুই অলিম্পিয়াড হচ্ছে। তার লক্ষ্য বাবাকে স্পর্শ করার, ‘চেষ্টা থাকবে বাবার মতো বেশি অলিম্পিয়াড খেলা।’

জিয়া দেশের বাইরে যেখানেই খেলতে যেতেন, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে যেতেন সঙ্গে। এবার ছেলের সঙ্গে হাঙ্গেরি যেতে চান মা তাসমিন লাবণ্য, ‘ছেলে এখনও ছোট, ওর সঙ্গে আমিও যেতে চাই। আমি যতদিন আছি ছেলের সঙ্গেই থাকব।’ ছেলের সঙ্গে দেশের বাইরে যাওয়া এবং জিয়ার স্বপ্ন ছেলেকে গ্র্যান্ডমাস্টার বানানো দু’টোই আর্থিক সঙ্গতির ওপর নির্ভরশীল। এজন্য ফেডারেশন ও সরকার সবার প্রতি আর্থিক সহায়তার আহবান জানিয়েছেন জিয়ার স্ত্রী লাবণ্য, ‘জিয়ার স্বপ্নপূরণে সবাই এগিয়ে আসুক, এটাই আমার চাওয়া। জিয়া দেশের জন্য অনেক করেছে, এবার জিয়ার পাশে এসে দাঁড়াক সবাই।’

এজেড/এএইচএস