শুক্রবার গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে খেলতে খেলতেই পরপারে পাড়ি জমান গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। জাতীয় দাবার শেষ রাউন্ডে আজ জিয়ার পুত্র তাহসিন তাজওয়ার জিয়ার প্রতিপক্ষ ছিলেন সেই এনামুল হোসেন রাজীব। দুই জনের কারোরই খেলার মানসিকতা ছিল না। বোর্ডে বসার কিছুক্ষণ পরেই সমঝোতার ড্র করেছেন। 

ফেডারেশনের ক্রীড়া কক্ষের পাশের রুমে বসেছিলেন জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য। রাজীবকে কাছে পেয়ে স্বামীর শেষ মুহূর্তের সেই ঘটনা আবারও জানতে চাইলেন লাবণ্য, 'রাজীব বলো তো তোমার জিয়া ভাই শেষের দিকে কোনো অস্বস্তিতে ছিল বা সমস্যা?’ গম্ভীর মুখে রাজীবের প্রত্যুত্তর, 'না, ভাবী স্বাভাবিকই ছিল। হঠাৎ এমন ঘটে গেল।' এই আলাপের পাশ থেকে ফেডারেশনের একজন সহকারী বলিছেলেন, 'আমার কাছে চা চেয়েছিল কিছুক্ষণ আগে। চা দেয়ার আগেই!’

সেই দিন জিয়ার পাশের বোর্ডেই ছিলেন ছেলে ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া। বাবার উৎকন্ঠা চোখে পড়েছিল তার, 'বাবা আমার বোর্ডের দিকে বেশ কয়েকবারই তাকিয়ে ছিলেন। সেই ঘটনার দশ মিনিট আগেও বাবা আমার বোর্ড দেখছিলেন।’ জাতীয় দাবায় শীর্ষ পাঁচ দাবা অলিম্পিয়াডে খেলার সুযোগ পান। জিয়ার অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকলেও ছেলের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। স্ত্রী লাবণ্য সেটাই বললেন, 'জিয়া বেশ কয়েকবার বলেছিল, তাহসিন ষষ্ঠ হলে জিয়া যাবে না। যেন তাহসিন যেতে পারে। ওর খুব ইচ্ছে ছিল তাহসিন যেন অলিম্পিয়াডে যায়। নীড়, ফাহাদরা গেলে তাহসিন যেতে না পারলে খুব খারাপ লাগবে এই চিন্তা ছিল জিয়ার মনে।’

আজ জাতীয় দাবার শেষ রাউন্ড ছিল। মনন রেজা নীড় ১০ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন। রাজীব ও ফাহাদের সমান ৯ পয়েন্ট। প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া ও নিয়াজের সমান ৮ পয়েন্ট। জিয়া আর পৃথিবীতে নেই। তাই দুই যুগ্ম ষষ্ঠস্থানধারী জিয়ার ছেলে তাহসিন তাজওয়ার ও অনত চৌধুরি আগামীকাল পঞ্চম স্থান নির্ধারণী প্লে অফ খেলবেন। যিনি জিতবেন তিনি হাঙেরী অলিম্পিয়াডে যাবেন।

তাহসিন এখন ফিদে মাস্টার। বাবা নেই সেই সংকটের মধ্যেও তিনি দাবার সঙ্গেই থাকতে চান, 'আমি দাবাতেই থাকব। গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার চেষ্টা করব।’ জিয়া তাহসিনের শুধু বাবাই নন কোচ, সতীর্থ খেলোয়াড়,বন্ধু সবই ছিলেন। জিয়ার চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি। বাবার কথা শুনেই ভবিষ্যত চলতে চান তাহসিন, 'এই অভাব আজীবনেও পূরণ হবে না। অনেক কথা আমি রেকর্ড করে রাখছি। সেই রেকর্ড এখন শুনব।'

এতদিন জিয়ার সঙ্গে ফেডারেশনে আসতেন লাবণ্য। এখন ছেলেকে নিয়ে আসছেন। তাহসিনই এখন তার সব। জিয়ার স্বপ্ন ছিল তাহসিনকে সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার (২৭০০ রেটিং) বানানোর। জিয়ার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চান জিয়ার স্ত্রী, 'জিয়ার স্বপ্ন পূরণে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রত্যাশী।'

জিয়া পুরোদস্তর দাবাড়ু ছিলেন। দাবা খেলা এবং কোচিং দু’টোই ছিল তার আয়ের উৎস। জিয়া না থাকায় তার পরিবার এখন বড় আর্থিক সঙ্কটে। তাই সরকারের সহায়তার আশায় জিয়ার স্ত্রী, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ক্রীড়াপ্রেমী। তিনি বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ-সংগঠকদের সহায়তা করেন। জিয়ার পাশেও দাঁড়াবেন এই আশায় রয়েছি।'

এজেড/এইচজেএস