ক্রিকেট বাদে দেশের বাকি সকল ফেডারেশনের চিত্র একই। আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। নতুন অর্থ বছরেও তেমন কোনো সুখবর নেই ফেডারেশন, জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অনুদান, প্রশিক্ষণ ও খেলাধূলা আয়োজনে। বরাদ্দ তেমন বাড়েনি।

আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে নির্বাহী কমিটির সভায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ক্রীড়া সংস্থা মঞ্জুরিত খাতে ৩৬ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। গত অর্থ বছরে এই অঙ্ক ছিল ৩৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মাত্র ১০ লাখ টাকা বেড়েছে। এই ৩৬ কোটি টাকা ফেডারেশন, জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার পরিচালন ব্যয়, খেলাধূলা আয়োজন ও প্রশিক্ষণ সব কিছু মিলিয়ে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। ক্রীড়াঙ্গনের মান উন্নয়নের জন্য এই বাজেট একেবারে অপ্রতুল। সেটা তিনি ভালোভাবেই জানেন। ফেডারেশনগুলোকে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, 'অর্থ মন্ত্রণালয়ে আমরা একটা চাহিদা পত্র দিয়েছি। সেই চাহিদা পত্রের কতটুকু পূরণ হবে জানি না। সেখান থেকে কিছু পেলে আমরা ফেডারেশনগুলোকে আরো সাপোর্ট দিতে পারব।’

ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেয়া চাহিদা পত্রে অবশ্য ফুটবল ফেডারেশন নেই। সেটি আজ স্পষ্টভাবেই বলেছেন পাপন, 'অন্য সব ফেডারেশন মিলিয়ে যা চাহিদা। ফুটবলে একাই সেই চাহিদা। ফুটবলের সঙ্গে আরেকবার বসে আলোচনায় বসে ঠিক করতে হবে।'

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিজেই সাবলম্বী। তাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে সরকারি অনুদান ক্রিকেট বোর্ড গ্রহণ করে না। ফুটবল ফেডারেশন সর্বোচ্চ ২৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। ফুটবল ফেডারেশনের চেয়ে ৬০ হাজার কম পেয়েছে হকি ফেডারেশন। সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স, শুটিং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ করে। ২০ লাখ টাকার উপরে রয়েছে মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, ভলিবল ফেডারেশন। টেবিল টেনিস, জিমন্যাস্টিক্স, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন ১৫ লাখের আশে-পাশে।

ফেডারেশনগুলো অনেক কষ্টে বিদেশের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। সরকার থেকে আর্থিক সহায়তা সব সময় পায় না। ২০২৩ সালে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্রীড়া টুর্নামেন্টের সফরে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়/ক্রীড়া পরিষদের প্রতিনিধি প্রেরণের আবশ্যকতা করা হয়েছে। বাস্কেটবল, হ্যান্ডবলের মতো ছোট ফেডারেশনের উপর সরকারি কর্মকর্তা সওয়ার হলেও ফুটবল, ক্রিকেটে ততটা প্রয়োগ নেই।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আজ নির্বাহী সভায় আয়-ব্যয়ের হিসাব ছাড়াও সাধারণ কিছু বিষয় আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান দাবা খেলতে খেলতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে চিকিৎসক নেই পাঁচ বছর। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন, 'চিকিৎসক অবশ্যই দ্রততার সঙ্গে নিয়োগ হবে।'

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আজকের সভায় টাঙ্গাইল জেলা স্টেডিয়ামের নাম ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল’ নামকরণের প্রস্তাব উঠেছিল। আরেকটি প্রস্তাবনা ছিল বাংলাদেশ অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশন ‘অ্যামেচার’ শব্দটি বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছিল। এই দু’টি বিষয় আলোচনা হলেও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের জন্য কার্যবিবরণী অনুমোদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আজকের সভায় আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও নামসর্বস্ব অ্যাসোসিয়েশন-ফেডারেশন নিয়ে নতুন মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা সেভাবে দিতে পারেননি।

এজেড/এইচজেএস