চীনের দুঃখ হোয়াংহো নদী, বাংলাদেশের সাঁতারের ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড। টাইমিং নির্ভর খেলা সাতারে দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় কোটি টাকার স্কোর বোর্ড। সাঁতার ফেডারেশন অসংখ্যবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে চিঠি দিয়েও পরিত্রাণ পায়নি। সম্প্রতি জাতীয় যুব সাতার প্রতিযোগিতায় নতুন ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সাত দিনের মধ্যে এই স্কোরবোর্ড সচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন। 

নতুন ক্রীড়া মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর নড়েচেড় বসে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। স্কোরবোর্ডের স্থাপনকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও চাপে পড়ে। এতদিন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠিতে নিজেদের সাফাই গেলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, সাঁতার ফেডারেশন ও তাদরে প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় সভায় স্কোর বোর্ডের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করার ব্যক্ত করেছে ঠিকাদার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান সহ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককেও চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাননি। তবে তিনি জানিয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তার সঙ্গে আলাপ করেছেন, 'আমি এখনো চিঠি দেখিনি। তবে কিছু দিন আগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমাদের ফেডারেশনে এসেছিল। এই সমস্যা সমাধানে তিনি আমাদের সাঁতার ফেডারশেন ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিশেষজ্ঞ লোকদের প্রয়োজনে দেশের বাইরে নিয়ে আমাদের চাহিদাকৃত ও আন্তর্জাতিক সাতার ফেডারেশনের নির্দেশিত জিনিস ক্রয়ের আলাপ করেছে। সকল ব্যয়ই তারা বহনের কথা জানিয়েছে।' 

মিরপুর শহীদ নজরুল ইসলাম কমপ্লেক্সে আটটি লেন। স্কোরবোর্ডে আট লেনের টাইমিং আসে না। কখনো চারটি আবার কখনো পাচ লেনের টাইমিং আসে। ফলে সাঁতার ফেডারেশন এটি ব্যবহার করতে পারছে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও সাতার ফেডারেশনে দেয়া তথ্য মতে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান লেনে বিদ্যমান টাচপ্যাড বদলে বিদেশি নতুন টাচপ্যাড স্থাপন করবে। বুয়েটের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই টাচপ্যাড পরিবর্তন করলে স্কোরবোর্ডে পূর্ণাঙ্গ সক্রিয়তা আসবে। বছর চারেক আগে টাচপ্যাডের চেয়ে এখন দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ত্রুুটির জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্টানকেই সেই ব্যয় বহন করতে হবে। 

নতুন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের কড়া অবস্থানের জন্যই মূলত সাতারের সমস্যা সমাধানের পথে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে স্টেডিয়াম নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারদের মাধ্যমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করে। অনেক ক্ষেত্রে নিম্ন মানের মালামাল ব্যবহার ও কম টেকসইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত ঠিকাদার বা সেই প্রতিষ্টানই আবার ঘুরে ফিরে কাজ পায়। বিভিন্ন সূত্রের খবর, মিরপুর সুইমিং পুলে স্কোরবোর্ড যে প্রতিষ্ঠান করেছে সেই প্রতিষ্ঠানই নাকি আবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের স্কোরবোর্ডের কাজ পেয়েছে। 

নতুন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন নির্মাণ ও সংস্কার কাজের মানের ব্যাপারে আপোষহীন। আজ মন্ত্রণালয়ে তিনি এই সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন, 'অবশ্যই মানগত বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব। নিম্ন মান হলে আমরা ব্যবস্থা নেব যে রকম নেয়া দরকার। কেউ যদি একবার ব্যর্থ হয় সামনে আর কাজ পাবে না। আগে কি হয়েছে বা কেন পেয়েছে বা আদৌ পেয়েছে কিনা এ নিয়ে কিছু বলব না। সামনে যা হবে তা অবশ্যই মানসম্পন্ন।' মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের সময় সামনে ছিলেন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি ব্যর্থ ও অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত হবে বলে মন্ত্রীকে অবহিত করেন।

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। অনেক জেলায় রয়েছে সুইমিংপুল। আবার অনেক জেলায় নেই। অনেক জেলায় সুইমিংপুল নির্মাণের আবদার আসছে নতুন মন্ত্রীর কাছে। তিনি নতুন সুইমিংপুল নির্মাণের পক্ষপাতী নন, 'অনেক সুইমিংপুল রয়েছে যেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। সেগুলো ব্যবহার উপযোগী করাই আমাদের প্রধান কাজ নতুন করে নির্মাণ নয়।'

এজেড/এইচজেএস