বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন জাতীয় দলের তিন খেলোয়াড়কে (পারভেজ মোশাররফ, তিতাস আহমেদ ও নোমান আহমেদ) পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। তাদের এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে ২০২৪ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০২৯ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত। শুধু জাতীয় দল নয়, ভলিবল ফেডারেশনের আওতাধীন কোনো প্রতিযোগিতাতেও তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। পাশাপাশি ফেডারেশনের অধিভুক্ত সংস্থাগুলোকেও এই তিন খেলোয়াড়কে ভলিবল সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্ত না করার অনুরোধ করেছে।

ফেডারেশনের অবস্থান অনুযায়ী তিন খেলোয়াড়ের অপরাধ অনেক গুরু মনে হলেও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকুর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল খানিকটা ভিন্নতা, ‘তারা ক্যাম্পে নিয়মিত অনুশীলন করে না, পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় খ্যাপ খেলে বেড়ায়। তাদের জন্য ক্যাম্পের শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য দুই বার কারণ দর্শানো নোটিশ দিলেও তারা শোধরায়নি। শৃঙ্খলার স্বার্থেই তাই এই সিদ্ধান্ত।’ জাতীয় ফুটবলাররা ক্লাব পর্যায়ে খেলে কাড়ি কাড়ি অর্থ পান। এরপরও ছুটি পেলে সামান্য-সুযোগে বা নানা কারণে খ্যাপ খেলেন এমন অভিযোগ শোনা যায় প্রায়। সেখানে ভলিবল খেলোয়াড়দের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এত বড় সিদ্ধান্ত তাই বড় প্রশ্নের উদ্রেক তৈরি করেছে।

সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য অনুযায়ী খেলোয়াড়রা দোষ করেছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকাবস্থায়। সেই অনুযায়ী জাতীয় দল থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে বহিষ্কারাদেশই যথেষ্ট ছিল। সেটা না করে লিগ, জেলা, সার্ভিস কোনো দলের হয়েই প্রতিযোগিতামূলক ভলিবলে না খেলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেকটাই অযৌক্তিক ও অমানবিক। তিন খেলোয়াড়েরই বয়স ২০-২১। পাঁচ বছর একজন খেলোয়াড় খেলার সুযোগ না পেলে তার ক্যারিয়ার সমাপ্তির পথে চলে যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, ‘আমরা চাই তারা এই শাস্তি অনুধাবন করে সুশৃঙ্খলভাবে ফিরে আসুক। এরপর তারা আবেদন করলে আমরা অবশ্যই বিবেচনা করব।’

তিন জন খেলোয়াড়কে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ অনেক বড় ঘটনা। ফেডারেশন আজ (মঙ্গলবার) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৩ এপ্রিল থেকে সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা উল্লেখ করেছে। বিষয়টি এত জরুরিই যদি হয়, তাহলে ২৭ দিন পর বিজ্ঞপ্তি কেন– এর কোনো সদুত্তর নেই সাধারণ সম্পাদকের। তিন জন জাতীয় খেলোয়াড়কে সামগ্রিক ভলিবল থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিধাজ্ঞার এত বড় সিদ্ধান্ত নির্বাহী কমিটিতেই হওয়ার কথা। সাধারণ সম্পাদক নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা হওয়ার কথা বললেও আরেক নির্বাহী সদস্যের বক্তব্যে অবশ্য ভিন্নতা পাওয়া গেছে। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছ থেকেই প্রথম শুনেছেন বিষয়টি।

ভলিবল ফেডারেশনের বিবৃতি

ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থারও সাধারণ সম্পাদক। কমনওয়েলথ গেমসে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে টিটি ফেডারেশন দুই টিটি খেলোয়াড়কে শাস্তি দিয়েছিল। সেই দুই খেলোয়াড় ছিলেন মিকুর নড়াইল জেলার। সেই শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য মিকু জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের মাধ্যমে টিটি ফেডারেশনের ওপর নানা চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। তখন তার যুক্তি ছিল একজন খেলোয়াড়কে দুই বছরের শাস্তি দিলে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। অন্য ফেডারেশনের জন্য এমন বুলি আওড়ানো মিকু এখন নিজের ফেডারেশনেই পাঁচ বছরের শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্নের মুখেও কোনো সদুত্তর নেই তার, ‘আসলে টিটি আর এই বিষয়টি ভিন্ন। টিটিতে খেলোয়াড়দের দোষ ছিল না। তাই আমরা খেলোয়াড়দের শাস্তি প্রত্যাহারের দাবিতে ছিলাম। এখানে খেলোয়াড়রা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেই যাচ্ছে। এজন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা শৃঙ্খল হয়ে ফিরলে আমরা অবশ্যই শাস্তি পুনঃবিবেচনা করব।’ প্রত্যাহার বা কমানোর যদি পরিকল্পনা থাকে, তাহলে পাঁচ বছর শাস্তি প্রদানের যৌক্তিকতা থাকে না।

সত্তর-আশির দশকে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ছিল ভলিবল। সময়ের বিবর্তনে সেই খেলা বেশ পিছিয়ে পড়েছিল। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ফেডারেশন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার পুনজাগরণের পথে হাঁটছিল খেলাটি। আর সেখানে সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকুর নানা কর্মকাণ্ড প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে ক্রীড়াঙ্গনে।

এজেড/এএইচএস