‘মাদার অব অল ডিসিপ্লিন’ হিসেবে মর্যাদা পায় অ্যাথলেটিক্স। যদিও বাংলাদেশে অনেকটাই অবহেলিত অ্যাথলেটরা। ২০১৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে বিশ্ব যুব অ্যাথলেটিক্সে সেমিফাইনালে উঠে চমকে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ জহির রায়হান। সেই জহির সাত বছর পর গতকাল (রোববার) এশিয়ান  ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটারে রৌপ্য জিতেছেন

ইরানের তেহরান থেকে রৌপ্যজয়ী জহির রায়হান কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়েরের সঙ্গে। পাঠকদের উদ্দেশে সেই সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো। 

ঢাকা পোস্ট : এশিয়ান ইনডোরে সবার দৃষ্টি ছিল ইমরানের দিকে। ইমরানের আগেই আপনি রৌপ্য জিতে সবাইকে চমকে দিলেন। 

জহির রায়হান : একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইরানে এসেছি। যখন হিটে ভালো করলাম তখন সেই আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। ফাইনালে পদকের জন্য নিজেকে নিংড়ে দিয়েছি। পদক বা সাফল্যের জন্য আমি চেষ্টা করেছি মাত্র। পাওয়ার বিষয়টি আল্লাহর রহমত, সবার দোয়া ও ভালোবাসা। 

ঢাকা পোস্ট : স্প্রিন্টে আপনি বেশ কয়েক মিটার এগিয়ে ছিলেন। এরপর সমানে-সমান লড়াই হয়। একেবারে ফিনিশিং লাইনে আপনি বিন্দুমাত্র পিছিয়ে পড়ায় প্রথম হতে পারলেন না। এতে কি আফসোস হচ্ছে?

জহির রায়হান : সেই অর্থে আফসোস বা অনুশোচনা নেই। আমি আমার সর্বোচ্চটাই দিয়েছি। আমি দেশের হয়ে পদক জিতেছি। সেটাই আমার সার্থকতা। 

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশ আগে ইনডোর অ্যাথলেটিক্সে অংশগ্রহণ করত না। গত বছর ইমরান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই মূলত অ্যাথলেটিক্সের এই দ্বার আরো উন্মোচিত হয়েছে। আপনার এই সাফল্যের ভিত ইমরানের গড়া..

জহির : এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ইমরান ভাই আমাদের বড় অনুপ্রেরণা। তার সাফল্য আমাদের যেমন অনেক কিছু শেখায় তেমনি ফেডারেশনকেও ভাবতে সাহায্য করে। আমার এই সাফল্য অর্জনে অবশ্যই তার ভূমিকা রয়েছে। আজও আশা করছি তিনি পদক জিতবেন। পাশাপাশি আমি সমান কৃতিত্ব দেব ফেডারেশন ও আমার সংস্থা বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বিকেএসপিকে, যেখান থেকে এই জহিরের সৃষ্টি।

ঢাকা পোস্ট : আউটডোর ও ইনডোর স্প্রিন্টে পার্থক্য এবং চ্যালেঞ্জ কেমন?

জহির : ইনডোর স্প্রিন্টে ভিন্নতা অনেক। প্রথমত ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য অনেক কম। বাঁকের সংখ্যা বেশি। তাই আউটডোরের চেয়ে ইনডোরে সময় বেশি লাগে। একটু অসচেতন হলে অ্যাঙ্কেল (গোড়ালি) টুইস্ট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে অনেক। আউটডোরের চেয়ে ইনডোরে চ্যালেঞ্জ বেশি। 

ঢাকা পোস্ট : এশিয়ান পর্যায়ে অ্যাথলেটিক্সে বাংলাদেশের তেমন অর্জন ছিল না। গতবার ইমরানের পর এবার আপনি পদক জিতলেন। অ্যাথলেটিক্সের অর্জনের ইতিহাসে আপনিও যুক্ত হলেন...

জহির : এটা আসলে অনেক ভালো লাগার বিষয়। আমার এত দিনের চেষ্টা এবং পরিশ্রমের ফসল পেয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়ান অ্যাথলেটিক্সের সেমিফাইনালে খেলেছি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় গেমসেও ভালো ফলাফল করেছিলাম। এজন্য ফেডারেশন আমাকে ইনডোরে নির্বাচিত করেছে। তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরে সন্তুষ্ট।

ঢাকা পোস্ট : ২০১৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে বিশ্ব যুব অ্যাথলেটিক্সে ৪০০  মিটার স্প্রিন্টের সেমিফাইনালে উঠে আপনি আলোচনায় আসেন। সাত বছর পর আন্তর্জাতিক পদক পেলেন। 

জহির : ২০১৭ সালে আমি যাদের পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে উঠেছিলাম এবং যাদের সঙ্গে দৌড়েছিলাম তারা এখন অনেকেই বিশ্বের সেরা স্প্রিন্টারদের তালিকায়। আমি এখনো অনেকটা সেই অবস্থানেই রয়েছি। নিয়মিত অনুশীলন, উন্নত কোচিং পেলে আমি আরো বড় অবস্থানে যেতে পারতাম। আমি নিজেই নিজের অনুশীলন করেছি গত দুই মাস।

ঢাকা পোস্ট : দেশের হয়ে পদক জিতলেন নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও। আপনার কোনো চাওয়া আছে কি ?

জহির : আমাদের নানা সমস্যা রয়েছে এবং থাকবে। এই নেই-নেই এর মধ্যেও এগিয়ে যেতে হবে। এর মধ্যেও আমি চেষ্টা করি দেশকে কিছু দেয়ার। ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের পদকের কাছাকাছি ছিলাম। পদক জিততে পারিনি। এবার পদক জয়ের পর একটাই ইচ্ছে, সেটি হলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। এটা আমার অনেক দিনের ইচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে একটা কিছু তো অর্জন করতে হবে। এখন অর্জন করায় এই আশা করছি।

ঢাকা পোস্ট: প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ক্রীড়াপ্রেমী। আপনাদের ফেডারেশনের সভপাতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। আপনার ইচ্ছে পূরণ হওয়া তেমন অসম্ভব নয়। গত বছর এশিয়ান ইনডোরে ৬০ মিটারে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইমরানুর রহমান সপরিবারে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেলে কি বলবেন ?

জহির: দেখা হলে অ্যাথলেটিক্স এবং নিজের কিছু কথা বলার চেষ্টা করব। কি বলব এটা এখনো ভাবিনি।

ঢাকা পোস্ট : ২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিক খেলে আসার পরপরই আপনার ব্যক্তিগত জীবনে একটা বড় ধাক্কা আসে। এরপর ফেডারেশন থেকেও নিষিদ্ধ ছিলেন। সেই পরিস্থিতি থেকে ভেবেছিলেন আজকের অবস্থানে আসতে  পারবেন ?

জহির : পেছনে আর তাকাতে চাই না। আর সেই বিষয়ে কিছু বলতেও চাই না। ওগুলো এখন সব অতীত। সেই সব কাটিয়ে আমি জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েছি দুই বার। জাতীয় রেকর্ড গড়েছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো টাইমিং করেছি এখন পদক জিতলাম। সামনে আরো এগিয়ে যেতে চাই। 

ঢাকা পোস্ট : সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই এসএ গেমস টার্গেট করেছেন। এসএ গেমসে এক সময় দ্রুততম মানব ছিল বাংলাদেশের। আর এখন অ্যাথলেটিক্সে পদকই আসে না সেই অর্থে। আপনাকে নিয়ে ২০০ ও ৪০০ মিটারে আশা করা যায় কি?

জহির : ২০১৯ কাঠমান্ডু এসএ গেমসে ২০০ মিটারে স্বর্ণজয়ীর টাইমিংয়ের চেয়ে আমি কম সময়ে দৌড়াচ্ছি। এটা একটা পজিটিভ দিক। তবে পাঁচ বছরে নিশ্চয়ই অন্য অ্যাথলেটরা আরো কম টাইমিংয়ে দৌড়াচ্ছে। আমি আশাবাদী ২০০ এবং ৪০০ মিটারে পদক আনতে সক্ষম হব নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ পেলে। 

এজেড/জেএ