শেখ রাসেল ৪১ তম জাতীয় জুনিয়র (অনুর্ধ্ব-২০) দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ওপেন বিভাগে পাবনা জেলার এবং বাংলাদেশ পুলিশের দাবাড়– ক্যান্ডিডেট মাস্টার সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ ৯ খেলায় সাড়ে আট পয়েন্ট নিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। আট পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফিদে মাস্টার মনন রেজা নীড় অপরাজিত রানার-আপ হয়েছেন।

এক রাউন্ড আগেই বালিকা বিভাগে মহিলা ফিদে মাস্টার ওয়াদিফা আহমেদের অপরাজিত শিরোপা নিশ্চিত হলেও ওপেন (বালক-বালিকা একত্রে) বিভাগে চ্যাম্পিয়নশিপ নির্ধারিত হয়েছে আজ। ফিদে মাস্টার মনন রেজা নীড় ও ক্যান্ডিডেট মাস্টার সাকলাইন আট রাউন্ড পর্যন্ত সাড়ে সাত পয়েন্ট নিয়ে যুগ্মভাবে শীর্ষে ছিলেন। শেষ রাউন্ডে ক্যান্ডিডেট মাস্টার সাকলাইন আয়ান রহমানকে হারান আর ফিদে মাস্টার নীড় স্বর্নাভো চৌধুরীর সাথে ড্র করেন। এতেই শিরোপা জেতেন সাকলাইন।

জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা সাকলাইনের জন্য স্বপ্নের মতো। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জুনিয়র দাবার নতুন চ্যাম্পিয়ন বলেন, 'আমার অত্যন্ত ভালো লাগছে। আসলে স্বপ্নের মতো লাগছে জুনিয়র দাবায় আমি চ্যাম্ফিয়ন হয়েছি।' জুনিয়র হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও মানে টুর্নামেন্ট বেশ উচুই। দাবা অলিম্পিয়াডে খেলা গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের পুত্র ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া এই টুর্নামেন্টে খেলেছেন। তাই চ্যাম্পিয়ন হতে বড় চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিতে হয়েছে,‌ 'শিরোপা জেতা বরাবরই কষ্ট। তাহসিন ভাই, নীড়ের সঙ্গে লড়াই করে প্রথম হওয়াটা বেশ কঠিনই। নীড়ের সঙ্গে ড্র এবং তাহসিন ভাইকে হারানোর পর আত্নবিশ্বাস জাগে শিরোপা জেতার।' 

১৯৭৯ সাল থেকে শুরু হওয়া জুনিয়র দাবার অনেক চ্যাম্পিয়নই পরবর্তীতে গ্র্যান্ডমাস্টার এবং জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এবার জুনিয়র দাবায় শিরোপা জিতে চমক সৃষ্টি করেছেন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র সাকলাইন। দাবার টানেই নিজ জেলা পাবনা ছেড়ে ঢাকায় এসেছেন।রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুলে পড়াশোনার পাশাাপশি দাবাই তার ধ্যানজ্ঞান,‘ পাবনায় করোনা সময়ে দাবায় হাতেখড়ি সাকলাইনের। তার মেধা ও দাবার প্রতি আগ্রহের জন্য পাবনা থেকে ঢাকায় এসেছে। রাজারবাগ স্কুলে পড়াশোনা করে এবং দাবা খেলে। প্রায় এক বছর আমার কাছে দাবার অনুশীলন করছে। মহানগর দাবার পর এবার জাতীয় জুনিয়রে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে’ বলেন সাকলাইনের কোচ আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান শাকিল। 

দাবার টানে এই অল্প বয়সে পাবনা ছেড়ে ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্তটা বড়ই কঠিন ছিল পরিবারের। সাকলাইনের বড় বোন সোহানা আফরোজ শোভা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ব্যাংকিং পেশায় যোগদান করেছেন সম্প্রতি। সাকলাইনকে ফেডারেশনে খেলতে নিয়ে যাওয়া সহ ঢাকায় অভিভাবকের দায়িত্ব সোহানার। ভাইয়ের জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হওয়া তাই তার উচ্ছ্বাসটা বেশ, 'পরিবার সব সময় সাকলাইনের দাবার আগ্রহকে সম্মতি দিয়েছে। পাশাপাশ বাংলাদেশ পুলিশও তাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। স্কুলে ভর্তির পাশাপাশি মাসিক ভাতাও প্রদান করেছে। তার এই সাফল্যে আমরা সবাই খুশি এবং আগামীতে তাকে বড় দাবাড়– হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করব।'

ওপেন বিভাগে ১২০ জন দাবাড়ু ও বালিকা বিভাগে ৩৯ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেন। উভয় বিভাগের খেলা ৯ রাউন্ড সুইস-লিগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। জুনিয়র ওপেন বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরপরই সাকলাইনের বিশ্রাম নেয়ার ফুসরত নেই। আন্তর্জাতিক রেটিং দাবার টুর্নামেন্টে আবার খেলতে হচ্ছে।

এজেড/এইচজেএস