ক্রীড়াঙ্গনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী : শত সংকটেও সাফল্যের শিখরে!
বাংলাদেশে বৃহৎ বাঙালি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি রয়েছে অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও রয়েছে তাদের বিচরণ। ক্রীড়াঙ্গনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিয়ে ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়ের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে তুলে এনেছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নানা সংকটের মধ্যেও সাফল্যের গল্প।
জন্ম থেকেই সংগ্রাম
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ত্রিশের অধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। এদের মধ্যে অনেকেরই আবাস পাহাড়ে। দুর্গম পাহাড়েই তাদের অনেকের জন্ম। পাহাড়ে হিংস্র পশু-পাখিরও বসবাস। জীবন টিকিয়ে রাখতে তাদের প্রতিনিয়ত লড়তে হয়। জাতীয় জিমন্যাস্ট শাঙ্খে অং খুমীর জন্ম বান্দরবানের এক পাহাড়েই। এখন জেলা শহরেও থাকলে তার শিশুকাল স্মরণ করলেন এভাবে, ‘অনেক সময় সকালে ঘুম ভেঙে দেখেছি চালের ওপর সাপ ঝুলছে। আবার কখনো দরজার সামনে ভাল্লুক দাঁড়িয়ে।’
ধারাবাহিকটির প্রথম পর্ব পড়ুন
পাহাড়ে বসবাসকারীরা হিংস্র প্রাণীও ভক্ষণ করে। এটা সহজাত অভ্যাস হলেও এই জিমন্যাস্ট এর পেছনে দু’টো ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘দৈনন্দিন জীবনযাপনে হিংস্র প্রাণীর মুখোমুখি হওয়া কমাতে অনেকে বাধ্য হয়ে শিকার করে। আবার এমনও সময় হয় যখন ঘরে খাদ্য থাকে না। তখন শিকারে যেতে বাধ্য হয়। শিকারকৃত পশু-পাখিতেই আহার মেটানো হয়।’
পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আয় খুবই কম। অনেকে রয়েছেন যাদের দৈনন্দিন আয় ২০ টাকাও হয়। ফলে তিন বেলার পরিবর্তে একবেলা খেয়েই দিন পার করতে হয়। অপুষ্টি নিয়ে বেড়ে উঠেও দৈহিক নির্ভর খেলায় সফলতার কারণ সম্পর্কে জাতীয় জিমন্যাস্ট শাঙ্খে অং বলেন, ‘পাহাড়ে উঠতে-নামতে আমরা বিশেষ এক ধরনের শক্তি অর্জন করি। যেটা প্রাকৃতিক তাছাড়া লড়াই করার অসম্ভব শক্তি আমাদের জন্মগতও যা ক্রীড়াঙ্গনেও কাজে লাগে।’
পশু-পাখি ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগও পোহাতে হয়। গরমের দিনে পানির সংকট তীব্র। সুপেয় পানির অভাব অনেক। আবার বৃষ্টির দিনে ভয় থাকে পাহাড় ধসের। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বেড়ে উঠা জানালেন দেশের বক্সিংয়ের আইকন সুর কৃষ্ণ চাকমা, ‘পাহাড়ে সুপেয় পানির বড্ড অভাব। আবার বৃষ্টি হলে ভয় থাকে পাহাড় ধসের। অনেকে মারাও যান পাহাড় ধসে। এখন অনেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে ১৫-২০ বছর আগে তো আরো খারাপ ছিল। এখনো বিদ্যুতের বাইরে অনেক জায়গা তবে সাম্প্রতিক সময়ে সৌর শক্তির ব্যবহার চলছে।’
পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আয় খুবই কম। ফলে তিন বেলার পরিবর্তে একবেলা খেয়েই দিন পার করতে হয়। অপুষ্টি নিয়ে বেড়ে উঠেও দৈহিক নির্ভর খেলায় সফলতার কারণ সম্পর্কে জাতীয় জিমন্যাস্ট শাঙ্খে অং বলেন, ‘পাহাড়ে উঠতে-নামতে আমরা বিশেষ এক ধরনের শক্তি অর্জন করি। যেটা প্রাকৃতিক তাছাড়া লড়াই করার অসম্ভব শক্তি আমাদের জন্মগতও যা ক্রীড়াঙ্গনেও কাজে লাগে।’
পাহাড়ে চাকমা, মারমা, খুমি ও বমদের বাস মূলত। গারো, সাঁওতালদের বসবাস সমতলে। সেই সমতলেও রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। জাতীয় নারী ফুটবল দলের সহকারী অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা সমতলেই বেড়ে উঠেছেন। তার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বলেন, ‘পাহাড়ের তুলনায় আমাদের প্রাকৃতিক কিছু কষ্ট কম এটা সত্যি। তবে সামাজিক অন্য সব প্রতিবন্ধকতা সমানই।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও উন্নয়ন সেক্টরে কর্মরত সাঁওতাল নৃ-গোষ্ঠীর উৎপল হাদসা সমতলের একটি সমস্যার কথা তুললেন এভাবে, ‘সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র গোষ্ঠীদের ভূমি হারানোর ভয় থাকে প্রতিনিয়ত। নিজেদের অজ্ঞতা, স্থানীয় চাপ (বাঙালি প্রভাবশালী) সহ নানা কারণে সমতলবাসীদের ভূমির সংখ্যা কমছে অনেক।’
এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সমতলে বাসকরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বড় উৎসব যেন ফুটবল। ঈদ বা পূজা পরবর্তী সময়ে দিনাজপুর-রাজশাহী অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়। এই সম্পর্কে উৎপল বলেন, ‘সমতল তো বটেই পাহাড়েও বাস করা অনেকের ধর্মই যেন ফুটবল। নিজেদের অনেক উৎসবে এত মানুষ হয় না কোনো ফুটবল টুর্নামেন্টে যা হয়। আদিবাসীদের জন্য একটি আলাদা ফুটবল টুর্নামেন্টও হয়।’
পাহাড়-সমতলে বাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রতিবন্ধকতার ভিন্নতা থাকলেও সবার একটা কমন সংকট মাতৃভাষা। প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব মাতৃভাষা থাকলেও পরবর্তীতে বাংলাতেই তাদের অভ্যস্ত হতে হয়। বাংলায় আপন করলেও শুরুর দিকে শুনতে হয় অনেক টিপ্পনীও,‘শুরুর দিকে অনেক বাংলা ভালো মতো উচ্চারণ ও বুঝতে কষ্ট হতো। এজন্য নানা টিপ্পনী ও রসিকতা শুনতে হয়েছে। এখন উল্টো এমন হয়েছে অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নিজেদের ভাষাও মাঝে মধ্যে ভালো বলতে পারে না’-বলেন সিনিয়র হকি খেলোয়াড় পুষ্কর ক্ষিসা মিমো।
অনূর্ধ্ব -জাতীয় দলের ক্যাম্পে খাবারও একটা সমস্যা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেলেও শুরুর দিকে একটু সমস্যাই হয় তাদের, ‘আমাদের খাবারের ধরনের সঙ্গে বাঙালিদের অনেকটা পার্থক্য থাকে। হোস্টেল ও ক্যাম্পে থাকতে থাকতে অবশ্য আমরা বাঙালি খাবার মানিয়ে নিয়েছি’-বলেন কয়েকটি খেলার বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খেলোয়াড়।
‘যোগ্যরাই পৃথিবীতে টিকবে’-এই প্রবাদকে রীতিমতো সত্য প্রমাণ করে চলছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। খাবার, ভাষা, সংস্কৃতিসহ নানা সংকট কাটিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে নিজেদের জায়গা প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিভিন্ন খেলায় শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সবাই একভাবেই বলেছেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে জায়গা পেতে একটু সমস্যা হয়েছে। একবার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আর কোনো সমস্যা নেই।’
পাকিস্তান দলে দুইজন
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ পর্যায়ে বিচরণ সেই পাকিস্তান আমল থেকেই। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণে শোষিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ক্রীড়াঙ্গনও এর বাইরে নয়। এরপরও কয়েকজন ক্রীড়াবিদ নিজেদের অসামান্য পারফরম্যান্স করে সেই সময় পাকিস্তান দলে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন। সেই জায়গা করে নেওয়াদের মধ্যে ছিলেন দুই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি চিং হ্লা মারী আর দেবানীশ সাংমা। দুই জনই পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলে ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক। পূর্ব পাকিস্তানি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হয়েও তাদের অসাধারণ যোগ্যতা বলে পাকিস্তান দলে খেলেছেন। দেবানীশ প্রি অলিম্পিকেও খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে।
মারীকে বাংলাদেশে ভূখণ্ড জন্ম নেওয়া সেরা ফরোয়ার্ড বলেন অনেকেই। সাবেক জাতীয় ফুটবলার গোলাম সারওয়ার টিপু এবং প্রতাপ শঙ্কর হাজরা দুই জনই মারী সম্পর্কে বলেন, ‘মারী ছিলেন ফুটবল মাঠের নিপুণ শিল্পি। বাংলাদেশে এ রকম ফুটবলার আর আসেনি।সালাউদ্দিন খুব ভালো ফিনিশার কিন্তু সব কিছু মিলিয়ে মারী অনন্য।’ ষাটের দশকে সেরা গোলরক্ষক ছিলেন রণজিৎ দাস। তিনি এক স্মৃতিচারণে বলেছিলেন, ‘মারীর বাঁ পায়ে বল থাকলে খুব আতঙ্কিত থাকতাম।’
সাবেক জাতীয় ফুটবলার জয়া চাকমা করেছেন ইতিহাস। বাংলাদেশের প্রথম নারী রেফারি হিসেবে ফিফা ব্যাজ পেয়েছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কোনো নারী রেফারি ফিফার স্বীকৃতি পায়নি। জয়া সেই কীর্তি গড়েন।
বিশ্বমঞ্চে জুম্মন-লেকি, ইতিহাস জয়ার
বাংলাদেশ হকির অন্যতম কিংবদন্তী প্রয়াত জুম্মন লুসাই। জাতীয় হকি দলের সাবেক এই তারকা হকিতে বিশ্ব একাদশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৫ সালে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে তিনি বিশ্ব হকি একাদশের হয়ে খেলেন। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া কাপে হ্যাটট্রিকসহ অসাধারণ পারফরম্যান্স করেন জুম্মন। সেই পারফরম্যান্সের কারণেই তিনি বিশ্ব একাদশে ডাক পান। বাংলাদেশ হকিতে এখন পর্যন্ত তিনিই এই এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে লুসাই পরিবারের অবদান অনেক। বিশেষ করে জুম্মন লুসাইয়ের চাচাতো ভাই রামা লুসাই আরেক কিংবদন্তী। মোহামেডানের হয়ে ফুটবল ও হকি খেলেছেন এক দশকের বেশি সময়। একই দিন ফুটবল ও হকি খেলার কৃতিত্বও রয়েছে তার। মোহামেডানের মতো হকি ও ফুটবল দুই জাতীয় দলে খেলেছেন। জুম্মন, রামার মতো কিংবদন্তী না হলেও লুসাই পরিবারের ডনডন, বিয়াকি ও জুবেল লুসাই দেশের হকি অঙ্গনের প্রতিষ্ঠিত নাম।
বিশ্বকাপে খেলা যে কোনো ক্রীড়াবিদের জন্যই বিশেষ। বাংলাদেশ সকল খেলায় বিশ্বমঞ্চে খেলতেও পারে না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে একমাত্র বিশ্বকাপ খেলার কীর্তি গড়েছেন লেকি চাকমা। সম্প্রতি অ-১৯ নারী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে রাঙামাটির এই মেয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার জয়া চাকমা করেছেন ইতিহাস। বাংলাদেশের প্রথম নারী রেফারি হিসেবে ফিফা ব্যাজ পেয়েছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কোনো নারী রেফারি ফিফার স্বীকৃতি পায়নি। জয়া সেই কীর্তি গড়েন।
নারী ফুটবলের সফলতায় মারিয়া মান্ডা-মনিকা চাকমারা
পুরুষ ফুটবল দলে ক্রমাগত ব্যর্থতার মধ্যে আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন নারী ফুটবলাররা। সিনিয়র, জুনিয়র উভয় নারী ফুটবল দলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যাই বেশি। তারাই বলতে গেলে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের প্রাণ। মারিয়া মান্ডা বাংলাদেশ সিনিয়র দলের সহ-অধিনায়ক। তিনি অনূর্ধ্ব পর্যায়ে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছেন। বাংলাদেশের নারী ফুটবলে সাফল্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অবদান অনেক।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সম্পর্কে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওরা আমাদের সঙ্গে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ওরা আমাদের হরিহর আত্মা। আমাদের আন্তঃসম্পর্ক এতটাই যে অনেক বাঙালির অন্য জনগোষ্ঠীর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবার তেমনি অন্য জনগোষ্ঠীরও স্বগোত্রীয়ের চেয়ে বাঙালি একজন তার আপন বন্ধু।’
জিমন্যাস্টিক্স, জুডো, কারাতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নির্ভরতা
অনেক খেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সেভাবে উঠে আসতে পারেনি। আবার কিছু খেলায় পারফরম্যান্স ও ফেডারেশনের প্রচেষ্টায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ খেলা জিমন্যাস্টিক্স। বাংলাদেশে এর গুরুত্ব ও প্রসার সেভাবে নেই। এরপরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্ভাবনাময়ী খেলার মধ্যে জিমন্যাস্টিক্স অন্যতম। সেই জিমন্যাস্টিক্স এখন পুরোটাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নির্ভর। জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাই মূলত ভরসা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তারা সাফল্য নিয়ে আসছে। জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্পর্কে বলেন, ‘বর্তমানে জিমন্যাস্টিক্স জাতীয় দল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ছাড়া সম্ভব নয়। এই খেলায় তারা ভালো করছে এবং আমরাও তাদের মধ্যে মেধা খুঁজে পাচ্ছি।’ জিমন্যাস্টিক্সের মতো কারাতে, জুডোতেও রয়েছেন অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি। তারা জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনছেন।
জাতীয় চ্যাম্পিয়ন
দুই জনপ্রিয় ইনডোর খেলা ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস। দুই খেলার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন দুই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। টেবিল টেনিসে রামহিম লিয়ান বম ও ব্যাডমিন্টনে গৌরব সিংহ। জাতীয় পর্যায়ের অনেক খেলায় আম্পায়ারিং-রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আবার কোচ-ফেডারেশনের স্বেচ্ছাচারিতাও থাকে। তারা এই প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েননি, ‘আমাদের খেলায় এমন সমস্যা হয়নি। প্রকৃত যা ফলাফল সেটাই হয়েছে’-বলেন দুই খেলার দুই জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।
সিলেট থেকে উঠে আসা মণিপুরী নৃগোষ্ঠীর গৌরব সিংহ তৃণমূল পর্যায়ে খানিকটা সমস্যার কথা তুলে ধরলেন, ‘জাতীয় ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য হয় না তবে একেবারে শুরুর দিকে যখন স্থানীয় ভাবে খেলাধুলা শুরু হয় তখন নৃগোষ্ঠীদের দিকে সেভাবে কোচরা নজর দেন না। ’ অ্যাথলেটিক্সে এক সময় দাপট ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। বিশেষ করে শর্মিলা রায়ের একটি রেকর্ড এখনো অক্ষত।
সাবেক জাতীয় বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা পেশাদার বক্সিংয়ে ব্যস্ত। পেশাদার পর্যায়ে রাঙামাটির এই যুবক এখন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্যতম আইকন খেলোয়াড়। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন করছেন সুর কৃষ্ণ।
এসএ গেমসে শর্মিলা ও জ উ প্রু প্রথম
বিশ্বের সর্ববৃহৎ গেমস অলিম্পিক। বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদের অলিম্পিকে পদক জয় এখনো স্বপ্নের মতোই। এশিয়ান গেমসে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত ইভেন্টে পদক একটিই ( ১৯৮৬ সিউল গেমসে বক্সার মোশাররফের ব্রোঞ্জ)। বাংলাদেশের প্রত্যাশা মূলত এসএ গেমসের গণ্ডিতেই। ১৯৮৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার গেমস শুরু হয়েছে। প্রথম গেমসেই পদক পেয়েছিলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃতি অ্যাথলেট শর্মিলা রায়। ঐ আসরে তিনি দলীয় ইভেন্টে পদক জিতেছিলেন। পরের বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত গেমসে অবশ্য ব্যক্তিগতভাবেই জিতেছিলেন রৌপ্য।
শর্মিলার পর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আরো অনেকেই অনেক খেলায় ব্যক্তিগত/দলগত রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে কারাতেকা জ উ প্রু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম স্বর্ণ জেতেন। তিনি ঐ গেমসে ব্যক্তিগত ও দলীয় উভয় ক্ষেত্রে স্বর্ণ জেতেন। ২০১৯ কাঠমান্ডু গেমসে বাংলাদেশ এসএ গেমসে সর্বাধিক স্বর্ণ জিতেছিল। সেই আসরে স্বর্ণের যাত্রা শুরু করেছিলেন তায়কোয়ান্ডোর দীপু চাকমা।
*ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্বে থাকবে কোচ, বিচারক, সংগঠক পর্যায়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অপ্রতুলতা।
এজেড/এফআই