বয়স ৭৫ বছর। এটিকে স্রেফ সংখ্যায় পরিণত করে অ্যাথলেটিক্সে টার্ফের সঙ্গে এত দিন চলছিলেন সাবেক দ্রততম মানবী সুফিয়া খাতুন। হৃদযন্ত্রে চারটি ব্লক তাকে অ্যাথলেটিক্স থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে কিছু দিন।

চার ব্লকের মধ্যে দু’টিতে রিং প্রতিস্থাপিত হয়েছে মাস খানেক আগে। একটি ব্লকে রিং বসানোর অপেক্ষায়। দুই রিংয়ের শারীরিক ধকল কাটিয়ে উঠলে তৃতীয়টি প্রতিস্থাপিত করার পরিকল্পনা চিকিৎসকের। চতুর্থ ব্লকটি নিরসনযোগ্য নয় বলে জানালেন দেশের কিংবদন্তী অ্যাথলেট, 'একটি ব্লক নাকি অনেক দিন আগের তাই সেটা আর কিছু করার নেই সেভাবেই থাকবে। চিকিৎসক বলেছে সেটা খুব সমস্যা হবে না।'

কিংবদন্তী অ্যাথলেট সুফিয়া স্বামীকে হারিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগেই। একমাত্র ছেলে থাকেন রাজশাহীতে।কাগজে-কলমে বিকেএসপি ছাড়লেও সুফিয়ার মন এখনো সেই সবুজ গালিচায়। তাই বিকেএসপি’র পাশেই জিরানীতে এক ভাড়া বাসায় থাকেন। সেই বাসা থেকে মুঠোফোনে বললেন, 'এতদিন ভালোই ছিলাম হঠাৎ অসুস্থতায় কষ্ট হচ্ছে। দুই রিং ও হাসপাতালের খরচ মিলিয়ে ছয়-সাত লাখ ব্যয় হয়েছে। এখন প্রতি সপ্তাহেই কয়েক হাজার টাকা লাগছে ড্রেসিং, ওষুধ ও ডাক্তার ভিজিটে।'

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি’র কোচ ছিলেন দুই দশকের বেশি। বিকেএসপি থেকে অবসরের পর একটি স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন। সেখান থেকেও অবসর নিয়েছেন ২০১৯ সালে। এখন কিছুটা আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছেন। অ্যাথলেট অঙ্গনের অনেকেই ‘সুফিয়া ম্যাডাম’ এর পাশে দাড়িয়েছেন, 'আমি এতদিন আর্থিক সাহায্য চাইনি কারণ নিজে চাকুরি করেছি, অবসর ভাতা ছিল। এখন চাকুরি নেই, আবার অসুস্থতা ভর করেছে। রাষ্ট্রের জন্য অনেক অবদান রেখেছি। তাই ফেডারেশনের মাধ্যমে সহায়তা চেয়েছি। আমরা ছাত্র-ছাত্রীরাও যে যার মতো সহায়তা করছে।’

বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বলেন, 'সুফিয়া আপার জন্য আমরা ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আবেদন করেছি। আবেদনের পাশাপাশি আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও সহায়তা করার চেষ্টা করছি।’

সুফিয়া খাতুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। সুফিয়ার এই দুঃসময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও পাশে দাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশের কিংবদন্তী অ্যাথলেটদের তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে সুফিয়া খাতুনের নাম। পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নেয়া সুফিয়া ভারতের মুর্শিদাবাদে একাধিক পদক অর্জনের কৃত্তিত্ব রয়েছে। ১৯৬৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তান অলিম্পিকে পাকিস্তানের দ্রুততম মানবী ছিলেন।  ১৯৭৮-৮২ পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী। স্প্রিন্টার হিসেবে যেমন কোচ হিসেবেও তেমন। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে জাতীয় অ্যাথলেটিক্সের কোচ ছিলেন। বিমল চন্দ্র তরফদার তার কোচিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছিল।

বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে সুফিয়া খাতুন রয়েছেন ওতপ্রোতভাবেই। তাই অসুস্থতাকে দ্রত পেছনে ফেলে আবার ট্র্যাকে ফেরার অপেক্ষায় সুফিয়া, 'যত দিন বাচব তত দিন অ্যাথলেটিক্স নিয়েই থাকব। ডাক্তার কিছু দিন বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। হার্ট এখন অনেকটাই ভালো। আরেকটি রিং বসলে আবার ট্র্যাকে যেতে পারব। সামনে কোনো মিট হলেই আমি মাঠে যাব।’

এজেড/এইচজেএস