চীনের হাংজুতে অবস্থিত এক্সপো মেট্রো সেন্টারের সামনে মধ্যবয়সী এক পুরুষ দাঁড়িয়ে। তার কোমরে ঝোলানো ব্যাগ ও গলার ফিতায় বসানো অসংখ্য ‘কোট পিন’। এর মাঝে তার হাতে লেখা, ‘এক্সচেঞ্জ পিন’। এশিয়ান গেমসে বিভিন্ন দেশের পিন সংগ্রহ করা-ই জিসি জ্যাংয়ের নেশা।

চাকরিসূত্রে জ্যাংয়ের বাস করেন সাংহাইয়ে। চীনে চলছে এখন জাতীয় ছুটি। এই সুযোগে তিনি হাংজু এসেছেন গেমসের মধ্যে শখের পিন সংগ্রহ করতে। গত পরশু এসেছেন, আর দুয়েকদিন থেকে আবার চলে যাবেন সাংহাই। 

পিন সংগ্রহে শুধু এক শহর থেকে আরেক শহরে নয়, দেশও পাড়ি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জ্যাং, ‘২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিক হয়েছিল। পিন সংগ্রহ করতে আমি দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছিলাম।’

পিন সংগ্রহ করতে সময় ও শ্রমের সঙ্গে অর্থও ব্যয় হয়। এত কিছুর বিনিময়ে সামান্য একটা পিনই শান্তি জ্যাংয়ের কাছে, ‘আসলে পিন আমি খুবই পছন্দ করি। প্রতিটি পিনই আমার কাছে অনেক মূল্যবান। তাই সময় ও অর্থ ব্যয় হলেও আমি তেমন কিছু বোধ করি না।’ 

২০১৪ সালে চীনের নানজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল শীতকালীন অলিম্পিক। সেই আসর থেকেই মূলত তার পিনের প্রতি আগ্রহ। তাই শত পিনের মধ্যে নানজিংয়েরটাই তার কাছে সেরা, ‘নানজিং অলিম্পিকে আমি ভলান্টিয়ার ছিলাম। নানজিংয়ের পিনটি আমার কাছে সৌভাগ্যের প্রতীক। তাই সেটি আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

গত দশ বছরে জ্যাং প্রায় ৪ হাজার পিন সংগ্রহ করেছেন (বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের পিনও রয়েছে)। জ্যাংয়ের সঙ্গে আলাপকালেই হাজির হন আরেক পিন সংগ্রাহক লাম্বিং। তার পিন সংগ্রহের নেশা আরও পুরনো, ‘ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি পিন সংগ্রহ করে যাচ্ছি। পেশার পাশাপাশি শখ-পূরণেও যথেষ্ট সময় দিই।’

মেট্রো স্টেশন, স্টেডিয়াম ও অ্যাথলেট ভিলেজের সামনেই মূলত সৌখিন পিন সংগ্রাহকদের ভিড় বেশি থাকে। পিন সংগ্রহ শুধু সৌখিন সংগ্রাহকরাই নন, অ্যাথলেটরাও করে থাকেন। হাংজু এশিয়ান গেমসে জাপানের অ্যাথলেট নাকাতারও শখ পিনের আদান-প্রদান, ‘এই গেমসে অন্য দেশের অ্যাথলেট, ভলান্টিয়ার অনেকের কাছ থেকেই আমি পিন সংগ্রহ করেছি। অন্য গেমসেও আমি এই আদান প্রদানের চেষ্টা করি।’

গেমসের অন্যতম প্রাণ ভলান্টিয়ার। পিন সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকে ভলান্টিয়ারদের। পিন সংগ্রহ নিয়ে ভলান্টিয়ারদের মধ্যে আন্তঃ প্রতিযোগিতাও চলে। অন্যদিকে, সাধারণত আবেগকে দূরে ঠেলে পেশাগত দায়িত্ব পালনেই ব্যস্ত থাকেন সাংবাদিকরা। সেই পেশাদার সাংবাদিকদেরও অনেকের নেশা পিন সংগ্রহ। অন্য দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে পিন আদান-প্রদান করে তাদের কেউ কেউ অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। এতে প্রতি গেমসের কার্ডের সঙ্গে রয়ে যায় নানা দেশের মানুষের স্মৃতিও। 

এজেড/এএইচএস