২০১৯ সালে ক্যাসিনো-কাণ্ডের পর ক্রীড়াঙ্গনে কয়েকটি ক্লাবে তালা ঝুলছে। প্রায় চার বছর তালাবদ্ধ থাকা ক্লাবগুলো অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আজ সকালে মতিঝিল ক্লাব পাড়ার কয়েকটি ক্লাবের প্রতিনিধি র‌্যাবের ডিজির সঙ্গে বৈঠক করেন। 

ক্লাবগুলোতে ক্রীড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নিরলস পরিশ্রম করছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক আব্দুল গাফফার। সাবেক তারকা ফুটবলার গাফফারের নেতৃত্বেই আজ র‌্যাবের ডিজির সঙ্গে বৈঠক করেন তালাবদ্ধ ক্লাবের কর্মকর্তারা। সেই বৈঠক শেষে ক্রীড়াঙ্গনের জন্য সুখবর দিলেন আব্দুল গাফফার- ‘র‌্যাবের ডিজি মহোদয় অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আলোচনা করেছেন। এই ক্লাবগুলোর ওপর আদালতের কোনো নির্দেশনা বা পর্যবেক্ষণ না থাকলে ১ জুলাই খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।’ 

আইনি বিষয়ের সম্পর্কে সাবেক এই ফুটবলার বলেন, ‘ক্লাবগুলোর মানি লন্ডারিং এবং ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় জব্দকৃত মালামাল সংক্রান্ত কোনো আইনি নির্দেশনা আছে কি না তা দেখতে র‌্যাবের ডিজি মহোদয় দুইজন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আইনগত কোনো জটিলতা না থাকলে ক্লাবগুলো অতিসত্তর খুলবে।’ 

তালা খোলার আগে ক্লাবগুলোর কিছু শর্ত মানতে হবে। সেই শর্ত মেনে একটি অঙ্গীকারনামা ২/১ দিনের মধ্যেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জমা দিতে হবে। অঙ্গীকারনামা প্রসঙ্গে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী বলেন, ‘অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের কোনোভাবেই ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যাবে না। রাত ১১টার পর খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ছাড়া বহিরাগত কেউ ক্লাবে অবস্থান করতে পারবে না। এ রকম কিছু নির্দেশনা তারা আমাদের দিয়েছেন। পাশাপাশি আমরাও যদি কিছু প্রয়োজন মনে করি সেগুলো অর্ন্তভুক্ত করে সম্মিলিত স্বাক্ষর দিয়ে তাদের বরাবর দিতে বলা হয়েছে।’

আজ সকালে মতিঝিল ক্লাব পাড়ার কয়েকটি ক্লাবের প্রতিনিধিরা র‌্যাবের ডিজির সঙ্গে বৈঠক করেন।

ক্লাবগুলোতে বিগত সময়ে অপকর্ম হয়েছে রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবের মাধ্যমে। ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তালা খোলার পর ক্লাবকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে চান তিনি- ‘ক্লাবের অস্তিত্ব এবং আমাদের ইজ্জতের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নীতিমালায় যে অঙ্গীকার করব সেটাই বাস্তবায়ন করব। এর কোনো ব্যতয় ঘটবে না।’ 

ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স, ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স, দিলকুশা, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ গত চার বছর অনেক কষ্ট করে ক্রীড়া কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। তাদের কষ্ট লাঘবে গাফফারের উদ্যোগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারা বলেন, ‘আমাদের ক্লাবগুলো ফুটবল ফেডারেশনের কাছেই। ফুটবল ফেডারেশনকে বারবার বললেও তারা আগে কোনো উদ্যোগ নেয়নি (সপ্তাহ দুয়েক আগে ক্লাবগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এবং চিঠি দেয় সংশ্লিষ্ট কিছু জায়গায়) গাফফার ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের সমস্যা সমাধান হতে চলছে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’

আব্দুল গাফফার অবশ্য এই অচলাবস্থা নিরসনের জন্য দুই মন্ত্রীকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন- ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় অত্যন্ত ক্রীড়াপ্রেমী। তার জন্যই বিষয়টি অনেকটা সমাধানের পথে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীও এই বিষয়টি সবসময় তদারকিতে রেখেছেন। আমি মূলত সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করেছি।’ 

বিগত সময়গুলোতে দলীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ক্রীড়াঙ্গনের নানা জটিলতায় উদ্যোগ গ্রহণ করতেন। বর্তমান যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এই সকল বিষয়ে তেমন সক্রিয় নন এবং ক্রীড়াঙ্গনের ব্যক্তিরা তাঁর পরিবর্তে গাফফারের শরণাপন্নই বেশি হন। তিনিও সাধ্যমতো উপকারের চেষ্টা করেন। 

এজেড/এফআই